• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাপমুক্তির সওগাত নিয়ে রমজানের দ্বিতীয় দশক শুরু


নিউজ ডেস্ক মে ৪, ২০২০, ০৮:২৮ পিএম
পাপমুক্তির সওগাত নিয়ে রমজানের দ্বিতীয় দশক শুরু

ঢাকা : মাহে রমজানের প্রথম দশকের নাম। গুনেগুনে রহমতের দশটা দিন চলে গেল এ বর্ষপঞ্জির রমজান হতে। আমাদের ভাগ্যদুয়ারে এলো মাগফিরাত। মাহে রমজানের মধ্যদশক শোভিত মাগফিরাতের আলোকসজ্জায়। এ দশক পাপমুক্তির সওগাত নিয়ে পুণ্যস্বরে ডাকছে আমাদের। হাদিসে নববির ঘোষণা, “আওসাতুহূ মাগফিরাহ” (রমজানের মধ্যদশক মাগফিরাতের)।

মাগফিরাত শব্দের অর্থ মাফ, ক্ষমা, মার্জনা প্রভৃতি। এ কথা অনস্বীকার্য যে, অহোরাত্র আমাদের অপরাধ-অন্যায়। সময়ের সাথে পাক্কা দিয়ে অবিরত আমাদের পাপচারিতার। গুনাহভরা আমলনামার নিষ্কলুষত্ব ফিরিয়ে আনার এ মহান সুযোগ। মহান দয়াময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়ার অপার আনুতোষিক।

মহান রাব্বুল আলামিন অনন্ত ও অসীম গফুর, গাফফার, দয়ালু ও রহিম, রহমান। বান্দার প্রতি তাঁর আযাব-গযবের চেয়ে ক্ষমা ও রহমতই প্রবল। গুনাহগারের গুনাহ বিমোচনে করেছেন বিবিধ ব্যবস্থা। পাপমুক্তি নিমিত্ত রেখেছেন অনেক উপায়-উসিলা। প্রিয়রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মমতায় রব্বে কায়েনাত তাঁর বান্দাদের জন্য মাহে রমজানকে নির্বাচন এবং এর মধ্যদশকে করেছেন মাগফিরাতে সজ্জিত। ইরশাদ হচ্ছে, “তোমরা নিজ পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ধাবিত হও। যার সীমানা আসমান-জমিন; যা তৈরি করা হয়েছে তাকওয়াবানদের জন্য।”

মধ্যদশক মাগফিরাত মনে হলেও এর পরিধি পুরো রমজান ব্যাপী। সমগ্র মাসজুড়ে ক্ষমা অবারিত। এ মাসের সম্মানে করুণার উৎস মহান আল্লাহ প্রতিদিন অসংখ্য বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। হাদিসে পাকেও এসেছে এ বিষয়ে চিত্তাকর্ষক বর্ণনা। সাহাবিয়ে রসুল সায়্যিদুনা হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, উম্মতের কান্ডারি প্রিয় হযরত সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও একাগ্রতা সহকারে একান্ত পুণ্যের প্রত্যাশায় মাহে রমজানের রোজা পালন করবে, তার অতীত জীবনের সমুদয় গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি রমজানের রাতে (তারাভিহর) নামাজে দাঁড়াবে, তার পূবের পাপরাশি মিটিয়ে দেয়া হবে।”

কুপ্রবৃত্তির তা তাড়নায় পাপাক্লিষ্ট বান্দা যখন আল্লাহ রাব্বুল ইযযাতের দরবারে এ রোজার মাধ্যমে উপস্থিত হয়, তখন ক্ষমার মহাসাগরে তরঙ্গ উঠে দয়া-অনুকম্পার। ঐশীগ্রন্থ আল-কুরআনের ঘোষণা, “হে রসুল (দ.) আপনি বলুন-হে আমার ওই বান্দাগণ! যারা নিজেদের আত্মার প্রতি অবিচার করেছো, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু।”

মধ্যবর্তী দশককে মাগফিরাত ঘোষিত হয়েছে-এটা বিশেষ বোনাস। এর পাশাপাশি করুণাময় আল্লাহ বিবিধ অবকাশে স্বীয় করুণায় অসংখ্য বান্দার পাপের পর্বত বিধ্বস্ত করে দেন। বিভিন্ন হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে-হুজুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অমীয় বাণী, যে কেউ এ মাসে কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, তা হবে ঐ ব্যক্তির পাপমোচন ও জাহান্নাম-মুক্তির হাতিয়ার। একই হাদিসে অনুরূপভাবে এও উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধীনস্থ দাসদাসীদের দায়িত্ব কমিয়ে দেবে, আল্লাহ রাব্বুল ইযযাত তাকে ক্ষমা করবেন এবং দান করবেন জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ।”

মাহে রমজানের মাঝের দশদিন মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রাপ্তির বিশেষ যোগ আমাদেরকে ব্যাপকরূপে আশান্বিত করে রাখে। এ দশকে ক্ষমা লাভের অবকাশ রয়েছে অধিকতর। তাই আমাদের এমনভাবে সিয়ামসাধনা ও ইবাদতের পসরা সাজাতে হবে, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা আকর্ষণ করে। একান্ত মনে এটাও কামনা করি যে, আল্লাহ যেন আমাদের পাপপঙ্কিলতা বিধৌত করে আমাদেরকে নিষ্পাপ করেন। আরো যেন করেন তাঁর নৈকট্যভাজান।

যে কথা না বললেই নয়, আমরা ক্ষমা চাইতে যতটা আগ্রহী এবং উদ্যমী হই, কিন্তু ক্ষমা বা মার্জনা ততো সহজেই করতে উদারনীতি অবলম্বন করতে পারি না। এ যেন আমাদের আত্মিক সীমাবদ্ধতা। দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা। প্রবাদ বলছে, যেমন কর্ম তেমন ফল। আমরা নিজেরা উদারতা প্রদর্শন করতে না পারলে উদারতার উপঢৌকনের আশা করা বাতুলতা বৈকি। অথচ রাব্বুল আলামিনের ক্ষমার ঔদার্য সৃষ্টিজগতের চেয়েও বিশাল।

পরিশেষে, আল্লাহর প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফরমানের মতে, পুণ্যেভরা মহিমান্বিত মাহে রমজানের মধ্যদশকের মাগফিরাত কামনা ও এর জন্য পাথেয় সংগ্রহে আমাদের ব্রতী হওয়া সমীচীন।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!