• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
রিমান্ডের পঞ্চম দিন

পাপিয়াকাণ্ডে নতুন করে নাম এলো এমপি সাবিনা আক্তারের


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২, ২০২০, ১২:৫৬ পিএম
পাপিয়াকাণ্ডে নতুন করে নাম এলো এমপি সাবিনা আক্তারের

ঢাকা : যুব মহিলালীগের সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া রিমান্ডে একের পর এক চাঞ্চল্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে ১৫ দিনের রিমান্ডে আছেন তিনি। ইতোমধ্যে পাপিয়ার উত্থান ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার পেছনে নরসিংদী ও ঢাকার বর্তমান ও সাবেক তিন সাংসদের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের মধ্যে পাপিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে ঢাকার সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সাংসদ সাবিনা আক্তারের (তুহিন), বলছে দলটির নেতা-কর্মীরা।

এই নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এরইমধ্যে পাপিয়ার উত্থান, আশ্রয়-প্রশ্রয়সহ অপরাধজগতের সম্পর্কে জানতে সাবেক এই নারী সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ।

এ অবস্থায় এখনই ওই নারী সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, সাবেক নারী সাংসদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন পাপিয়া। শুধু তাই নয়, পাপির সঙ্গে এমপি তুহিনের ছবি ও সেই ছবিতে একটি প্যাকেট তুলে দেয়ার দৃশ্যইও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ওই প্যাকেটে টাকা না অন্য কিছু ছিল তা জানা যায়নি।  

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পাপিয়ার বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলা এখন তদন্ত করছে। তবে র‍্যাব এসব মামলা তদন্ত করার জন্য অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবেক সাংসদ সাবিনা আক্তার তুহিনের আশ্রয়–প্রশ্রয়ে ক্ষমতার দাপট দেখানোর পাশাপাশি বেপরোয়া জীবন যাপন করতেন পাপিয়া।

মূলত তাঁর মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও কয়েকজন সাংসদের সঙ্গে পরিচয় ও সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন পাপিয়া। নরসিংদীর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও তদবির–বাণিজ্যের পেছনেও তিনি ওই সাংসদের পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটাতেন।

নরসিংদীর একটি পোশাক কারখানায় গ্যাস–সংযোগ এনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কারখানা মালিকের কাছ থেকে কোটি টাকা নেওয়ার তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া।

এ ছাড়া পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে কিছু প্রার্থীর কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পাপিয়া ও তাঁর স্বামী। সেই নিয়োগের ব্যাপারে তদবির করেছিলেন ওই সাংসদ।

অভিযোগের বিষয়ে সাবেক সাংসদ সাবিনা আক্তার তুহিন একটি সংবাদ মাধ্যমকে মুঠোফোনে বলেন, পাপিয়ার অপরাধজগতের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি পাপিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসাও নেই। একটি মহলের প্রভাবিত হয়ে পাপিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, ১৪ মাস ধরে পাপিয়ার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার মুখোমুখি হয়ে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে চান তিনি। তবে দলের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে পাপিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি, এটি অপরাধ হয় কীভাবে?

জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কাজ, অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে পাপিয়া, তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমনসহ চারজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।

শনিবার ছিল রিমান্ডের পঞ্চম দিন। পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা অবস্থায় বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন। ধরা পড়ার পর তাঁকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া স্বীকার করেছেন, বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মালিককে আটকে রেখে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছিলেন।

নরসিংদীতে পাপিয়ার বাড়িতেই তাঁকে তিন দিন আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে কয়েকজন নারীর সঙ্গে তাঁকে আপত্তিকর ছবি তুলতেও বাধ্য করা হয়েছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে পাওয়া টাকা পাপিয়া সাধারণত ঢাকায় নিজের বিভিন্ন বাসায় রাখতেন। এর মধ্যে র‍্যাব ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা উদ্ধার করে।

তাঁর স্বামী সুমন নরসিংদীর নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিবির (উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পাপিয়ার অপরাধ কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে কারা, আসল সত্য কী তা উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!