• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নৌকা বাইচ, বৈঠার শব্দে কম্পিত কুমার নদের জলরাশি


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ০২:২১ পিএম
নৌকা বাইচ, বৈঠার শব্দে কম্পিত কুমার নদের জলরাশি

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। দেশের বিভিন্ন স্থানের ২০টি বাইচের নৌকা এতে অংশ নেয়। শহর জীবনের কোলাহল ছেড়ে কিছুটা সময়রে জন্য নৌকা বাইচ উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা। আগামীতেও নৌকা বাইচের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকেরা।

ইট-পাথরে গড়া আধুনিক সভ্যতার ভীড়ে গ্রামবাংলা থেকে নৌকা বাইচের মতো ঐতিহ্যকে মানুষ ভুলতে বসেছে মানুষ। আবহমান গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে শনিবার বিকালে মুকসুদপুরে নবদিগন্ত ক্লাব ও কমলাপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে কুমার নদে আয়োজন করা হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতার।

এ নৌকা বাইচে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, নড়াইল, বরিশাল জেলার ৯টি বাছাড়ী, ৯টি সারিন্দা এবং ২টি জলকাইসাসহ মোট ২০টি নৌকা অংশ নেয়। কাসা, ঢোল ও বৈঠার সলাৎ সলাৎ শব্দে মুখোরিত হয়ে ওঠে কুমার নদ। এ বাইচ শুরু হবার আগেই কুমার নদের দুই পাড়ে জড়ো হতে থাকে জেলার আশ-পাশের এলাকা ছাড়াও মাদারীপুর, বাগেরহাট, বরিশাল, ফরিদপুর জেলা থেকে আসা শিশু, নারী-পুরুষসহ লাখো দর্শক। গ্রামের লোকজন উৎসাহ দিতে নানা ধরণের নৌকা সাজিয়ে মাইক বেঁধে অবস্থান নেন নদীর দু’পাড়ে। দর্শনার্থীদের অংশগ্রহনে চরম উপভোগ্য হয়ে ওঠে নৌকা বাইচ। এ নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে নদী দু’পাড়ে বসে মেলা। কসমেটিক্স, মিষ্টি, খেলনাসহ বিভিন্ন দোকান বসে মেলায়। নৌকা বাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নেন মেলা থেকে।

নৌকা বাইচে বাছাড়ীতে ফরিদুপরের নগরকান্দার আওয়াল মোল্যা, জলকাইসাতে একই জেলার ভাঙ্গার আলগী গ্রামের সাইদ এবং সারিন্দায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গোয়ালগ্রামের জিতেন দাস প্রথম স্থান অধিকার করে প্রত্যেকে একটি করে ফ্রিজ জিতে নেন। ২য় পুরষ্কার ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি জিতে নেন রাসেল রহিস, সাহেব ফকির ও শওকত মাতুব্বরের নৌকা। এছাড়াও বাইচে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক নৌকাকে এলইডি টিভি পুরুষ্কার দেয়া হয়।

প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র এ্যাড. আতিকুর রহমান মিয়া। মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাবির মিয়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশরাফ আলী আশু মিয়া, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হায়দার হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বাইচে অংশ নেন আওয়াল মোল্যা, জিতেন দাস ও শওকত মাতুব্বর বলেন, আমরা পুরস্কারের জন্য নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করি না। নিজেরা আনন্দ পেতে ও দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে আমরা দেশের বিভিন্ন নৌকা বাইচে অংশগ্রহন করি। এটা এখন আর আমাদের পেশা নয় নেশায় পরিনত হযেছে।

দর্শনার্থী মেহের মামুন, মোহাম্মদ হোসাইন, তৃশা মন্ডল জানান, মুরব্বীদের কাছে নৌকা বাইচের কথা শুনেছি, আজ দেখলাম। অনেক ভাল লেগেছে। তবে নদী ও খাল না থাকার কারনে এখন আর আগের মত নৌকা বাইচ হয় না। তারপরেও কোথাও অনুষ্ঠিত হবে এমন খবর পেলে সেখানে ছুটে যাই। নদী ও খাল খনন করে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ আগামীতেও অনুষ্ঠিত হবে এমটাই আশা করছি।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কাবির মিয়া বলেন, আস্তে আস্তে দেশের বিভিন্ন নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে আমাদের উদাসীনতার কারনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা নৌকা বাইচ, লাঠি খেলা, জারি-সারি গান বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নৌকা বাইচকে ধরে রাখতে ও সাধারন মানুষকে আনন্দ দিতে কুমার নদে এ বাইচের আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতেও বাঙ্গালীর এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!