• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নেতাদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না বড় দুই দল


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯, ০২:২১ পিএম
নেতাদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না বড় দুই দল

ঢাকা : উপজেলা নির্বাচন প্রশ্নে দলীয় সিদ্ধান্ত মানছে না অনেকেই। বর্জনের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির অনেকেই। আবার দল সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগেরও অনেকে। বিদ্রোহী (আ.লীগ) বা অংশগ্রহণকারীরা (বিএনপি) হাইকমান্ডকেই দোষারোপ করছেন। এতে করে নিজ দলের নেতাদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না বড় দুই দল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরীর মতে, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক সময় দলীয় সিদ্ধান্তও ভেস্তে যায়। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।  

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মানছেন না মধ্যসারির নেতারা, মধ্যসারি নেতাদের কথা শুনছেন না কর্মীরা। বহিষ্কারের মতো কঠোর সাবধান বার্তাও আমলে নিচ্ছে না অনেকেই। ফলে চেইন অব কমান্ডে টান পড়েছে নির্বাচনমুখী দল বিএনপির।

দলটির সিনিয়র নেতারাই আলাপকালে মন্তব্য করেছেন, জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচন সামনে এলেই তাদের এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক প্রার্থী করতে শীর্ষ নেতাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে পরিস্থিতি আরো চরম আকার ধারণ করেছে। দলীয় চিন্তা-চেতনাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন কেউ টাকার গরমে, আবার কেউবা সুবিধা পেয়ে। তবে বিএনপির মতো বড় দলে সমুদ্র থেকে কলসিসম পানি বাষ্প হয়ে উড়ে গেলে তাতে কোনো ঢেউই উঠবে  না মন্তব্য অনেকের।

দলীয় দফতরের হিসাব অনুযায়ী আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৮৭টি উপজেলায় অন্তত ২০ প্রার্থী রয়েছেন বিএনপির। তাদের কেউ কেউ দলের কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ পদধারী। পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলের যেসব নেতা অংশ নিচ্ছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে শিগগিরই।

এদিকে গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারের অধীনে তারা আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। একই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছে। গতকাল রোববারও দলের তরফ থেকে যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে গেলে তার প্রাপ্য বহিষ্কার।

অন্যদিকে গত শনিবার নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত দুজন ছিল। একটি বড় দলের জন্য এটা কিছুই না। উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্তকে মাথায় রেখেই ৮৭ উপজেলায় বিএনপির অন্তত ২১ জন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া ৩৫ থেকে ৪০ জন রয়েছেন তারা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে যথারীতি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে তাদের কেউই নিজের পরিচিতিতে বিএনপির নেতা বা কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেননি। স্বতন্ত্র পরিচয়ে ফরম দাখিল করেছেন। তারা দলের চেয়ে ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে ৮৭ জনকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে ৮৭ উপজেলায় তাদের দলেরই ১১৩ জন নেতা এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ফখরুল ইসলাম মতছিন। দল থেকে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হলেও তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন। এখানে জনগণ যাকে পছন্দ করবে, তাকেই ভোট দেবে। যে দলের ইমেজ নষ্ট করবে তাকে মনোনয়ন দিলে তো এখানে কাজ হবে না। তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে এখানে প্রার্থী বাছাই করা হয়নি।     

এদিকে নীতিগতভাবে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও নীলফামারীতে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির ওলামা দলের জেলা সভাপতি আ ন ম রুহুল ইসলাম, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, রাজশাহীর বাঘায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন, বাগমারায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডি এম জিয়াউর রহমান ও পুঠিয়ায় জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোখলেসুর রহমান নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মঞ্জুর উদ্দিন, আজমিরীগঞ্জে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক খালেদুর রশিদ, চুনারুঘাটে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ লিয়াকত হাসান, মাধবপুরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মো. শাহজাহান এবং নেত্রকোনার পূর্বধলায় প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান।

পঞ্চগড় সদরে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু দাউদ প্রধান, বোদায় পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক জাকির হোসেন, দেবীগঞ্জে বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল গণি বসুনিয়া এবং দেবীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাখ্খারুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে।

সুনামগঞ্জের চারটি উপজেলায় বিএনপির সাতজন নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তারা হলেন তাহিরপুর উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনিসুল হক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ফারুক আহমদ ও আনসার উদ্দিন, দোয়ারাবাজার উপজেলায় নির্বাচন করছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য মো. শাহজাহান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ।

নির্বাচন প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বাঘায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করছি। ২০০৯ সালের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলাম। ২০১৪ সালে দল আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দিলেও কয়েকদিন পর আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। সেবার রাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হতে পারিনি।

ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মখলেছুর রহমান মুকুল বলেন, দল থেকে নয়, নিজের ইচ্ছা ও জনগণের ভালোবাসায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারহানা দিল আফরোজ রুমি বলেন, আমি বর্তমানে উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছি। বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না জানি। কিন্তু জনগণের অনুরোধে আবারো ভোট করতে বাধ্য হচ্ছি।

অনেকেই আবার ব্যক্তির চেয়ে দলকে বড় ভেবে সিদ্ধান্ত বদল করেছেন। ফরিদপুর সদর উপজেলায় গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু। এবার দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অটল থেকে নির্বাচন বর্জন করেছেন তিনি। এই নেতা বলেন, এই সরকার সুষ্ঠু উপজেলা নির্বাচন দেওয়ার ক্ষমতাই রাখে না। যারা দলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নির্বাচনের পরই তাদের আশা বুমেরাং হবে বলে মনে করেন পিংকু।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!