• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘পুঁজিবাজার না বাঁচলে, সামগ্রিক অর্থনীতি টেনে তোলা দুরহ হবে’


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৭, ২০২০, ১০:২২ পিএম
‘পুঁজিবাজার না বাঁচলে, সামগ্রিক অর্থনীতি টেনে তোলা দুরহ হবে’

ঢাকা : শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী মো. আলী জামান। শুক্রবার (১৭ জুলাই) তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন বর্তমান শেয়ারবাজারের সঙ্কট ও উত্তরণের বিষয়ে।

বাজারের সাধারণ এই বিনিয়োগকারী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে এই অবস্থা থেকে উত্তরনের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এতে একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীরা বেঁচে যাবে, অন্যদিকে পুঁজিবাজারও বেঁচে যাবে। আর পুঁজিবাজার না বাঁচলে, সামগ্রিক অর্থনীতি টেনে তোলা দুরহ হবে।

তার পোস্টটি হুবাহু তুলে ধরা হলো, লেখাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে--

করোনার কারনে দুনিয়াব্যাপী অর্থনীতি আর ব্যবসা বানিজ্যে ধস নামলেও জায়ান্ট মাল্টিন্যাশনাল আর বিগ বিজনেস হাউসগুলো অস্বাভাবিক ভালো ব্যবসা করেছে। কেবল আমেরিকা- ইউরোপেই নয়, আমাদের দেশেও বড় শিল্পগুলি এই করোনার কালেও- দারুন ব্যবসা করেছে, লাভ করেছে।প্রতিষ্ঠানগুলো আরো ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

বানিজ্যিক ব্যাংকগুলিও তেমন কোন ক্ষতির মুখে পড়েনি। এপ্রিল-মে দুই মাসের সুদ স্থগিত করলেও- তা কিছুদিন পর আদায় হয়ে যাবে। ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে ঋণগ্রহিতাদের এক পয়সাও ছাড় দেবে না। বিশেষ করে ক্ষুদ্র শিল্প-ব্যবসা, যাদের ঋণের বিপরীতে যথাযথভাবে সহ-জামানত দেয়া আছে, তাদেরকে কোনমতেই ছাড় দেবে না, ব্যাংকগুলি।

করোনার কারনে ক্ষুদ্র শিল্প- ব্যবসার পাশাপাশি সবচয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে- শেয়ারবাজারের সাধারন বিনিয়োগকারীরা। করোনা সংক্রমনের আগের থেকেই দেশের শেয়ারবাজারের অবস্থা ছিল সঙ্গীন। এরপর ০৮ মার্চ দেশে করোনা দৃশ্যমান হলে-শেয়ার বাজার একদম শুয়ে পড়ে। লোকেদের বিনিয়োজিত পুঁজি রাতারাতি প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। বিশেষ করে যেসব বিনিয়োগকারী মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল,তাদের পুঁজির পুরোটাই অদৃশ্য হয়ে যায়।

সরকারের পক্ষে সাধারন ব্যবসায়ীদের ঋণের দুই মাসের সুদ স্থগিত আর ঋণ পরিশোধের জন্য সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময় দিলেও শেয়ারবাজারের ঋণগ্রহিতাদের এই সুযোগ বঞ্চিত রাখা হয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রন সংস্থার প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথে সাক্ষাত করে- এই সুযোগ শেয়ারবাজারের ঋণ গ্রহিতাদেরকেও দেবার অনুরোধ করলে-গভর্নর সাহেব তাতে একমত হয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বিএসইসি প্রেস রিলিজ করে তা জানান দেয়।

কিন্তু এরপর দেড় মাস অতিবাহিত হলেও- কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা জারী করেনি।এর কারনে ঋণ গ্রহিতাদের শেয়ার ফোর্সড সেলের মধ্যে পড়ছে,আর তারা পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে।সেইসাথে ফোর্সড সেলের কারনে- সেল প্রেসার বেড়ে শেয়ারবাজার তার স্বাভাবিক ভারসাম্য হারাচ্ছে।

এখানে সবিশেষ উল্লেখ্য যে, মার্চেন্ট ব্যাংক কেবল বিএসইসি'র নির্দেশনা মেনে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করতে ঋণ দেয়। অথচ আমাদের দেশের শেয়ারবাজারে বিদ্যমান নেতীবাচক অবস্থার কারনে এই ভালো শেয়ারগুলির মুল্যপতন হয়েছে- সবচেয়ে বেশী। ধারনা করা যায় যে,নতুন কমিশনের কার্যক্রমে আর অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে অচিরেই এই অবস্থার অনেকটা উত্তরন ঘটবে। কিন্তু, শেয়ারগুলো ফোর্সড সেল হয়ে গেলে- তখন তো ঋণগ্রহিতা বিনিয়োগকারীরা সবটুকুই হারাবে।

পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা পরিমাপের প্রধান ব্যারোমিটার হচ্ছে- পুঁজিবাজারের বিদ্যমান অবস্থা। এখানে বেসরকারী কোম্পানীর পাশাপাশি সরকারী শেয়ারও কেনাবেচা হয়। আর সেকারনেই সব দেশের সরকার সর্বপ্রথমেই পুঁজিবাজার, আর এই বাজারের বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছে। করোনার পর NYSE Dow jones ১৯০০০ য়ে নেমে এসেছিল। এখন তা ২৬৫০০ এর উপরে। ভারতের Sensex ২৬০০০ এ নেমে এখন ৩৭০০০ ছুঁইছুঁই।

অথচ আমাদের পুঁজিবাজারে এর কোন প্রতিফলন নেই।

পুঁজিবাজার কেন আবশ্যক।প্রধান কারন,পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে ব্যাংক সাধারনত শিল্পঋণ দেয় না।কারন,ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে। সেই আমানত যদি পনের-বিশ বছরের জন্য শিল্পে বিনিয়োগ করা হয়, তবে- তার আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আর শিল্পটি যদি রুগ্ন হয়ে পড়ে,তবে সেই ঋণটি খেলাপী হয়ে যায়। কোন ব্যাংকই- ব্যবসার ঋণের মত শিল্পঋণে পর্যাপ্ত সহ জামানত নিতে পারে না।এক্ষেত্রে কাগজেকলমে অতি মুল্যায়িত সহ-জামানত দেখানো হয়।তাই বড় ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে বেশীরভাগ ঋণের টাকা আদায় করা যায় না।

আর এর বিপরীতে দুনিয়াব্যাপী শিল্পস্থাপনে- টাকার যোগান দেয় এই পুঁজিবাজার।ব্যাংক কেবল পরবর্তীতে ঐ শিল্পের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেয়।

পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশের পুঁজিবাজারে যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৮০%, সেখানে আমাদের দেশে ৮০% ই সাধারন তথা ব্যক্তি বিনিয়োগকারী।অবশিষ্ট ২০% প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী।এই ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা এর আগে ১৯৯৬ আর ২০১০ এর ধসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।এবারে একেবারে পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত অবস্থায় পৌছানোর পথে।

সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে এই অবস্থা থেকে উত্তরনের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।এতে একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীরা বেঁচে যাবে,অন্যদিকে পুঁজিবাজারও বেঁচে যাবে।আর পুঁজিবাজার না বাঁচলে,সামগ্রিক অর্থনীতি টেনে তোলা দুরহ হবে।

ফেসবুক লিংক: https://web.facebook.com/mdali.zaman.3/posts/816565618874872

Wordbridge School
Link copied!