• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিটিয়ে শাশুড়িকে বিয়ে করতে বাধ্য করলেন সালিশের সমাজপতিরা


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি অক্টোবর ১৯, ২০১৯, ০২:৪৫ পিএম
পিটিয়ে শাশুড়িকে বিয়ে করতে বাধ্য করলেন সালিশের সমাজপতিরা

ঢাকা: সম্প্রতি সালিশ বৈঠকে পিটিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে একই সময়ে শাশুড়িকে বিয়ে করতে বাধ্য করে সালিশির সমাজপতিরা। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ঘটনাটি ঘটেছে। আর এ নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।

১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইনে একই দিনে তালাক ও বিবাহ দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য।

ইসলামী বিধানে শাশুড়িকে বিয়ে করা হারাম বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল কওমি ওলামা পরিষদ। সালিশের সমাজপতিরা বিয়ের নামে অনাচার ও ইসলামের বিধানকে অবজ্ঞা করেছেন বলে অভিমত তাদের।

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের একটি গ্রাম কড়িয়াটা। এ গ্রামের নিতান্তই দরিদ্র নরু মিয়ার মেয়ে নূরন্নাহারের সাথে চলতি বছরের আগস্ট মাসের ৯ তারিখে দায়সারাভাবে এক লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় আরেক হতদরিদ্র ধনবাড়ি উপজেলার মৃত হাজরাবাড়ীর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে মোনছের আলীর। বিয়ের কিছু দিন পর দাম্পত্যকলহ দেখা দেয় তাদের মধ্যে।

বিয়ের দেড় মাসের মাথায় চলতি মাসের শুরুর দিকে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান শাশুড়ি। গত ৮ অক্টোবর সকালে স্ত্রী ও শাশুড়িকে সাথে নিয়ে শশুর বাড়ি কড়িয়াটাতে আসেন মোনছের। এসময় স্ত্রী নূরন্নাহার জানান স্বামীর সংসার আর করবেন না তিনি। আর তা নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য গ্রামবাসী সালিশি বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে মেয়ে সংসার করবেন না বললে রাগে মা বলে ওঠেন তুই না করলে আমি করবো। আর এতেই মেয়ে ও সমাজপতিরা অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে স্বামী ও শাশুড়িকে বেদম প্রহার করেন। এরপর শশুরকে দিয়ে শাশুড়ি এবং তাকে দিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন তারা। পরে একই বৈঠকে কাজী গোলাম মওলা জিন্হা মোনছেরকে দিয়ে শাশুড়িকে নিকাহ রেজেস্ট্রি করান।

ঘটনার পর থেকেই সমালোচনা ও লোকলজ্জার ভয়ে এলাকা ছাড়া রয়েছেন মোনছের ও তার শাশুড়ি। মারপিট করে বিয়ে পড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়েছেন মোনছেরের বৃদ্ধা মা।

নূরন্নাহারের মা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন তিনি।

এমন ঘটনার শিকার নূরন্নাহারকে পাওয়া যায়নি নিজ বাড়িতে। ভাঙা ঘরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে অন্যের বাড়িতে থাকছেন তিনি। স্বামী শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এছাড়া অন্যদের প্রতি তার কোনো অভিযোগ নেই জানিয়ে ঘটনার জন্য মাকে দুষছেন তিনি।

অন্যদিকে সংবাদ সংগ্রহের খবর পেয়ে এলাকা ত্যাগ করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদার। ক্যামেরা দেখে পলায়নরত অভিযুক্ত কাজীকে অনেক চেষ্টার করে ক্যামেরার মুখোমুখি করা হয়। সারাদিন অপেক্ষা করে চেয়ারম্যানকে হাজির করা না গেলেও আরেক হোতা ইউপি সদস্য নজরুলকে হাজির করা হয়। তারা ঘটনার জন্য দায় চাপাচ্ছেন চেয়ারম্যানের উপর।

আইন অনুযায়ী ৯০ দিন অতিবাহিত না হলে কোনভাবেই তালাক ও বিয়ে কার্যকর হয় না। এখানে যা করা হয়েছে তা দণ্ডনীয় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে আইনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন সরকারি কৌশলী। ধর্মেও শাশুড়ির সঙ্গে বিয়ে হারাম হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। তাই ধর্মীয় বিচারে এ বিয়ে অনাচার। যারা তা লঙ্ঘন করেছেন তারা ধর্মকে অবমাননা করেছেন বলে দাবি করেছেন টাঙ্গাইল জেলা আদালতের সরকারি কৌশলী এস আকব খান ও টাঙ্গাইল কওমি ওলামা পরিষদের সহ-সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম।

এ ঘটনা সম্পর্কে অবগত থাকলেও আইনের বাধ্যবধকতা ও কোনো প্রকার অভিযোগ না থাকায় আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলাম। সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এসএস

Wordbridge School
Link copied!