• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
ফিরে দেখা

পিলখানা ট্র্যাজেডির ১০ বছর


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯, ০৫:২৩ পিএম
পিলখানা ট্র্যাজেডির ১০ বছর

ঢাকা : আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। সীমাহীন বেদনা জাগানিয়া এক দিন। দেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে দিনটি। ২০০৯ সালের এইদিনে রাজধানীর পিলখানায় ঘটেছিল বিডিআর বিদ্রোহ। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্রোহ ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞের দশ বছর পূর্ণ হলো আজ। বিদ্রোহের এক পর্যায়ে বাহিনীর সব নিয়মকানুনকে উপেক্ষা করে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে বিদ্রোহী জওয়ানরা। ঘটনার ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দিবসটি পালন উপলক্ষে এবারো বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় দায়ের দুটি মামলার বিচার হাইকোর্টে সম্পন্ন হয়েছে ২০১৮ সালের নভেম্বরে। রায়ে ১৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন বহাল আছে ১৮৫ জনের এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রয়েছে ২০০ জনের। খালাস দেওয়া হয় ৪৫ জনকে। এখন ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আপিল চলছে মামলা দুটির।

এর আগে বিচারিক আদালতে এ দুটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সেই রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ১০ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২৫৬ জনকে। খালাস দেওয়া হয় ২৭৮ জনকে।

নিম্ন আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এসবের ওপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০তম দিনে, ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। হাইকোর্টে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দুই দিনে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

এদিকে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনা পরিকল্পিত ছিল উল্লেখ করে এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, সরকার ও সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই একটি চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছিল।

রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জানান, বিচারিক আদালতের পর হাইকোর্টে মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ায় এখন বিচারের সর্বোচ্চ ধাপ আপিল বিভাগেই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। তাই সবার সজাগ দৃষ্টি রয়েছে সেদিকেই।

বিচার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া আসামিদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা হয়েছে। আপিল বিভাগের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী শিকদার বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাই ছিল বিডিআর বিদ্রোহের উদ্দেশ্য। ওই ঘটনা সুপরিকল্পিত ছিল বলে দাবি করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ। ওই সময় কেন পাল্টা হামলার নির্দেশ দেওয়া হলো না এমন সমালোচনারও ব্যাখ্যা দেন বিশ্লেষকরা। বিডিআর বিদ্রোহ আর একাত্তর কিংবা পঁচাত্তরের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলেও মনে করেন অনেকে।

এদিকে পিলখানা ট্র্যাজেডির দশ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ পরিবারগুলোতে এখনো কান্না থামেনি। আপনজন হারানোর যন্ত্রণা প্রতিটা মুহূর্তে তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাদের। সেই দিনের ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরা আজো ভুলতে পারেননি। তাদের একটাই প্রশ্ন- কী অপরাধ ছিল সেনা কর্মকর্তাদের?

এদিকে আজ পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় পিলখানাসহ বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন; বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।

ফিরে দেখা : ২০০৯ সালের এইদিন সকাল ৯টা ২৭ মিনিটের দিকে বিডিআরের বার্ষিক দরবার চলাকালে দরবার হলে ঢুকে পড়ে একদল বিদ্রোহী জওয়ান। এদের একজন তৎকালীন মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা। বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর-বীভৎস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। চারটি প্রবেশ গেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশপাশের এলাকায় গুলি ছুড়তে থাকে।

বিদ্রোহীরা দরবার হল ও এর আশপাশ এলাকায় সেনা কর্মকর্তাদের পাখির মতো গুলি করতে থাকে। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়েন মেধাবি সেনা কর্মকর্তারা। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হয়। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। পরে পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। পিলখানার ধ্বংসযজ্ঞ দেখে সারা দেশের মানুষ হতবাক হয়ে যায়। ৩৬ ঘণ্টার এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, এক সৈনিক, দুই সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ বিজিবি সদস্য ও ৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।

পিলখানায় এই বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়। শুরু হয় বিডিআর পুনর্গঠনের কাজ। বিডিআরের নাম, পোশাক, লোগো ও সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করা হয়। বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবর্তন করা হয় বিদ্রোহের আইন। বর্ডার গার্ড আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড।

ওই রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের পর সরকার দিবসটি প্রতিবছর ‘পিলখানা হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!