• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জোগান দেয় ‘পাশের দেশের’ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা

পাহাড়ে ভারী অস্ত্রের মজুত


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৫, ২০১৯, ০৬:২৪ পিএম
পাহাড়ে ভারী অস্ত্রের মজুত

ঢাকা : পার্বত্য তিন জেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়ছে। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতায় সাতজনের পর গত বুধবার আবারো একজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। উগ্র বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একের পর এক হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে।

সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনাতি বিপন্ন হচ্ছে পাহাড়ি জীবন। বিভিন্ন গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে এসব অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। তবে এসব অস্ত্র কোথা থেকে আসছে তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ‘পাশের দেশের’ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশের পাহাড়ে অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বর্তমানে চারটি সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয়। জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), জেএসএস (সংস্কার), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফোরাম (ইউপিডিএফ) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। এদের হাতে সাধারণ মানুষ এখন জিম্মি। এরা আধিপত্য বিস্তার, হত্যা, সন্ত্রাস, অপহরণ ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আসছে। পাহাড়কে অশান্ত করতে তারা প্রায়ই হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হচ্ছে।

র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহম্মদ সাংবাদিকদের জানান, গত ১৮ মার্চ রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী দায়িত্ব শেষে ফেরার পথে গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জন নিহত হওয়ার পর ওই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বান্দরবান সীমান্তে গা-ঢাকা দেয়- এমন খবর ছিল যৌথ বাহিনীর কাছে। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে এসএমজি ও একে-৪৭ রাইফেলের গুলির খোসা উদ্ধার হয়েছিল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছর ১৯ আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতিসহ নিহত হয় ৭ জন। এর আগে ১৩ জুলাই খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন।

একই দিন খাগড়াছড়ির আলুটিলায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ইউপিডিএফ কর্মী জ্ঞানেন্দু চাকমার লাশ নিতে এলে তারই ছোট ভাই কালায়ন চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। আগের দিন জ্ঞানেন্দু চাকমা নিহত হন। এই ঘটনায় জেএসএসপন্থিদের দায়ী করে ইউপিডিএফ। গত ৩ মে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তি চাকমাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা ২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে গঠিত নতুন দলে যোগ দেন। ৪ মে শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়ে পথে সশস্ত্র হামলায় নিহত হন ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা, একই দলের নেতা সুজন চাকমা, সেতুলাল চাকমা ও টনক চাকমা। তাদের বাঙালি গাড়িচালক সজীবও নিহত হন ওই সন্ত্রাসী হামলায়। ওই ঘটনার মাস তিনেক আগে নিহত হয়েছেন ইউপিডিএফের ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি মিঠুন চাকমা।

এদিকে গত বছরের ১৮ এপ্রিল রাঙামাটি সদর উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় একটি গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে এসএমজি ও অ্যাসল্ট রাইফেলসহ পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি লামা থেকে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২০০০ গুলিসহ চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।

সম্প্রতি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি পাহাড়ের কূপে পাওয়া গেছে ৬৩৩ রাউন্ড  ছোট-বড় আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি, ৫৪টি বিমান বিধ্বংসী গোলা আর একটি মেশিনগানের ব্যারেল। ওই পাহাড়ের উপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরিত্যক্ত ঘর ও বালির বস্তা দিয়ে তৈরি নিরাপত্তা বাঙ্কারের আলামতও পাওয়া গেছে। ওই পাহাড়ের পূর্বদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বহু পরিত্যক্ত বাড়িঘর পাওয়া গেছে।

এর আগেও র‌্যাব ওই পাহাড় থেকে চারটি মেশিনগান, একটি রকেট লঞ্চার, মেশিনগানের পাঁচটি ব্যারেল, ২২২টি কামানের গোলা ও তা ছোড়ার কাজে ব্যবহারের ২৪৮টি চার্জ এবং বিভিন্ন ধরনের ২৫ হাজার গুলি উদ্ধার করে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, যে স্থানটিতে এই গোলাবারুদ পাওয়া গেছে তা এক সময় অল ত্রিপুরা টাইগার্স ফোর্সের (এটিটিএফ) আস্তানা ছিল বলে মনে করা হয়। এটিটিএফ ছাড়াও রাঙামাটি খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ভারতের উলফাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগসাজশ রয়েছে। তারাই বাংলাদেশের পাহাড়ে আগ্নেয়াস্ত্রের জোগান দেয়।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, র‌্যাব-পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে। সেখানে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপের সদস্যরা পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলে বসবাস করে। ওইসব স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পৌঁছাতে অনেকটা বেগ পেতে হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাসীদের ডেরায় পৌঁছার আগেই তারা খবর পেয়ে যায়। কারণ তারা বিভিন্ন পয়েন্টে লোক সেট করে রাখে। তবু পাহাড়ি জনপদকে শান্ত রাখার লক্ষ্যে সেনা, পুলিশ ও র্যাব আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!