• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোম্পানি গঠন হবে

পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নীতি অনুমোদন


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ০৩:১২ পিএম
পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নীতি অনুমোদন

ঢাকা : পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘তেজস্ক্রিয়া বর্জ্য এবং ব্যবহূত পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক জাতীয় নীতি’র খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন একটি কোম্পানি গঠনের বিধানও রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল আইন ও বাংলাদেশ বাতিঘর আইন, ২০১৯-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ তথ্য জানান। এর আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকের বৈঠকে তিনটি আইনের মধ্যে দুটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর একটির খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে ‘তেজস্ক্রিয়া বর্জ্য এবং ব্যবহূত পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক জাতীয় নীতি’-এর খসড়ার অনুমোদনের ফলে কীভাবে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে সেটা এই নীতিমালায় উল্লেখ আছে। যেসব দেশ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি সংগ্রহ করা হবে সেসব দেশেই ফেরত পাঠানো হবে ব্যবহূত পারমাণবিক জ্বালানি। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বর্জ্য চুক্তি অনুযায়ী এই বর্জ্য নিয়ে যাবে রাশিয়া। তারাই সে দেশে নিয়ে এগুলো ধ্বংস করবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, পারমাণবিক জ্বালানির পরিমাণ যুক্তিসংগতভাবে সীমিত রাখতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ জ্বালানি সিল করা বাক্সে সংরক্ষণসহ পরমাণু চুল্লির রি-অ্যাক্টর কোরের পরিচালন সময়কালের মধ্যে যেকোনো সময় আনলোড করতে হবে। এমন সম্ভাবনা বিবেচনা রেখে ব্যবহূত জ্বালানি সংরক্ষণ স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাতে কমপক্ষে ১০ বছর ব্যবহূত জ্বালানি সংরক্ষণ করা যায়। এটা যারা করবে তাদের জন্য বাইন্ডিং।

শফিউল আলম বলেন, আমরা যে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করি, এগুলোর মধ্যেও সীমিত পরিসরে এটমিক এনার্জি ব্যবহার করা হয়। এগুলোর জন্য অত বড় কিছু করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু একসময় প্রয়োজন হবে। এ জন্য আগে থেকে নীতিমালাটি করা হয়েছে। এই নীতিমালা সব সেক্টর কাভার করবে। এ ক্ষেত্রে লিড মিনিস্ট্রি হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, আমাদের দেশে পাবনার রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) আওতায়। আইএইএর গাইডলাইন অনুযায়ী, এগুলো পরিচালিত হবে। এটমিক এনার্জি যেহেতু একটি স্পর্শকাতর ও বিপজ্জনক এনার্জি। এটাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা গাইডলাইন দরকার।

রূপপুরে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটার যে বর্জ্য তা চুক্তি অনুযায়ী সরাসরি রাশিয়া, ডিসপোজ (ধ্বংস) করবে। এটা আমরা করব না।

ওনাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে যেহেতু তাদের বিশাল দেশ, ডিসপোজালের অনেক জায়গা আছে, আমাদের ওরকম জায়গা নেই, আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা। চুক্তিতেই বলা হয়েছে, (পারমাণবিক বর্জ্য) তারা সিল করে নিয়ে যাবে এবং ওখানে নিয়ে ডিসপোজাল করবে।

তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন একটা এজেন্সি নিয়োগ করবে। এটার নাম হলো তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, অর্থাৎ আরডব্লিউএমসি নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করবে।

এদের বিশেষজ্ঞ থাকবে, তারাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পন্ন করবে। সারা বাংলাদেশে যত এটমিক এনার্জির বর্জ্য পাওয়া যাবে সেগুলো ব্যবস্থাপনা তারা করবে। নীতিমালায় পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ রয়েছে বলে জানান শফিউল আলম।

তিনি বলেন, আইএইএর যে গাইডলাইন আছে সেটার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সে অনুযায়ী, এই নীতিমালাটা তৈরি করা হয়েছে।

শফিউল আলম আরো বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী-গবেষণা চুল্লি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট অপারেশন, চিকিৎসা শিল্প, খনিজ সম্পদ আহরণ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা, প্রশিক্ষণ বা বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উৎপাদন ও ব্যবহার হয়। এসব ক্ষেত্রে এটমিক এনার্জি ব্যবহার করা হয়, আমরা হয়তো খবর রাখি না।

এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সভায় ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল আইন-২০১৯’ এবং ‘বাংলাদেশ বাতিঘর আইন-২০১৯’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কাজগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন, গবেষণায় পাওয়া ফলাফল বাণিজ্যিকীকরণসহ আমদানি করা প্রযুক্তি গ্রহণ, আত্তীকরণ ও অভিযোজনের জন্য প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে একটি প্রকৌশল কাউন্সিল গঠনের লক্ষ্যে এই আইনের প্রয়োজন রয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ বাতিঘর আইন এত দিন ১৯২৭ সালের আইন দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছিল। বাংলাদেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ এই বাতিঘর পরিচালনা করে থাকে। জাহাজ আগমন এবং প্রত্যাগমনের সুবিধার্থে বাতিঘর পরিচালিত হয়। জাহাজ আগমন এবং প্রত্যাগমনের ক্ষেত্রে জাহাজ কর্তৃপক্ষকে বাতিঘর মাশুল পরিশোধ করতে হবে।

মাশুল কত হবে, তা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হবে। যে জাহাজ বাতিঘর মাশুল দেবে না, ওই জাহাজকে এ আইনের বলে আটক করা যাবে। তবে মাশুল পরিশোধ করলে জাহাজ ছেড়ে দেওয়া হবে।

এসব আইন অনুমোদনের পাশাপাশি গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে দক্ষিণ আমেরিকার মার্কোসাভুক্ত বাণিজ্যিক জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীর এ জোটভুক্ত দেশ- ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে সফর এবং দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়নের আলোচনার বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদে অবহিত করা হয়। পাশাপাশি দেশের রেল সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি রেলমন্ত্রীর চীন ও ভারত সফরের বিষয়টিও গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অবহিত করা হয়।

এ ছাড়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননা, ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ অর্জন করায় মন্ত্রিপরিষদ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!