• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাটপণ্য রপ্তানি : পাওনা ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১০, ২০১৯, ০২:০৭ পিএম
পাটপণ্য রপ্তানি : পাওনা ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা

ঢাকা : দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের কাছে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি বাবদ সুদ-আসলে বাংলাদেশের পাওনা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা আদায়ে অগ্রগতি হয়েছে।

এছাড়া সুদানের পাশাপাশি পাট রপ্তানি বাবদ ইরাকের কাছে দীর্ঘদিনের বকেয়া পাওনা ১৭২ কোটি কোটি টাকা আদায়ের বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য পাট এবং পাটশিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এ শিল্পের উন্নয়নে রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি বাবদ পাওনা আদায়ে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকার দেশ সুদান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকের কাছে পাট রপ্তানি বাবদ বড় অঙ্কের পাওনা আদায়ে বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে।

এ লক্ষ্যে সম্প্রতি বস্ত্র পাট মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সুদানের রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকের পাশাপাশি কূটনৈতিক পর্যায়েও এ পাওনা আদায়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে পাট রপ্তানির বকেয়া আদায়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

সুদানে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাবদ বকেয়া পাওনা আদায় প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলাদেশের খবরকে জানান, প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সুদানের কাছে বাংলাদেশের পাট রপ্তানি বাবদ বড় অঙ্কের বকেয়া পাওনা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সুদানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছি। সুদান এ পাওনা প্রদানে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, তবে বকেয়া পাওনার সুদ মওকুফ চাচ্ছে দেশটি। বিষয়টি নীতিনির্ধারক মহলের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।

এছাড়া ইরাকের কাছে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাবদ বাংলাদেশের বকেয়া পাওনা আদায়ের বিষয়ে সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা সম্প্রতি ইরাকের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাওনা পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইংও কাজ করছে বলে জানান তিনি।

এছাড়া কূটনৈতিকভাবে সুদান ও ইরাকের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে পাওনা আদায়ের প্রচেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে সচিব আরো বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য পাটপণ্যে আরো বৈচিত্র্য আনার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের জন্য পাট রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছি এবং এটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সুদানের কাছে রপ্তানি বাবদ দীর্ঘদিনের বকেয়া পাওনা আদায়ে জোরালো প্রচেষ্টা চলছে। তবে প্রেসিডেন্ট বশির আল হাসানের পতনের পর থেকে সুদানে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করায় বিষয়টির সুরাহা হতে বিলম্ব হচ্ছে। এর আগে পাওনা টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশকে তুলা বা তাদের দেশের অন্য কোনো পণ্য দেওয়ারও প্রস্তাব করেছিল দেশটি। তবে বকেয় পাওনা আদায়ের বিষয়টি অনেক জোরালো হয়েছে বলে সূত্র জানায়।

উল্লেখ্য, সুদানের কাছে ১৯৯২ সাল এবং তার পরের বছরগুলোতে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ।

এদিকে, রপ্তানির বকেয়া আদায়ের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিদ্যমান বাজারের পাশাপাশি ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিল, চিলি, আর্জেন্টিনা এবং আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে পাট ও পাটজাত পণ্যের নতুন বাজার সম্প্রসারেণে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এজন্য নতুন বাজার  সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ এবং পাটপণ্য বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্নমুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি অনেকাংশে বাড়বে এবং পাটের সুদিন ফিরবে বলে আশা করছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাট ও পাটজাত পণ্য একসময় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে শীর্ষস্থানে থাকলেও বর্তমানে এর অবস্থান তিন নম্বরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার পাশাপাশি গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন, উৎপাদন খরচ কমিয়ে পাট রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি রপ্তানি বাজার বৃদ্ধিতে ও সম্প্রসারণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া পাট রপ্তানিসংক্রান্ত বাজার গবেষণা, পরিসংখ্যান ও উন্নয়ন কাউন্সিল গঠন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

প্রসঙ্গত, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান, কোরিয়া, ইতালি, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, ইরাকসহ বিশ্বের ৫০টি দেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!