• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকস্থলীতে করে পাচার হচ্ছে ইয়াবা!


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯, ০১:৫৯ পিএম
পাকস্থলীতে করে পাচার হচ্ছে ইয়াবা!

ঢাকা : মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতায় কৌশল পাল্টেছে মাদক কারবারিরা। মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু-কিশোরদের। বড়দের পাশাপাশি এসব শিশু কিশোরের পাকস্থলীতে করে ইয়াবা আনছে ব্যবসায়ীরা। মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতেই মাদক ব্যবসায়ীরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে বলে জানান গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গেল বছরের মাঝামাঝিতে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ার পরই পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচারের কৌশল বেছে নেয় মাদক ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে বড়দের পাশাপাশি শিশু কিশোরদের পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচার করছে ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া আরো বেশকিছু পন্থা অবলম্বন করেছে মাদক কারবারিরা। বেশি টাকার লোভে মাদক ব্যবসায়ীদের এই ফাঁদে পা দিয়ে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। তবে মাদক ব্যবসায়ীদের নতুন এ কৌশলে আরো বেশি তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে একের পর এক অভিযানে ধরা পড়ছে মাদক পাচারের নিত্যনতুন কৌশল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচারের সময় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা জুবায়ের (২৫) ও মোবারক হোসেনের (২৪) পেট থেকে ১৬০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। রায়পুর থানার ওসি একেএম আজিজুর রহমান মিয়া জানান, ছোট ছোট পলিথিনে ৫০টি করে ইয়াবা পেঁচিয়ে সেটা স্কচটেপে মুড়ে খেয়ে ফেলত তারা। পলিথিন অপচনশীল হওয়ায় সেটা পেটে থেকে যেত। এভাবেই তারা ইয়াবা বহন করছিল। পরে বিশেষ পদ্ধতিতে তাদের পাকস্থলী থেকে পায়ুপথে ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো বের করা হয়।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকার বিসমিল্লাহ হাউজ নামে একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে বিল্লাল নামে একজনকে আটক করা হয়। স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিল্লালের পেটের ভেতরে ইয়াবার সন্ধান পাওয়া যায়। পরে সে পায়ুপথ দিয়ে পেটের ভেতরে রাখা দুই হাজার ২০০ পিস ইয়াবা বিশেষ কৌশলে বের করে দেয়। তার বাসায় তল্লাশি করে আরো ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। মাদক পাচারের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে বিল্লালের স্ত্রী ও ছেলেকেও আটক করে র্যাব।

এর আগে কুমিল্লায় পেটের ভেতর ইয়াবাসহ ৫ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। পরে নগরীর শাকতলা এলাকার মডার্ন হাসপাতালে এক্সরের মাধ্যমে তাদের পেটে ইয়াবা খনির সন্ধান পাওয়া যায়। নরম ছোট পলিথিনে মুড়িয়ে ক্যাপসুল বানিয়ে খেয়ে পেটের ভেতর বহন করে ইয়াবা পাচার করছিল ওই পাঁচ যুবক। একেকজনের পেটে ৩০টি করে ক্যাপসুল। কারো আবার ৬১টি। প্রতিটি ক্যাপসুলে ৫০টি করে ইয়াবা ট্যাবলেট। সব মিলিয়ে অন্তত ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব। টেকনাফ থেকে কুমিল্লায় পাচারের উদ্দেশে এসব ইয়াবা নিয়ে আসে তারা। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা এ কৌশলে ইয়াবা পাচার করে আসছিল। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় র্যাব।

মাদক ব্যবসায়ীদের নিত্যনতুন পন্থা যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ভেস্তে যাচ্ছে তখন ভিন্ন কৌশলে মাদক ব্যবসা সচল রাখতে এ কাজে শিশু-কিশোরদের পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচার শুরু করে। মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে শিশু কিশোরদেরও পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচারের কৌশল বেছে নিয়েছে একটি চক্র।

রাজধানীর মিরপুর ও বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে এই চক্রের দুই শিশুসহ আটজনকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি সামনে আসে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ইয়াবা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাবুবাজার ব্রিজের কাছে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কক্সবাজার থেকে পাকস্থলীতে করে ইয়াবা নিয়ে আসা দুই শিশুকে আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল মাদক কারবারিরা।

১৩ ও ১৪ বছরের ওই দুই কিশোর। নাম জসিম ও শাহজাহান। এই দুই কিশোরকে দেখে বোঝার উপায় নেই তাদের অপরাধের ধরন। অথচ এই দুই কিশোর তাদের পাকস্থলীতে বহন করছে হাজারের বেশি ইয়াবা। যা তারা বহন করে নিয়ে এসেছে দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে। দুজনকে নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে।

কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পুলিশ সুপার ডা. ইমদাদুল হক এক্সরে রিপোর্ট পরীক্ষা করে তাদের পাকস্থলীতে থাকা ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো শনাক্ত করেন। পরে দু’জনের পাকস্থলী থেকে পলিথিনে মোড়ানো ক্যাপসুল আকৃতির বস্তু বের করা হয়। শিশুর দুটির পেটে ছোট ছোট এমন ৯৫টি পুঁটলি। যার প্রতিটি ক্যাপসুলে ৫০টি করে সাড়ে চার হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়। এভাবে একজন ব্যক্তি প্রায় দুই হাজারের মতো ইয়াবা বহন করে পাকস্থলীতে। বিশেষ ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে পায়ুপথে তা বের করে মিরপুরে বিক্রি করা হতো বলে জানা গেছে।

সূত্র আরো জানায়, জসিম ও শাহজানের মতো আরো অনেকে দিনমজুরের বেশ ধারণ করে এই বিশেষ পদ্ধতিতে টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসে ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি বাসায়। সেখানে স্বপন নামের এক ব্যবসায়ীর হাত হয়ে তা বিভিন্নস্থানে সরবরাহের দায়িত্ব পড়ে লোকমান ও রঞ্জুর ওপর। পরে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে লোকমান ও রঞ্জুকে ইয়াবার চালানসহ আটক করে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ঢাকা কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী ও বিপণনকারী এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যারা ইয়াবা বিক্রি করত তাদেরকে আমরা গ্রেফতার করতে পেরেছি। আমাদের ধারণা বেশকিছু চক্র আছে যারা ভাড়া নিয়ে এভাবে ইয়াবা ব্যবসা করছে। ইয়াবা পাচারের এই কৌশলে শিশু-কিশোরদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!