• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন

পরিবারের চিঠিকে ‘দলীয় কৌশল’ মনে করছে আ.লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১৩, ২০২০, ০৬:০৯ পিএম
পরিবারের চিঠিকে ‘দলীয় কৌশল’ মনে করছে আ.লীগ

ঢাকা : বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির জন্য পরিবারের দেওয়া চিঠিকে ‘কৌশল’ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধানের কারাগার থেকে মুক্তির বিষয়ে হঠাৎ করে পরিবারকে সামনে রেখে বিএনপি দল হিসেবে আলাদা ও পেছনে থাকার বিষয়টির দিকে গভীর নজর ও দৃষ্টি রাখছেন সরকারি দলের নেতারা।

খালেদা জিয়া নিজে বা বিএনপির পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে তা ‘রাজনৈতিক পরাজয়’ বা সরকারের কাছে ‘নতি স্বীকার’ করা হয়- এমন চিন্তা ও কৌশল থেকে বিএনপি পরিবারের মাধ্যমে আবেদন করিয়েছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়। নানাভাবে বিপর্যস্ত ও কোণঠাসা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির কোনো কৌশলের কাছে কিছুতেই পরাজয় চায় না টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন দলের সূত্র বলছে, একদিকে বিএনপি এখনো তাদের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে আদালতের মাধ্যমে এবং রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এগুনোর কথা বলছে।
অন্যদিকে পরিবার মানবিক বিষয়কে তুলে ধরে দলের বাইরে এসে তার মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। দলীয় প্রধানের মুক্তির জন্য সরকারের কাছে পরিবারের আবেদনের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব কিছু জানেন না বলেও গণমাধ্যমের কাছে দলটির পক্ষে বলা হচ্ছে। বিষয়গুলো অবিশ্বাসের চোখে দেখছে সরকারি দল।

এর ভেতরে বিএনপির কী কী কৌশল আছে, তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছেন ক্ষমতাসীনরা। তবে জামিনের জন্য পরিবারের পক্ষে আবেদনের বিষয়টি তাদের কাছে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না।

যদিও সরকারি দল মনে করে, খালেদার জামিন হওয়া বা না হওয়া আদালতের বিষয়। মানবিক কারণে সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তার মুক্তি চেয়ে দেওয়া পরিবারের চিঠির বিষয়ে আওয়ামী লীগও আছে কৌশলী অবস্থানে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানবিক কারণ দেখিয়ে পরিবার আবেদন করলেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন না। চিকিৎসকরা সুপারিশ করলেই কেবল তা বিবেচনাযোগ্য। তিনি দণ্ডিত আসামি। পরিবার বা দলের নেতার কথায় তার মুক্তি হবে না। মানবিক কারণে বা চিকিৎসার জন্য তার জামিন আবেদন আদালত একাধিকবার নাকচ করে দিয়েছেন, তাই পরিবারের আবেদনে তাকে মানবিক কারণে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা প্রয়োজন- এ কথা শুধু তার দলের নেতা বা পরিবারের লোকরা বলছেন। তার চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা সে কথা বলছেন না।’

সরকারি দলের সূত্রমতে, খালেদা জিয়া আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ার পর তার মুক্তির জন্য বিএনপি আন্দোলন করার ঘোষণা ও হুমকি দিলেও গত দুই বছরের মধ্যে দলটি জোরালো কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তার সব মামলায় জামিন হয়নি।

আবেদন করলে প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন বিএনপির চেয়ারপারসন, গত বছর সরকারের প্রভাবশালী একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক নেতা প্রকাশ্য বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত দেন। তখনো বিএনপি দলীয় প্রধানের মুক্তির পক্ষে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

তথ্য বলছে, খালেদার স্বাস্থ্যগত অবস্থার অবনতির কথা উল্লেখ করে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফায় জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৪ মার্চ তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার সাময়িক জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

এর আগেও একবার তিনি উন্নত চিকিৎ​সার জন্য খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। সবশেষ আবেদনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হলে মতামতের জন্য তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবার এখন চিঠির জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে।

তথ্যমতে, উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে খালেদা জিয়া বিদেশ যাবেন, গত বছরের মার্চে রাজনীতিতে এমন আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ বিষয়ে ‘গোপন সমঝোতা’র চেষ্টা করে আসছিল বলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

প্যারোলের বিষয়ে গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে সরকার ও বিএনপির মধ্যে ‘গোপন সমঝোতা’র লক্ষ্যে কয়েকবার বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি প্যারোলের জন্য আবেদন করেনি। সরকারও একপর্যায়ে ‘কঠোর’ অবস্থান নেওয়ায় থেমে যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার প্যারোলের বিষয়ে আলোচনা ও সরকারের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ‘সমঝোতা’র কার্যক্রম।

সূত্র জানায়, বিএনপির প্রধান নেতার প্যারোলের বিষয়ে গত বছরের মার্চ ও এপ্রিলে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এক উপদেষ্টা।

রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বাইরে আসছেন- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে তখন দুই দলের অনেক নেতাকর্মী এমনটা ধরে নেন।

সরকার আন্তরিক হলেও বিএনপি প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন না করায় আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে, খালেদার মুক্তির পথ বিএনপিই ‘রুদ্ধ’ করে রেখেছে। ‘নেতিবাচক রাজনীতি বাদ দিয়ে’ বিএনপিই সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে পারছে না।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে বক্তব্য ও বিবৃতিতে দলের চেয়ারপারসনের জামিন বা মুক্তির দাবি জানালেও আদৌ কেউ কেউ মুক্তি চান কি না, এমন প্রশ্নও তোলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার সাজা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে তাকে আরো একটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে তিনি বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রায় দুই বছর পর তাকে কারামুক্ত করার জন্য পরিবারের প্রচেষ্টাগুলো নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!