• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন

পূর্ণাঙ্গ কমিটির আশায় নেতাকর্মীরা


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৫:০৭ পিএম
পূর্ণাঙ্গ কমিটির আশায় নেতাকর্মীরা

ঢাকা : চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী চারটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ও শীর্ষ দুটি পদে নির্বাচিতরা নিজেদের সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে গঠনতন্ত্রে।

চারটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দিনই মূল দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে জানানো হয়, সম্মেলনের পরের সাতদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

 ইতোমধ্যে তিনটি সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সাতদিন পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা পাননি নেতাকর্মী ও পদপ্রত্যাশীরা। কখন ঘোষণা আসবে, এমন প্রতীক্ষায় আছেন তারা।

কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয় ঠিকই, কিন্তু সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয় না।

সম্মেলনের পর ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে’ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার রীতি থাকলেও কখনো কখনো তা মানা হয় না। এমনকি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্দেশ দিলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় না।

অপূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ পার হওয়ার পরও গঠনতন্ত্রে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সম্মেলন হয় না। ফলে কমিটিতে স্থান পেতে বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা নেতাকর্মীদের সারি দীর্ঘ হতে থাকে। অনেকের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশাও জন্ম নেয়। অনেকে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকেও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

নেতাকর্মীরা বলেন, দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন দীর্ঘ বছর ধরেই সময়মতো হয় না। এসব সংগঠনের কোনোটির দ্বি-বার্ষিক এবং কোনোটির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের কথা থাকলেও দুই বা তিন বছরমেয়াদি কমিটিগুলো দ্বিগুণেরও বেশি সময় পার করে। কোনো কোনো সংগঠন সম্মেলন আয়োজন করতে আরো বেশি সময় পার করে দেয়।

এবার দীর্ঘ বছর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে এসব সংগঠনের কেন্দ্রীয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে ঠাঁই পেতে বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা সারা দেশের অনেক নেতাকর্মী নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, অনেক নেতার সংগঠনের পদ আঁকড়ে ‍থাকার প্রবণতা এবং পদ হারালে মূল দল আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো সংগঠনের শীর্ষ পদে জায়গা না পাওয়ার আশঙ্কায় দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করতে চান না।
সম্মেলনের আয়োজন হলেও সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে চান না। কোনো কোনো নেতা একাধিক কমিটিও দেন। বিশেষ করে দল ক্ষমতায় থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়।

এসব সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও প্রায়ই হস্তক্ষেপ করতে হয়। তবে এবার এমন হওয়ার লক্ষণ নেই। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্যে দলের চারটি সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়েছে। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসবে।

তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের নতুন সভাপতি হিসেবে সমীর চন্দ্র চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উম্মে কুলসুম স্মৃতি নির্বাচিত হন গত ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর সংগঠনটির সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ সাত বছর পর তা অনুষ্ঠিত হয়। গত ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের নতুন সভাপতি ফজলুল হক মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু নির্বাচিত হন। দুই বছরমেয়াদি এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছরের বেশি সময় আগে।

নির্মল রঞ্জন গুহকে সভাপতি এবং আফজালুর রহমান বাবুকে সাধারণ সম্পাদক করে আরেক সহযোগী সংগঠন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হয় গত ১৬ নভেম্বর। প্রতি কমিটির মেয়াদ তিন বছর করে হলেও প্রায় সাত বছর পর সংগঠনটির এবার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

গত ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সপ্তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের (কংগ্রেস) মধ্য দিয়ে শেখ ফজলে শামস পরশ চেয়ারম্যান এবং মাইনুল হোসেন খান নিখিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সম্মেলন-পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার কথা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পক্ষে জানানো হলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসেনি। অবশ্য সম্মেলনের পরের সাতদিন গতকাল পর্যন্তও পূরণ হয়নি যুবলীগের। তবে কৃষক লীগের সম্মেলনের পর গতকাল ২১ দিন, শ্রমিক লীগের ১৮ দিন আর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১১ দিন পার হয়েছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হয়।

রীতি অনুযায়ী সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর ‘দ্রুততম সময়ে’ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা। ওই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রায় এক বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করলেও তা নিয়ে নানা বিতর্ক ওঠে।

২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়।

ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ৭৫ সদস্যের মহানগর কমিটি ও মহানগর উত্তরের অধীনে ২৬টি থানা, ৪৬টি ওয়ার্ড এবং নয়টি ইউনিয়ন এবং দক্ষিণের ২৩টি থানা এবং ৫৭টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। এসব কমিটি আজো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি।

ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৩০ নভেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একযোগে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন হবে।

২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সম্মেলন হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের তিনটি ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যপদে এখনো একটি পদ শূন্য আছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!