• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবহন ধর্মঘটে অচল সারা দেশ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০৩:৫৪ পিএম
পরিবহন ধর্মঘটে অচল সারা দেশ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ঢাকা : নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছে। গত সোমবার থেকে কয়েকটি জেলায় শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে বুধবার যোগ দিয়েছে বিভিন্ন জেলার পরিবহন শ্রমিকরা। এতে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্নস্থানে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-

নরসিংদী: ঢাকাগামী সড়কে বাস চলাচলে বাধা ও চালককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে নরসিংদী বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী সকল ধরনের বাসচলাচল বন্ধ রয়েছে।

বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে এই সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে টঙ্গী-মহাখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে নতুন সড়ক আইন বাতিল না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন শ্রমিকরা।

পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল থেকে নরসিংদী থেকে ঢাকার বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখায় সকাল ১০টায় নারায়গঞ্জের চিটাগাং সড়কে নরসিংদী মেঘালয় পরিবহনের একটি বাসের চালক ও হেলপারকে মারপিট করে শ্রমিকরা। ওই সময় তারা গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। ঘটনার পর পরই এর প্রতিবাদে নরসিংদী থেকে ঢাকার উদ্যেশে সকল বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিক ও শ্রমিকরা। ফলে দূর্ভোগে পড়েন ঢাকাগামী শত শত যাত্রী।

ঢাকাগামী যাত্রী সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমার এক আত্মীয়কে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাকে দেখার জন্য বাস টার্মিনালে আসছি ঢাকা যাওয়ার জন্য। কিন্তু টার্মিনাল থেকে কোন গাড়ি যাচ্ছে না। এতে আমরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি।

অন্যদিকে নতুন সড়ক আইন বাতিল না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পরিহন শ্রমিকরা । মেঘালয় পরিবহনের বাসচালক মনির ভূইয়া বলেন, বিআরটিএ গিয়ে আমরা লাইসেন্স পাই না। লাইসেন্সের জন্য হয়রানী হতে হয়। লাইসেন্স করাতে সুযোগ সুবিধা না দিয়ে অযথা বাসচালকদের জরিমানা ধার্য করেছে। আমরা ২০০ টাকা ট্রিপে বাস চালিয়ে এত টাকা জরিমানা দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবো না। তাই আমরা কর্মবিরতী পালন করছি।

নরসিংদী আন্ত জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এ এইচ এম জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের টার্মিনাল থেকে সায়বাদ ও মহাখালী গামী বাস চলাচল করে। সকালে সায়দাবাদগামী মেঘালয় পরিবহনের একটি বাসের চালক ও হেলপারকে নারায়গঞ্জের চিটাগাং সড়কে শ্রমিকরা মারপিট করে । এজন্য সায়দাবাদগামী সকল ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে মহাখালীগামী ও লোকাল বাস চলাচল করছে।

কুমিল্লা: পরিবহন ধর্মঘটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে কুমিল্লা। বুধবার নগরীর শাসনগাছা,জাঙ্গালিয়া ও চকবাজার বাসস্ট্যান্ডে সহস্রাধিক যাত্রী অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে কোথাও কোন যানবাহন চলাচলের খবর পাওয়া যায়নি।

নগরীর শাসনগাছা এলাকায় প্যাডেল ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা এদিক ওদিক করে যাত্রী আনা নেওয়া করলেও পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধের কারণে পুরো শাসনগাছা এলাকায় কোনো যানবাহন নেই।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশে দুই একটা মালামাল আনা নেয়ার কাজে ট্রাক দেখা গেলেও চোখে পড়েনি কোন যাত্রীবাহী পরিবহন। পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড ও জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের জন্য হাজারো যাত্রীর হাহাকার ছিলো লক্ষ্যণীয় বিষয়।

আদর্শ সদর উপজেলার জামবাড়ী থেকে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন ব্যাংকার খলিলুর রহমান। অফিসের ব্যাগ নিয়ে খলিলুর রহমান ৮টায় শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে বেলা ৯ টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে  কোনো যানবাহনের দেখা পান নাই।

শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডে শতাধিক নারীকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এই শ্রমজীবী নারীরা ইপিজেডে চাকরী করেন। শাসনগাছা থেকে অন্তত দেড় কিঃমিঃপথ। যানবাহন না পেয়ে অগত্যা হেটে রওনা দিয়েছেন।

এদিকে নগরীর রেইসকোর্স এলাকায় পরিহন শ্রমিকদের সিএনজি অটো রিকশা ও প্রাইভেট গাড়ি চলাচলে বাধা দিতে দেখা গেছে।

