• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতু নির্ধারিত সময়ে হবে তো


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ২৩, ২০২০, ০৯:২০ এএম
পদ্মা সেতু নির্ধারিত সময়ে হবে তো

ঢাকা : পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দফায় দফায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের পর সময় অপচয়ের ধারাবাহিকতা এখনো কাটেনি। নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছিল। বাধা হয়ে আবির্ভূত হয় নকশা জটিলতা। এ কারণে ২২টি পিয়ারের নকশা পরিবর্তন করতে হয়। এর পর আসে করোনা ভাইরাস মহামারী। এখন চলছে বন্যা।

করোনায় কর্মী সংকট কাটানোর চেষ্টাকালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড। নদীতে তলিয়ে যায় সেতুর বেশ কিছু নির্মাণ উপকরণ। অনেক যন্ত্রপাতি এখন লুক্সেমবার্গ থেকে আমদানি করতে হবে। ফলে পিছিয়ে যাচ্ছে সেতুর কাজ। তা ছাড়া নদীশাসন কাজও পিছিয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। খরচ কমাতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে কিনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান- তা যাচাই করতে হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা বাহানায় খরচ ও সময় বাড়ানোর ফন্দি আঁটার অভিযোগ উঠছে।

গত ৩১ জুলাই মাওয়ায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ভেঙে সেতুর সংরক্ষিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রী বিলীন হয়ে যায় পদ্মা নদীতে। এর ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এসব যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রী ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ থেকে পুনরায় আমদানি করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এতে সেতু নির্মাণে জটিলতা বাড়বে। এ ছাড়া মাওয়া কনস্ট্রাকশন এলাকায় ফের এ ধরনের ভাঙনের আশঙ্কাও করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সেতু বিভাগের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় পদ্মা সেতুর প্রধান দুই প্যাকেজের (মূল সেতু ও নদীশাসন) নির্মাণকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগামী বছরের জুনে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চিঠি দিয়েছে। তবে করোনার কারণে কোম্পানিটির জনবলের একাংশ চীনে গিয়ে আটকে ছিলেন। তাই ঠিক কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম  জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নকাল। আমরা ধারণা করছি, বন্যা ও কোভিডের কারণে পদ্মার কাজ সময়মতো শেষ করা না-ও হতে পারে। তবে কতটুকু সময় বাড়াতে হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। কারণ বন্যা ও করোনা দুটিই চলছে।


নদীভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পের নদীভাঙন অংশ পরিদর্শন করেছেন বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা। ১৯২টি রেলওয়ে স্ট্রিনগারসহ অনেক কিছুই পানিতে পড়ে গেছে। যেগুলো সরাসরি সেতুর নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত। এগুলোর উদ্ধারকাজ চলছে।

মূল সেতু নির্মাণে চীনা ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর অর্থাৎ চার বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে বাস্তবায়ন বিলম্বে এ মেয়াদ দুই দফা বৃদ্ধি করে আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্পটির দুই অংশেরই (মূল সেতু ও নদীশাসন) খরচ বৃদ্ধি পাবে।

প্রকল্পের নদীশাসন প্যাকেজের চুক্তি সই করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এ ক্ষেত্রে চার বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। সে হিসাবে নির্ধারিত সময় শেষ হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এ প্রকল্পে নদীশাসনের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরে তা বাড়িয়ে চলতি বছর জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। তবে বর্ধিত সময় শেষে নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনো প্রায় ২৪ শতাংশ পিছিয়ে আছে নদীশাসন। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় আরও এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে সিনোহাইড্রোকে। নতুন হিসাবে আগামী বছর জুনের মধ্যে নদীশাসনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও করোনার কারণে কবে নাগাদ এ কাজ শেষ হবে, তা নিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কেউ নিশ্চিত নন।

নদীশাসনে ব্যবহৃত নতুন জিও টেক্সটাইল উপকরণ পরীক্ষার জন্য গত মার্চে সিনোহাইড্রোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। জুলাই শেষে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে প্রতিবেদন পেতে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া আগামীতে নদীশাসনে অনুমোদনহীন উপকরণ ব্যবহারে সতর্ক করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।

সেতু বিভাগে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় যৌথভাবে ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক রেন্ডাল লিমিটেড, বাংলাদেশের বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড এবং জাপানের পাডেকো কোম্পানি লিমিটেড ও কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল। সেখানে বলা হয়, সিনোহাইড্রো নদী শাসনে অনুমোদনহীন জিও টেক্সটাইল উপকরণ ব্যবহার করেছে। তাই চুক্তিতে উল্লিখিত জিও টেক্সটাইল ব্যাগের গুণাগুণ ও নতুন জিও টেক্সটাইল উপকরণের গুণাবলি কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা প্রমাণ করতে হবে ঠিকাদারকে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে সনদ সংগ্রহের সুপারিশ করেছে পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কনসোর্টিয়াম। যদি যুক্তরাষ্ট্রের সনদে জিও টেক্সটাইল উপকরণের গুণাবলি যথাযথ না পাওয়া যায় তা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নদীশাসনে পুনরায় ক্ষতিপূরণমূলক বাড়তি কাজ করতে হবে।

চলমান বন্যার কারণেও ক্ষতির মুখে পড়ল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার। কারণ ভেঙে নদীতে পড়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডটি মূল সেতুর ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে। সেখানে তাদের মালামাল সংরক্ষিত আছে, যা রক্ষার দায়িত্ব ঠিকাদারের। যেসব উপকরণ নদীতে পড়ে গেছে তা তারা উঠানোর চেষ্টা করছে। না পারলে লুক্সেমবার্গ থেকে নতুন করে আমদানি করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ। আর্থিক বিচারে ক্ষয়ক্ষতি হলেও বিমার কারণে এ সংক্রান্ত খরচ প্রকল্প থেকে বহন করতে হবে না বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। তার মতে, এটি ঠিকাদারের বিষয়।

ডুবে যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, যেসব নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ডুবেছে সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উদ্ধারের পর ব্যবহারোপযোগী না হলে নতুন করে আমদানি করতে হবে। রেলওয়ে স্ট্রিনগার ও রোডস্লাব আছে পানিতে পড়ে যাওয়া উপকরণের মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে রোডস্লাব হয়তো কাজে লাগানো নাও যেতে পারে। সবকিছু বোঝা যাবে উদ্ধারের পর। সূত্র :আমাদের সময়।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!