• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
বাড়ছে ভুয়া কাগজের চালক ও গাড়ি

পাঠাও-উবারে ঘটছে ভয়ংকর অপরাধ


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২৫, ২০১৯, ০২:৩৬ পিএম
পাঠাও-উবারে ঘটছে ভয়ংকর অপরাধ

ঢাকা : ভুয়া কাগজপত্রে শত শত চালক ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করে রাইড শেয়ারিং সেবা পাঠাও ও উবারে রাজধানীতে ট্রিপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এসব গাড়ির মাধ্যমে ভয়ংকর অপরাধ ও নাশকতার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পাঠাওয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, তাদের কোম্পানিতে এখন ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ি ও চালকের সংখ্যা শত শত। সম্প্রতি কিছু ঘটনায় তারা এগুলো টের পেয়েছেন।

জানা গেছে, দেশে তিন বছর ধরে চলছে রাইড শেয়ারিং সেবা। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই বিস্তার ঘটেছে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর। যানজট আর গণপরিবহন সংকটের কারণে পাঠাও ও উবারের মতো রাইড শেয়ারিংগুলো রাজধানীতে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেলেও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

পাঠাও-উবারে তিন বছরে ধর্ষণ, হত্যা ও যৌন হয়রানির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। বনানীর আলোচিত ধর্ষণ ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছিল উবারের গাড়ি। কিছুদিন আগে উবারে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। গত সপ্তাহে উত্তরায় পাওয়া যায় উবার চালকের গলাকাটা মরদেহ।

এদিকে পাঠাওয়ের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটছে প্রায়ই। পঙ্গু হচ্ছেন অনেকে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একেক সময় একেক ভাড়া দেখানোর অভিযোগ।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে এ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জেনেছি। তবে পাঠাও বা উবারের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি ভুয়া কাগজপত্রের গাড়ি বা চালক থেকে থাকে, সে ব্যাপারে অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব। এছাড়া রাস্তায় রাইড শেয়ারিংয়ের চালক ও গাড়ির ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, পাঠাও মোটরসাইকেলের কারণেই রাজধানীতে দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

এমন অবস্থায় ১ জুলাই থেকে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলাকে নিবন্ধনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে এর আগেই পাঠাওয়ে ধরা পড়ল ভুয়া কাগজপত্রের শত শত গাড়ি ও চালক।

গাড়ি চালানো ছেড়ে চুক্তিতে গাড়ি দেন গত বছর উবারের টপ-পার্টনার ড্রাইভার সাইফুল। এখন তিনি যোগ দিয়েছেন পাঠাওয়ে। তিনি জানান, তার মাধ্যমে নিবন্ধিত ৩৭৫ জন চালকের মধ্যে অর্ধশতাধিক ভুয়া। তবে পাঠাও শুরুতে এসব বিষয় চিহ্নিত না করায় এখন ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তিনি।

সাইফুলের গাড়ি ও চালক রেজিস্ট্রেশনের সময় পাঠাও কোনো ত্রুটি না ধরে এখন বলছে এগুলো ভুয়া। এতে পাঠাও চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ তার। প্রয়োজনে তিনি আইনি ব্যবস্থা নিতে চান।

ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, পাঠাও কারস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্নমানের ও পুরনো মডেলের কার দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় সেবা দিচ্ছে। এছাড়া প্রায়ই তাদের ভাড়ার হিসেবে ভুল আসে। একেক সময় একেক ভাড়া দেখানোর অভিযোগ রয়েছে উবারের বিরুদ্ধেও।

এতদিন এসব নিয়ে কোনো অভিযোগের নিষ্পত্তি করা যেত না। বিআরটিএ বলছে, নিবন্ধন হলে পাঠাও-উবারকে ডেকে এনে নিষ্পত্তি করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করার তাগিদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান।

তিনি বলেন, ‘উবার-পাঠাও রাজধানীতে কোনো নিবন্ধন ছাড়াই চলছে। তবে নীতিমালা এখন থেকেই কার্যকর হয়েছে। নিবন্ধনের পর কোনো অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ। এসব বিষয় দেখভালের জন্য বিআরটিএ পৃথক একটি সেল গঠন করেছে।’

পাঠাওয়ে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে চালক নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘পাঠাওকে তার সব গাড়ির নম্বর ও চালকদের তথ্য দিতে হবে। এরপর কোনো অনিয়ম পেলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে প্রায়ই রাইডিং শেয়ারে চলাফেরা করেন আহমেদ ইমতিয়াজ। তিনি জানান, অনেক সময় দেখা যায় পাঠাওয়ের অ্যাপে দেখানো গাড়ি নম্বরের সঙ্গে বাস্তবে আসা গাড়ির নম্বর মিলছে না। চালককে প্রশ্ন করা হলে বলেন, নম্বর আপডেট করা হয়নি। কিন্তু এটা যে কত ভয়ংকর, যখন কোনো অপরাধ ঘটবে, তখন বোঝা যাবে।

রাইড শেয়ারিং সেবা বিশ্লেষক মুরাদ শুভ জানান, পাঠাও দেশি কোম্পানি হলেও তারা এখন অনেকটা বিদেশি কোম্পানির মতো। বড় অপরাধ করে তারা অন্য দেশে গিয়ে ব্যবসা খুলে বসবে। এরই মধ্যে তারা প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাজার খুঁজছে। তারা শুরু থেকেই অবৈধভবে চলছে। রাইড শেয়ারিংকে পেশা হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাজধানীর যানজট বাড়িয়ে তুলেছে। রাইড শেয়ারিং না করে দিনভর ‘ট্রিপ মারা’ সার্ভিস চালাচ্ছে তাদের চালকরা।

‘এছাড়া ট্যাক্সিক্যাব রাইড শেয়ারিংয়ে চলার নিয়ম নেই। তমা ট্যাক্সিকে পাঠাও তাদের অ্যাপে চালাচ্ছে। এগুলো বিআরটিএ’র নিয়মবহির্ভূত কাজ,’ বলেন মুরাদ শুভ।

এ নিয়ে পাঠাওয়ের কোনো কর্মকতা বক্তব্য দিতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী হোসেন মো. ইলিয়াসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!