• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পার্কিং নীতিমালা করছে সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৯, ২০২০, ০৩:১৩ পিএম
পার্কিং নীতিমালা করছে সরকার

ঢাকা : রাজধানীতে পার্কিং একটি বড় সমস্যা। তীব্র যানজটের জন্যও পার্কিং দায়ী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকাসহ সারা দেশে যে হারে গাড়ি বাড়ছে ঠিক সেই হারেই বাড়ছে যত্রতত্র পার্কিং। এমনও দেখা যায় রাস্তার অর্থেক অংশ পার্কিংয়ের দখলে। অলিগলির ক্ষেত্রে চিত্রটি আরো ভয়াবহ। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার এই প্রথম দেশে পার্কিং নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে।

সরকার প্রস্তাবিত ওই নীতিমালায় অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শহরের ভেতরে স্থানভেদে একেক ধরনের পার্কিং ফি নেওয়া হবে। আর এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে ইজারা ব্যবস্থার মাধ্যমে।

রাজউক, সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের এলাকার পার্কিং স্থান চিহ্নিত করে তা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

তাছাড়া মানুষ যাতে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও এয়ারপোর্টে গাড়ি রেখে ভ্রমণ করতে পারেন এবং ভ্রমণ শেষে ফের গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যেতে পারে সেজন্য ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত নীতিমালায়।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ নীতিমালাটি নিয়ে এখন জনমত যাচাই শুরু করেছে। এরপর এটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে তা মন্ত্রিসভায় ওঠানো হবে। পরে গেজেট আকারে পাসের দিন থেকে তা কার্যকর করা হবে। নীতিমালাটি অনুমোদন পেলে প্রথম পর্যায়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলা এলাকা এর আওতাভুক্ত হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ছুটির দিন এক ধরনের পার্কিং ফি ও ব্যস্ততম দিনে আরেক ধরনের পার্কিং ফি আদায়ের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়, পার্কিং  স্থানসমূহকে থার্মোপ্লাস্টিক পেইন্টের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে। খেলাধুলার স্থান, পিকনিক স্পটে রাস্তার উভয় পাশে ডিটিসির অনুমোদন নিয়ে পার্কিং করা যাবে। এক্ষেত্রে পার্কিং ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা দক্ষ করতে হবে।

এ ছাড়া পার্কিং ফি আদায়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগের মাধ্যমে গাড়ির ধরন চিহ্নিতের কথা বলা হয়।

রাস্তার ওপর দীর্ঘমেয়াদি পার্কিংকে এই নীতিমালায় অনুৎসাহিত করা হয়েছে। আবার অফপিক সময়, ছুটির দিন এবং রাত্রীকালীন পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে ডিসকাউন্টের কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া পার্কিং ফি নির্ধারণে কোনো একক কৌশল বাদ দিয়ে শহরের একেক স্থানে একেক রকম ফি নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এরই মধ্যে প্রায় ১৯টি জায়গা চিহ্নিত করে পার্কিং ইজারা দিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩ টি অনস্ট্রিট পার্কিং স্থান রয়েছে। তবে অপরিকল্পিতভাবে এসব অনস্ট্রিক পার্কিং চিহ্নিত করে ইজারা দেওয়ায় সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভ রয়েছে।

এদিকে পার্কিং নীতিমালা হলে সিটি করপোরেশনকে পার্কিং স্পট নির্ধারণের জন্য অনুমতি নিতে হবে ডিটিসিএ কর্তৃপক্ষের। ডিটিসিএ বলছে, তারা পরিবহন বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের পরামর্শে পার্কিং স্পট অনুমোদন দেবে।

বনানীর বাসিন্দা ইমতিয়াজ কাশেম জানান, গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সামনে ছুটির দিন ছেলেমেয়েরা গাড়িতে করে খেলতে আসে। তাদের বহনকারী গাড়ি থেকে পার্কিং ফি নিয়ে শিশুদের খেলাধুলায় অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এমনিতেই ছুটির দিনে পার্কিং ফ্রি করা হয়েছে। কিন্তু এখানে হচ্ছে উল্টোটা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুরা হেঁটে খেলতে আসবে। গাড়ি নিয়ে আসবে কেন? গাড়ি নিয়ে এলে পার্কিং ফি দিতে হবে।’

গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে ছেলেকে নিয়ে খেলতে আসা এক অভিভাবক বলেন, ‘মেয়র কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছেন। শিশুদের হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে আসার উপযোগী রাস্তা করেননি।

তিনি কীভাবে বলেন, শিশুরা হেঁটে বা সাইকেলে আসবে খেলতে আসবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজধানীর ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা রাখার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) চিঠি দিয়ে বলেছি।

কিন্তু বাস্তবে দেখছি, পার্কিং রাখা হচ্ছে না। এজন্য মানুষ বাধ্য হয়ে সড়কে গাড়ি পার্কিং করে। যানজট তৈরি হয়। ভবনের পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নীতিমালা হলে তার এনফোর্সমেন্টের দিক পুলিশ সক্রিয়ভাবে দেখবে।’

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান জানান, নীতিমালা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তারা মতামত আহ্বান করেছেন। এরপর জন মতামত বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়ে তা চূড়ান্ত আকারে পাঠানো হবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যেই নীতিমালাটি অনুমোদন হবে বলে আশা করেন ডিটিসিএর এই কর্মকর্তা।

ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, প্রত্যেক উন্নত শহরে পার্কিং পলিসি আছে, যা এখনো আমাদের নেই। গাড়ির চাপ ও যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে যানজট বাড়ছে। এর সমাধানে নীতিমালার খসড়া করা হয়েছে। শিগগির তা চূড়ান্ত করা হবে।

রাজউকের মেম্বার (উন্নয়ন) মেজর (অব.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ভবনগুলোতে নকশা অনুযায়ী পার্কিং ব্যবস্থা রাখার কথা। কিন্তু অনেকে অর্থের লোভে পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান তৈরি করে। আমরা প্রায়ই এসব ভবনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। এটা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। গুলশান ও হাতিরঝিলে দুটি পার্কিং বানিয়েছি। এ ছাড়া আরো কিছু পার্কিং তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!