• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জেলখানা ফিলিস্তিন ও কাশ্মীর


সোহাগ মনি আগস্ট ১৭, ২০১৯, ০২:০৩ পিএম
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জেলখানা ফিলিস্তিন ও কাশ্মীর

ঢাকা : হাতের মুঠোয় একুশ শতকের বিশ্ব। পরাধীনতার বেড়াজাল ছিন্ন করে পৃথিবীর অনেক জাতিই অর্জন করে নিয়েছে নিজেদের মুক্তি।

চলাফেরায়, চিন্তাচেতনায়— সবদিক থেকেই বলা যায় পৃথিবী আঙ্গিক পেয়েছে, নিজেদের জায়গা থেকে সবাই ভোগ করছে সব স্বাধীনতা। কিন্তু এমন কিছু মানবসম্প্রদায় এখনো মধ্যযুগের বর্বরতার অধীনেই রয়ে গেছে।

চিন্তাচেতনা, সংস্কৃতি— সবকিছুর দিক থেকেই এরা অন্যের শৃঙ্খলে। বলছিলাম ফিলিস্তিন আর কাশ্মীরের বাসিন্দাদের কথা, যারা মানুষ হয়েও মানুষের যে স্বকীয়তা তা এখন পর্যন্ত পায়নি। বিশ্ব যখন বিশ্বায়নের পথে, তখন নিজেদের অস্তিত্বের সংকটে তারা। বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষ যখন ভাবছে মঙ্গলে ঘর বানাবে, তখন নিগৃহীত মানুষগুলো ভাবছে কীভাবে আরেকটি দিন বাঁচা যায় পৃথিবীতে, কীভাবে নিজেদের ভূমিকে ধরে রাখা যায়, কীভাবে একটা অধিকার আদায় করা যায়!

বিশ শতকের মাঝামাঝিতেই অনেক দেশ মুক্ত হয়েছে, অন্যের অধীন থেকে। কিন্তু পারেনি ফিলিস্তিন আর কাশ্মীরের মানুষেরা। এই অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করা মানুষগুলো কোনো এক অভিশপ্ত গ্রাসে আজ জর্জরিত। নিজেদের ভূমিতেই তারা শেকল পড়া। পৃথিবীর বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে তাদের মুক্তি ঘটেনি আজো! একশ্রেণির মানুষ নিজেদের ফায়দা লুটতেই এই বিরোধ এখন পর্যন্ত বিরাজমান রেখেছে, অথচ এরা চাইলেই পারত বিশ্বকে শান্তিময় করে তুলতে।

একদিকে ইসরাইলের করাল থাবায় ফিলিস্তিনের অধিবাসী, আরেক দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে জিম্মি কাশ্মীরের মুসলিম সম্প্রদায়। ন্যায্য অধিকারের দিক থেকে এরা বঞ্চিত। মানুষ হিসেবে যে চাওয়া বা পাওয়া, তা হয়ে ওঠেনি এখনো তাদের। অবৈধ দখল নিয়ে রাজত্ব কায়েম করছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছে বরাবরই ইসরাইল। অধিকারের কথা বলতে গেলেই জীবন দিতে হচ্ছে মানুষকে। পৃথিবী নামক নরকেই যেন বাস ফিলিস্তিনি মানুষের। নিজেদের ধর্মের ওপর তো আঘাত আসছেই, মানুষ হিসেবে যে মতপ্রকাশের অধিকার সেটুকুও এখন পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি এসব মানুষের। এ দায় কার? উত্তরটা হবে কিছুসংখ্যক স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং উন্মুক্ত জেলখানা বলা চলে কাশ্মীরকেও। তাদের চাওয়া-পাওয়ার কোনো তোয়াক্কাই করে না ভারত। নিজেরা স্বাধীন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলেও সে পথ রুদ্ধ করে রেখেছে ভারত। এক কথায় ভাত-পানি দিয়ে খাঁচার পাখির মতো আটকে রেখেছে তাদের।

আর বর্তমানে তো ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির মাধ্যমে যেটুকু বিশেষ অধিকার তারা পেত, তাও হরণ করা হলো। কোনো কিছুতেই নেই তাদের স্বাধীনতা। ঘরের বাইরে পা দিতেই দেখা হয় মরণঘাতী সেনাবাহিনীর সঙ্গে। পথেঘাটে সব জায়গাতেই নজরবন্দি কাশ্মীরের জনগণ। দীর্ঘ প্রত্যাশার ফল এখনো পায়নি তারা, যেটুকু আশা ক্ষীণ ছিল, তাও গলা টিপে হত্যা করল বর্তমান ভারতের মোদি সরকার। একুশ শতকে মানুষ জিম্মি, খাঁচায় বন্দি ভাবা যায়!

আরেক শ্রেণির মানুষ তাদের ক্ষমতার দাপট দেখায়। মানুষের মৌলিক অধিকারটুকুও পাওয়া হয়ে ওঠে না এদের স্বেচ্ছাচারিতায়। জীবন হয়ে ওঠে জাঁতাকলে পিষ্ট। এ বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে জন্মগ্রহণ করে কত মানুষের প্রাণ গেছে! তাদের অন্যায় ছিল শুধু জন্মগ্রহণ করা, কবির কথায় বলতে গেলে ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’। ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরে আরো কত মানুষের প্রাণ যে যাবে, তার কোনো হিসাব আমরা করতে পারছি না। তারপরও এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান আদৌ কী হবে?

কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস বলে অন্য কথা। নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষ একদিন ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে। সেদিন আজকের বর্বর শাসককুল চতুর্দশ লুই, চসেস্কু, মুসোলিনি-হিটলারের মতো পালিয়েও বাঁচবে না। সে কথা তাদের স্মরণে আছে কি? বিবেকের আদালতে একদিন তাদের জবাবদিহি করতেই হবে। সেদিন পৃথিবীর মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না।

লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!