• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
দ্বাদশ বিশ্বকাপ

পাক-ভারত মহারণে কোহলিদের ‘বিরাট’ জয়


ক্রীড়া প্রতিবেদক জুন ১৭, ২০১৯, ১২:৫১ এএম
পাক-ভারত মহারণে কোহলিদের ‘বিরাট’ জয়

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: বিশ্বকাপ ক্রিকেট যুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কখনও পারেনি পাকিস্তান। আগের ছয়টি বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়ে প্রতিবারই হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। দ্বাদশ বিশ্বকাপের সব থেকে হাইভোল্টেজ ম্যাচে ডার্কওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে সরফরাজ আহমেদের দলকে ৮৯ রানে হারিয়েছে বিরাট কোহলির ভারত। এ নিয়ে টানা সাত আসরে হেরে গেল পাকিস্তান।

বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে হিটম্যান খ্যাত রোহিত শর্মার বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে ৩৩৬ রান সংগ্রহ করে ভারত। ফলে জয়ের জন্য পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩৭ রান। বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই। সর্বোচ্চ ৩২৭ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে। তাই জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হবে পাকিস্তানকে।

৩৩৭ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত বল করতে করতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ভুবনেশ্বর কুমার। কিন্তু ভুবির পরিবর্ত হিসেবে বল করতে আসেন বিজয় শঙ্কর। বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচে খেলতে নামা বিজয় শঙ্কর প্রথম বলেই তুলে নিলেন  ওপেনার ইমাম-উল-হককে। প্রথম ভারতীয় এবং বিশ্বের নবম বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে অভিষেকে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন। 

এরপর অবশ্য ফখর জামান ও বাবর আজম দ্বিতীয় উইকেটে একশো রানের জুটি গড়ে তোলেন। জুটি ভাঙেন কুলদীপ যাদব। ৪৮ রানে বোল্ড হন বাবর আজম। ফখর জামানকেও ৬২ রানে ফেরালেন কুলদীপ। এরপর মোহাম্মদ হাফিজ(৯) আর শোয়েব মালিককে শূন্য রানে ড্রেসিংরুমে ফেরালেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। সরফরাজ আহমেদকে(১২) ফেরালেন ফের বিজয় শঙ্করই। ৩৫ ওভার খেলার পরই ফের বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ থাকে। তখন পাকিস্তানের রান ছিল ৬ উইকেটে ১৬৬ রান। 

এরপর ডাক ওয়ার্থ লুইস নিয়ম প্রয়োগ করা হয়। সেখানে ৪০ ওভারে পাকিস্তানের টার্গেট দাঁড়ায় ৩০২। খেলা কমে আসে ৪০ ওভারে। ম্যাচ জেতার জন্য তখন ৩০ বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ১৩৬ রান। যা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় পাকিস্তানের সামনে। শেষ পর্যন্ত ৪০ ওভারে পাকিস্তান  ৬ উইকেট হারিয়ে ২১২ রান তোলে। ডাক ওয়ার্থ লুইস নিয়মে ৮৯ রানে জিতল টিম ইন্ডিয়া।

রোববার (১৬ জুন) ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে টস নামের ভাগ্য পরীক্ষায় জেতে পাকিস্তান। বৃষ্টির চোখ রাঙানিতে উইকেট ও আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে ভারতকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিংয়ের শেষ সময়ে, অর্থাৎ ৪৭ ওভারের দুই বল বাকি থাকতে বৃষ্টি নামায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তবে কৃষ্টি থামায় কয়েক মিনিট পর আবারও খেলা শুরু হয়।  

এদিন ব্যাট করতে নেমে শুরুটা সতর্কভাবে করলেও সময় বাড়ার সাথে সাথে ব্যাটিংয়ে ধার বাড়িয়ে দিয়েছেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। মোহাম্মদ আমির তার গতি দিয়ে চেপে ধরার চেষ্টায় সফল হলেও উইকেট নিতে পারেননি। ফলে দুই ওপেনারই তুলে নেন ফিফটি। বিধ্বংসী মেজাজে থাকা রোহিত মাত্র ৩৪ বলে ৬ চার ২ ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ভারতের পরের ফিফটি হয় আরও কম সময়ে; মাত্র ৪৫ বলে। রোহিতের চেয়ে একটু ধীরে খেলে ৬৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লোকেশ রাহুল।

