• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ বছরে রেলের লোকসান ৬ হাজার ৯০০ কোটি


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৬, ২০১৯, ১১:১৯ পিএম
পাঁচ বছরে রেলের লোকসান ৬ হাজার ৯০০ কোটি

ঢাকা : বড় অঙ্কের বিনিয়োগ সত্ত্বেও লাভের মুখ দেখছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত পাঁচ বছরে মোট ৬ হাজার ৯০০ কোটি ৩ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে সরকারের এই সেক্টরকে।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লোকসান ৮৭২ কোটি ৮৪ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৩২৫ কোটি ২০ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৭৬ লাখ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লোকসান করেছে ১ হাজার ৪৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে গত ৬ বছরে লোকসান ৬ হাজার ৯০০ কোটি ৩ লাখ টাকা।

এই বিরাট লোকসানের জন্য বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মিজানুর রহমান পেশাদারিত্ব, দক্ষ জনবল এবং সঠিক তদারকির অভাবকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, রেল কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা এবং যথাযথ তদারকি এ পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে।

জানতে চাইলে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক শামসুল হক বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় যাত্রীদের যথাযথ সেবা দেওয়া সম্ভব না। সরকারের উচিত বেসরকারি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া। সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে পারে। তবে আপনি যদি মানসম্পন্ন সেবা চান, তাহলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। রেল কর্তৃপক্ষ কেবল তাদের তদারকি করবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান বলেন, রেলওয়ে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। ক্ষতি বা লাভ হতে পারে। আমরা যদি একে লাভজনক করতে চাই, তাহলে ভাড়া বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে ট্রেনের ভাড়া অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় কম। তবে  লোকসানের পরিমাণ কমাতে যেসব জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে, তা দূর করতে কাজ করা হবে। পরিস্থিতি বদলাতে সময় এবং বড় বিনিয়োগ লাগবে।

তিনি আরো বলেন, পূর্ব জোন বা পশ্চিম জোনের ভেতরের, যেমন খুলনা-রাজশাহী রুটে বিলম্বের অভিযোগ নেই। তবে ঢাকা থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ অঞ্চলে চলা বেশিরভাগ ট্রেনই বিলম্বে চলছে। এজন্য জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত এক লাইনের রেলপথ দায়ী।

জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ এবং যমুনা নদীর ওপর নতুন একটি রেল সেতু তৈরির প্রকল্প ইতিমধ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

শামসুজ্জামান বলেন, ট্রেনের টিকিটের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে, যার ফলে টিকিটের সংকট দেখা দেয়। আর টিকিটের কালোবাজারির অভিযোগ এবং কর্মীরা জড়িত প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকসান কমানো নয় বরং যাত্রীদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করা তাদের অগ্রাধিকার। তবুও নিরাপদ গণপরিবহন হিসেবে বিবেচিত রেলের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

জীর্ণ বগি, নোংরা টয়লেট, ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব, যাত্রাপথে বিলম্ব, স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মে প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকা, টিকিট পেতে সমস্যা এবং নিরাপত্তার অভাবে জর্জরিত রেল সেবা। এক কথায় যাত্রীরা যেসব সেবা প্রত্যাশা করেন তার একটি বড় অংশই অপূর্ণ থেকে যায়। সেইসঙ্গে নিয়মিত লাইন ও ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা।

জানা গেছে, যাত্রীদের এত অসুবিধার মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠনের অষ্টম বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ সেবা সপ্তাহ শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

সেবা সপ্তাহে ১০টি টাস্কফোর্স কাজ করবে, যারা টিকিট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তির কারণগুলো সমাধানের চেষ্টা করবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এই টাস্কফোর্স ট্রেনের সময়সূচি, টয়লেট এবং বগিগুলোর অবস্থার দিকে বিশেষভাবে নজর রাখবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!