• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
শতবর্ষী বিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান

পানি পড়ছে শ্রেণিকক্ষে, ভিজে যাচ্ছে বই-খাতা


মো. আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি আগস্ট ২৮, ২০১৮, ১১:৪৯ এএম
পানি পড়ছে শ্রেণিকক্ষে, ভিজে যাচ্ছে বই-খাতা

ঝালকাঠি: জেলার কেবিআর রাজমহল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো চেহারার পরিবর্তন হয়নি শত বছরেও। বৃষ্টির পানি ছাদ চুইয়ে পড়ছে শ্রেণিকক্ষে, ভিজে যাচ্ছে বই-খাতা। কখনো চুন-সুরকি খসে পড়ছে শিক্ষার্থীদের মাথায়। ভাঙা দরজা-জানালা। অথচ ওই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কেওড়া ইউনিয়নের শিক্ষা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে তিনটি গ্রামের মধ্যস্থানে ১৯২৩ সালে তৎকালীন জমিদার যদুনাথ দত্ত বণিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনটি গ্রামের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে কেবিআর (কেওড়া, বেলদা খান ও রনমতি) রাজমহল ইনস্টিটিউশনের ২০০ ফুট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিদ্যালয়টি রেজিস্টেশন পায়। আটটি কক্ষে শুরু হয় প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান।

স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষিত ব্যক্তি ওই ইনস্টিটিশনে শিক্ষকতা করতেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরপরই প্রতিষ্ঠাতা ও জমির দাতারাও ভারতে চলে যান। এরপরই অর্থনৈতিক দৈন্যতা ও শিক্ষক সংকটে পড়ে বিদ্যালয়টি। সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠদান। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় কমে যায় শিক্ষার্থী সংখ্যাও।

বিদ্যালয়ে ভবনটিতে আটটি কক্ষ থাকলেও তার মধ্যে তিনটি কক্ষে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চলে পাঠদান। একটি কক্ষ ব্যবহার করা হয় শিক্ষকদের লাইব্রেরি ও অফিস হিসেবে। অন্য চারটি কক্ষ পরিত্যক্ত রয়েছে। ১৯৭৮ সালে ইনস্টিটিউট থেকে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় কেবিআর রাজমহল বিদ্যালয়টি। ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয় বিদ্যালয়টি।  এরপর গত বছর জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। পরিত্যক্ত ভবনের তিনটি কক্ষে ৭৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এখনো চলছে পাঠদান।

ঝালকাঠি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের এই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চারপাশে ঝোপ-ঝাড়-জঙ্গল। পিচঢালা মূল সড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথটি কাদায় পরিপূর্ণ। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরনো রাজ বাড়ির নকশায় তৈরি করা বিদ্যালয়ের নাম ফলক। শ্রেণিকক্ষগুলো স্যাতস্যাতে। ছাদের চুন-সুরকি খসে পড়ছে শিক্ষার্থীদের মাথায়। বৃষ্টি শুরু হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে ভিজে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা। জানালাগুলো ভেঙে গেছে। নেই পর্যাপ্ত আসবাবপত্র। সীমানা প্রাচীর না থাকায় গরু-ছাগল প্রবেশ করে বিদ্যালয় চত্বরে ও বারান্দায়।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা জানায়, প্রথম শ্রেণি থেকে টানা পাঁচ বছর এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে সে। অসংখ্যবার তার মাথায় চুন সুরকি পড়েছে। বৃষ্টির পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে গেছে। এখন আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ক্লাস করতে তার ভয় করে।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জাফর হাওলাদার জানায়, বিদ্যালয়ের দুরবস্থার কারণে গ্রামের অনেকেই অন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হচ্ছে। সে বিদ্যালয়ের একটি নতুন ভবন চায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাসান ইমাম বলেন, ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি থেকে জেলা সদর ১৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় দৈন্যদশা কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ে না। ভবনটি গত বছর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে কি করতে হবে সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস চালাতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা নতুন একটি ভবনের দাবি জানাচ্ছি, যাতে ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বিদ্যালয়টি টিকে থাকে। একইসঙ্গে পুরনো ভবনটি সংস্কার করে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরুর দাবি করছি।

ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি গত বছর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে নতুন ভবন দেওয়া হবে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!