• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজ আসবে ইউরোপের চার দেশ থেকে


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৬:০৮ পিএম
পেঁয়াজ আসবে ইউরোপের চার দেশ থেকে

ঢাকা : পেঁয়াজ সংকটে দেশ। সংশ্লিষ্ট অনেকেই একে কৃত্রিম সংকট হিসেবে দেখছেন। প্রতিবেশী ভারত রপ্তানি বন্ধের পর হু হু করে বাড়ছে রান্নায় অপরিহার্য পণ্যটির দাম। এমনতর সংকট কাটাতে এবার ইউরোপের চারটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। দেশগুলো হলো- নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ইউক্রেন ও স্লোভাকিয়া।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক কমট্রেড ডাটাবেজ বলছে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে নেদারল্যান্ডস। দেশটি গত বছর ৬৭ কোটি ডলারের পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় এত দিন সেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এবার বাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, দুটি প্রতিষ্ঠান দেশটি থেকে ৭৮০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে।

ইউরোপ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে এক মাসের বেশি সময় লাগে। নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম ও বেলজিয়ামের এন্টওয়ার্প বন্দর থেকে কনটেইনারবাহী বড় জাহাজে এসব পেঁয়াজ প্রথমে আনা হবে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে। এরপর সেখান থেকে ছোট জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হবে। দেশ দুটি থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে সমুদ্রপথে ১৪ হাজার ৮৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। এ হিসাবে ডিসেম্বরে ইউরোপের দেশ থেকে আমদানি পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাবে।

উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র বলছে, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া দেশের সংখ্যা নিয়মিতই বাড়ছে। ইউরোপের দেশগুলো ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে- মিসর, চীন, তুরস্ক, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, ইরান, শ্রীলঙ্কা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ ছাড়া ইউরোপের দেশ স্লোভাকিয়া থেকে সামান্য পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

ভারত রপ্তানি বন্ধের আগে প্রতিবছর তিন-চারটি দেশ থেকে সামান্য পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হতো। এসব দেশের তালিকায় ছিল- মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান ও চীন। বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি সবচেয়ে বেশি হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। সে বছর মোট ২৮ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকেই আমদানি হয়েছিল সাড়ে ১২ হাজার টন।

উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক কৃষিবিদ আজহার আলী বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর নতুন নতুন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

নেদারল্যান্ডস থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে শীর্ষ তালিকায় থাকা বিএসএম গ্রুপ। গ্রুপটির চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘পেঁয়াজের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ নেদারল্যান্ডস। তাদের পেঁয়াজের গুণগতমান সবচেয়ে ভালো। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর বিশ্বের অনেক দেশে এখন চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। সে কারণে এক-দুটি দেশের চেয়ে যেখানে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, সেখান থেকেই আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি।’

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, নেদারল্যান্ডস ছাড়াও বেলজিয়াম থেকে এক হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান।

ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়াসিফ ট্রেডিংয়ের পণ্যছাড়ের প্রক্রিয়ার জন্য সিঅ্যান্ডএফ হিসেবে কাজ করছেন চট্টগ্রামের এস হোসেন অ্যান্ড কোম্পানির আশিষ নাথ।

তিনি বলেন, ইউরোপ থেকে প্রথমে দুবাই বা সিঙ্গাপুর বন্দর আসবে, এরপর চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত কনটেইনারভর্তি পেঁয়াজের চালানটি পৌঁছতে সময় লাগবে এক মাস। চীনের চেয়েও কম দাম পেয়েই আমদানিকারক বেলজিয়াম থেকে পেঁয়াজের বুকিং দিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আমদানির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।

প্রসঙ্গত, ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এরপর প্রথমে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে প্রথমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়েও মিয়ানমার থেকে কনটেইনারে করে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।

এরপর অক্টোবরে মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পেঁয়াজ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। পেঁয়াজ আনা হয়েছে তুরস্ক, পাকিস্তান ও চীন থেকে। এরপর আমদানির অনুমতিপত্র নেওয়া হয় উজবেকিস্তান থেকে। সর্বশেষ ইউরোপের চারটি দেশ নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ইউক্রেন ও স্লোভাকিয়ার নাম যুক্ত হলো।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!