• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘নৌকাবিরোধীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা


বিশেষ প্রতিনিধি মে ৫, ২০১৯, ০৩:০৩ পিএম
‘নৌকাবিরোধীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ঢাকা : চলতি বছরের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেসব সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী নৌকার প্রার্থীদের বিরোধিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম থেকে আপাতত সরে এসেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ও দায়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিয়ে আরো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তাদের আমলনামা সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে।

আগামী অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠেয় দলের জাতীয় সম্মেলনে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সবার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা দৃশ্যমান না হলেও কোনো না কোনোভাবে শাস্তির আওতায় আসবেন দায়ী ও অভিযুক্ত নেতারা। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানায়।

সূত্রমতে, এবারের উপজেলা নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনেক নেতার বিরুদ্ধে নানাভাবে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল এসব নেতাকে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় দল। এ সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। আপাতত কারণ দর্শানোর চিঠি না পাঠিয়ে অভিযোগগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ এসেছে কি না, দলীয় কোন্দলের রেশ ধরে এক পক্ষ অন্য পক্ষের নেতার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে কি না, সেসবও খতিয়ে দেখছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ঢালাও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলে তৃণমূলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও শীর্ষ নেতাদের আশঙ্কা। কেন্দ্রীয় তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তি নির্ধারণ করা হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেসব মন্ত্রী ও এমপির তালিকা সাজানো হচ্ছে। দলের আগামী জাতীয় সম্মেলনে তাদের কেন্দ্রীয় পদ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। দলীয় আদেশ না মেনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করা যেসব মন্ত্রী, এমপি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই, তাদের বিভাগীয়, মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব ধরনের কমিটির পদ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। এমনকি তাদের আগামীতে জাতীয় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক নৌকা না দেওয়ার সিদ্ধান্তও আছে। আবার কাউকে কাউকে শুধু ভবিষ্যতে দলের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হতে পারে।

দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অভিযোগগুলো অনেকটা ঢালাওভাবে হয়েছে। এ কারণেই বিস্তারিতভাবে তদন্ত করতে চাইছি আমরা। ঢালাও অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কাউকে কারণ দর্শানো ও শাস্তি দেওয়াটা যৌক্তিক নয়। তবে সবার আমলনামা সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে। সামনের জাতীয় সম্মেলনে তারা তাদের পদ হারাতে পারেন, এটাই তার বা তাদের শাস্তি।’

দলীয় সূত্র জানায়, এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করে আলোচনা ও সমালোচনায় আছেন দলের অন্তত ৫৫ জন সংসদ সদস্য। দলের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার তিন মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই দলীয় নির্দেশ না মানার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। এখন তারা আছেন ‘দলীয় কাঠগড়ায়’। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের তিন মাস না যেতেই তাদের এমন কাণ্ডে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কিছু সমালোচনার শিকার হতে হয়।

‘বাড়াবাড়ি ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে তারা নৌকার মূল প্রার্থীর পরাজয়ে নানা তৎপরতা চালান বলে তৃণমূল থেকে অভিযোগ আসে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। তাদের কারণে অনেক উপজেলায় নৌকার প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতার মধ্যেও কিছু কিছু স্থানে ভোট জালিয়াতি, বাক্স ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর জন্য ওইসব সংসদ সদস্যকে দায়ী করা হয়।

দলের তৃণমূলে কোন্দল ও বিভেদের জন্যও তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা’ নেওয়ার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ওই সিদ্ধান্ত হয়।

ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্রমতে, উপজেলা নির্বাচনকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে শুরু থেকেই নানা উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। তাদের পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়নের বদলে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রার্থী বাছাইয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া ও দলের মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে কোনো অবস্থাতেই যেন দলীয় কোন্দলের প্রকাশ না ঘটে, সেদিকে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই।

দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য এবার আগেভাগেই দল সতর্ক ছিল।

এছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধের কারণে উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে যেন খেসারত দিতে না হয়, সেজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দলীয় কোন্দল নিরসনের উদ্যোগও নেওয়া হয়। অনেক উপজেলায় সেসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন হয়নি বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। দলের নির্দেশ না মেনে যারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে তৎপরতা চালান, তাদের বিরুদ্ধে আগামী সম্মেলনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে তৃণমূলে শৃঙ্খলা ফেরাতে চায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!