 এ বিষয়ে জেলা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব তাজুল ইসলাম জানান,কেন্দ্রীয়ভাবে এমন সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা পরিবহন ধর্মঘট নয়। দাউদকান্দি টোলপ্লাজায়  ট্রাক লরির ধর্মঘট চলার  সময় কুমিল্লা শাসনগাছা থেকে ছেড়ে যাওয়া এশিয়া ও তিশা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের উপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা পরিবহন চালক ও হেলপারদের অঘোষিত ধর্মঘট চলছে।

কুমিল্লা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন,কুমিল্লা-ঢাকা রুটে কুমিল্লা থেকে বাস যাচ্ছে না। তবে উপজেলা রুটে কিছু বাস চলছে। শ্রমিকরা কাজ করতে চাইছে না বলে বাস চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।   কোনরকম ঘোষণা ছাড়াই কুমিল্লায় চলছে পরিবহন ধর্মঘট। ফলে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানচলাচল।

কুমিল্লা থেকে অভ্যন্তরীণ সব সড়কপথে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, কভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সকাল থেকেই জেলার শাসনগাছা জাঙ্গালিয়া, আলেখারচর ও পদুয়ার বাজারে যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করছে শ্রমিকরা। বাসস্ট্যান্ড এলাকাগুলোতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তাদের দাবি নতুন সড়ক আইন সংস্কার করতে হবে।

মুন্সীগঞ্জ: সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে প্রথম দিনের মতো মুন্সীগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে চালক ও শ্রমিকরা। আর এতে করে চরম ভোগান্তি পরেছে সাধারণ যাত্রীরা।

বুধবার সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জ-ঢাকা রুট এবং গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা।

এছাড়া মুক্তারপুর চীন মৈত্রী সেতুর ঢালে বাস ট্রাক মালিক শ্রমিকরা বিক্ষোব মিছিল করে এবং ব্যারিকেড সৃষ্টি সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় ঢাকামুখি সবগুলো বাসকাউন্টার বন্ধ করে রাখে বাস মালিকরা।

মুন্সীগঞ্জ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল জানান, সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জ ঢাকা রুটে সকল ধরনের যানবাহন বন্ধ রয়েছে। মুন্সীগঞ্জের কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে শিমুলিয়া ঘাটে গাড়ির অপেক্ষায় ফেরী অলস সময় কাটাচ্ছে। কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া বুধবার সকাল থেকেই পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক-মহাসড়কে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে করে মুন্সীগঞ্জের সাথে সড়কপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

লৌহজং: পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) সকালে শিমুলিয়াঘাট থেকে বাস চলাচল শুরু হলেও ৯টার পর শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে তা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা থেকে যেসব বাস সকালে ছেড়েছে সেগুলো আর ঢাকায় ফিরছে না। চালক ও শ্রমিকরা বাস পার্কিং করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

এতে বিপাকে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার যাত্রীসহ মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাজারও যাত্রীরা। এদিকে প্রাইভেটক্যার ও লেগুনায় চড়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে পারি দিতে হচ্ছে ঢাকা মুখী যাত্রীদের।

শিমুলিয়াঘাট বাস মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলী আকবর হাওলাদার বলেন, 'আমরা মালিকপক্ষ বাস চলাচল বন্ধ করিনি। শ্রমিক চালকরা নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তবে আমরা চেষ্টায় আছি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বাস চলাচল চালু করার।

সিরাজগঞ্জ : সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জ। চালক-শ্রমিকরা বাসসহ গণপরিবহন বন্ধ রাখায় চরম দুর্ভোগে পরেছে সিরাজগঞ্জের সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ীরা।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের উসকানিতে এই হঠাৎ ধর্মঘটে নেমেছে শ্রমিকরা। ধর্মঘটের কারণে বুধবার সকাল থেকে জেলার আভ্যন্তরীসহ সকল রুটে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এতে সাধারণ মানুষসহ চাকরিজীবী ও ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ধর্মঘটের কারণে সব পরিবহন বন্ধ থাকলেও রিকশা-সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যাত্রীদের দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে।

এছাড়াও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান বন্ধ থাকায় কাঁচামাল ব্যবসায়ীদেরও দুর্ভোগে পড়েছে। এছাড়াও শ্রমিকরা মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে বিক্ষোভ ও জেলার বাইরে থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ী আটকে দিচ্ছে। অনেক স্থানে পণ্যবাহী ট্রাক আটকিয়ে তাদের মুখে কালি মেখে দেবার ঘটনা ঘটেছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী জানান, গতকাল সিরাজগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলা যানবহন চলাচল করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে আজ বুধবার শ্রমিকরা নিজে থেকেই যানবহন বের করেনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!