২৪তম ওভারের ৫ম বলে ভারতের ওপেনিং জুটি ভেঙে দেন ওয়াহাব রিয়াজ। বাবর আজমের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেয়ার আগে রোহিতের সাথে ১৩৬ রানের জুটি গড়েন লোকেশ রাহুল। তিনি করেন ৭৮ বলে ৫৭ রান। রাহুলের বিদায়ের পর আরও বিধ্বংসী রুপে আভিভুত হন রোহিত শর্মা। তুলে নেন শতক। মাত্র ৮৫ বলে ৯টি চার আর ৩টি ছক্কায় সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ভারতের হিটম্যান' খ্যাত বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যান।

চলতি বিশ্বকাপে এটা তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ১২২ রান করেছিলেন রোহিত। সেঞ্চুরিকে ডাবলে রুপ দিতে ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৪০ রানেই থামতে হয়েছে ভারতীয় এই ওপেনারকে। দুর্দান্ত এক ডেলিভিরিতে ‌হিটম্যান খ্যাত বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেন হাসান আলী।  

চারে নেমে বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হন হার্দিক পাণ্ডিয়া। মোহাম্মদ আমিরের শিকার হয়ে বিদায় নেন মারকুটে এই অল-রাউন্ডার। এরপর ভারতীয় সমর্থকদের অবাক করে মাত্র ১ রান করে মোহাম্মদ আমিরের দ্বিতীয় শিকার হন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তখন ভারতের স্কোর ৩০৫। উইকেটে থাকা অধিনায়ক বিরাট কোহলি ৫১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে ফেলেছেন। ম্যাচের এই পর্যায়ে নেমে আসে বৃষ্টি।

বৃষ্টির থামার পর মাঠে নামেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি এবং বিজয় শঙ্কর। কিন্তু আবার আতঙ্ক ছড়ান আমিরা। এবার এই পাকিস্তানি পেসারের শিকার টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক। ৬৫ বলে ৭৭ রান করে আমিরের তৃতীয় শিকার বনে সাজঘরে ফেরেন বিরাট কোহলি।

আউট হওয়ার আগে নতুন রেকর্ড করে ফেললেন ভারত অধিনায়ক। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দ্রুততম ১১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। ৫৭ রান করলেই এই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতেন কোহলি। তিনি করেছেন ৭৭ রান।

এতদিন এই রেকর্ড ‘মাস্টার ব্লাস্টার’  শচীন টেন্ডুলকারের দখলে ছিল। তিনি ২৭৬ ইনিংস খেলে(২৮৪ ম্যাচ) এই নজির গড়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং এই তালিকায় এখন তৃতীয় স্থানে নেমে গেলেন। তিনি ২৮৬ ইনিংসে(২৯৫ ম্যাচে) এই রেকর্ড স্পর্শ করেছিলেন।

বাকি সময়ে আর কোনও উইকেট না হারিয়ে নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৩৬ রান সংগ্রহ করে ভারত। বিজয় শঙ্কর ১৫ এবং কুলদীপ যাদব ৯রান করে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানের হয়ে মোহাম্মদ আমির ১০ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট। এছাড়া ওয়াহাব রিয়াজ ও হাসান আলি ১টি করে উইকেট পেয়েছেন।  

ভারতীয় একাদশ: বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিজয় শঙ্কর, মহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক), কেদার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, ভুবনেশ্বর কুমার, কুলদীপ যাদব, ইয়ুজবেন্দ্র চাহাল এবং জসপ্রিত বুমরাহ।

পাকিস্তান একাদশ: সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক), ইমাম-উল হক, ফাখর জামান, বাবর আজম, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, ইমাদ ওয়াসিম, শাদাব খান, ওয়াহাব রিয়াজ, হাসান আলি এবং মোহাম্মদ আমির।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!