• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পদত্যাগ প্রশ্নে যা বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী


সোনালীনিউজ ডেস্ক জুলাই ২৩, ২০২০, ০৯:১৮ এএম
পদত্যাগ প্রশ্নে যা বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ সব সময় ছিল। করোনাভাইরাস মহামারির সময় এসব অভিযোগ আরো বড় হয়ে দেখা দেয়। মহামারির শুরুতে নানা পদক্ষেপে অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসকদের সুরক্ষাসামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বদলি করা হয় দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে। ওএসডি করা হয় আরেকজনকে। জেকেজি ও রিজেন্টকাণ্ডে সর্বশেষ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদত্যাগ করেছেন। সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে একজন পরিচালককে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য প্রশাসনে তোলপাড় চলছে।

এ অবস্থায় একই ধরনের অভিযোগ থাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকও পদত্যাগ করতে পারেন বলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। অবশ্য এ নিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি মন্ত্রী।

স্বাস্থ্য প্রশাসনে এমন অস্থির অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ পদত্যাগ বা সরিয়ে দেওয়ার মধ্যে সমস্যার সমাধান দেখছেন না। তাঁদের মতে, ব্যক্তি পরিবর্তনের পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কার জরুরি।

পদত্যাগ প্রশ্নে মন্ত্রী চুপ : করোনা মহামারি মোকাবেলায় যে ধরনের নেতৃত্ব দরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর তা দিতে পারছে না বলে অনেকেই মনে করেন। পরীক্ষা, চিকিৎসা, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন সব ক্ষেত্রেই অব্যবস্থাপনা রয়েছে। মার্চে যথাযথভাবে কোয়ারেন্টিন কার্যকর না করায় সমালোচনা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা আছে এখনো। চিকিৎসকদের সুরক্ষাসামগ্রী বিশেষ করে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ নিয়ে অভিযোগ ওঠে। সর্বশেষ জেকেজি হেলথকেয়ার ও রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতির ঘটনায় স্বাস্থ্য প্রশাসনের অদক্ষতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র সামনে চলে আসে। মহামারির এমন দুঃসময়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতের এমন অবস্থা দেখে সবাই হতবাক। তোপের মুখে পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সর্বশেষ রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে পদত্যাগপত্র জমা দেন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। যদিও তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি একরকম নিশ্চিত ছিল বলে জানা যায়।

কেউ কেউ মনে করছেন, যেকোনো সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন অথবা তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। অবশ্য সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েক দিন ধরেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী পদে পরিবর্তন আসার বিষয়ে গুঞ্জন চলছে। এমনকি কেউ কেউ বলছেন, ভেতরে ভেতরে নতুন মন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে।

গতকাল দুপুরে সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নিজ দপ্তরের করিডরে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। এ সময় সাংবাদিকরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরাসরি প্রশ্ন করেন যে তাঁর পদত্যাগের ব্যাপারে গুঞ্জন আছে, তিনি পদত্যাগ করবেন কি না। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যান।

জাহিদ মালেক জানান, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী এই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে দেশের হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ অন্যান্য চিকিৎসাসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে কোনো অনিয়ম হয় কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’

অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালককে সরানোর সিদ্ধান্ত : মহামারির শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে বদলি করা হয়। তারপর বদলি করা হয় একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খানকে। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) ইকবাল কবিরকে ওএসডি করা হয়। সরে দাঁড়িয়েছেন মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। গতকাল অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. আমিনুল হাসানকেও সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি আরো একাধিক প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে ওএসডি করা ডা. ইকবাল কবিরের ওপর ন্যস্ত থাকা একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বও ছিল হাসপাতাল শাখার পরিচালকের ওপর।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আমিনুল হাসান আর হাসপাতাল শাখার পরিচালক পদে থাকছেন না, এটা নিশ্চিত। গতকালই তাঁকে সরানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, হাসপাতালগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার জন্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার দায় সবচেয়ে বেশি ছিল। ওই শাখায় যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরাই মূলত অনিয়ম ও দুর্নীতিচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকেন। যখন যে কর্মকর্তা ওই শাখার পরিচালক পদে বসেন তিনি ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছায় ওই চক্রে জড়িয়ে পড়েন। তা না হলে বছরের পর বছর কোনোভাবেই হাজার হাজার হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন না করে থাকতে পারেন না।

ডিজির পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে সূত্রটি জানায়, ডিজি পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর সেটা গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। ২০১৯ সালের এপ্রিলে আবুল কালাম আজাদের মহাপরিচালক পদের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিনি দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। আগামী বছর এপ্রিলে বাড়তি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

নতুন ডিজি হিসেবে আলোচনায় অনেকেই : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি পদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে সেটা নিয়ে গতকাল দিনভর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে জোরালো আলোচনা চলে। বেশি উচ্চারিত হয়েছে পাঁচ-ছয়জনের নাম। তাঁদের মধ্যে আছেন বর্তমান স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, ডা. আবুল হাশেম খান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শামিম আহমেদ, আইইসিডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। যদিও গ্রেডেশন ঝামেলার কারণে বর্তমানে যাঁরা অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্বে আছেন তাঁদেরকে মহাপরিচালক করা নিয়ে জটিলতা রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়। বিশেষ করে যাঁরা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন না বা নেই তাঁদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মহাপরিচালক হওয়ার সরাসরি যেমন সুযোগ নেই, তেমনি মহাপরিচালক হতে হলে তাঁদের ৩ নম্বর গ্রেড থেকে সরাসরি ১ নম্বর গ্রেডে এনে মহাপরিচালক করতে হবে। যা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ক্যাডারের মধ্যে আগে থেকেই নানা রকম প্রতিক্রিয়া রয়েছে। গতকাল মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে গুঞ্জন শোনা যায় যে চিকিৎসকদের পরিবর্তে প্রশাসন ক্যাডারের কাউকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তবে এ নিয়ে আগে থেকেই চিকিৎসকদের মধ্যে জোরালো আপত্তি রয়েছে। বরং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যেসব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা রয়েছেন তাঁদের নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, ভেতরে ভেতরে চিকিৎসক সংগঠনগুলো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে যাতে চিকিৎসকদের বাইরে কাউকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হলে তারা আন্দোলনে নেমে যেতে পারে।

কাঠামোগত সংস্কারের তাগিদ : বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, পদত্যাগ করলে বা সরিয়ে দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। তাঁরা বলছেন, ব্যক্তি পরিবর্তনের পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। তা না হলে কখনোই দুর্নীতি, অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা বন্ধ হবে না। এর আগেও এমন পরিবর্তন করে সুফল মেলেনি। বরং দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা আরো বেড়েছে। মন্ত্রী-সচিব বা মহাপরিচালকের নিচের পদে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, ‘পদত্যাগ বা অপসারণ সাময়িক সমাধান হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতির মূল উত্পাটন করা না যাবে ততক্ষণ কোনো সুফল আসবে না। এ জন্য কাঠামোগত সংস্কার জরুরি, তাতে দুর্নীতির সুযোগ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাবে। কেউ চাইলেই দুর্নীতি করতে পারবে না।’সূত্র: কালের কণ্ঠ

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!