• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
একদিনের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা

পেঁয়াজে অস্থিরতা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১, ২০১৯, ০৩:২০ পিএম
পেঁয়াজে অস্থিরতা

ঢাকা : ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করেছে গত রোববার বিকালে। দেশে পরের দিন সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকালেই খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় উঠেছে, সেটাও আরো বাড়তে পারে। সবমিলে ভারতের রপ্তানি বন্ধের সংবাদের পর থেকেই পেঁয়াজ নিয়ে শুরু হয়েছে চরম অরাজকতা।

দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে ওই সংবাদ পৌঁছানোর পর গতকাল বিকাল পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টা বন্ধ হয়েছিল পেঁয়াজের বেচাকেনা। ওই সময় একটি থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আর এরপর কিছু ব্যবসায়ী দাম যাই হোক, বিক্রি শুরু করেন মনমতো দামে। আর বেশির ভাগ ব্যবসায়ী বিক্রি বন্ধ করে মজুত করেছেন ওই সময়। কিছু বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেছে এমন অভিযোগও মিলছে।

অন্যদিকে পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয় এমন তিন বন্দর দিনাজপুরের হিলি, সাতক্ষীরার ভোমরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরেও পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যদিও এখন পাইকারি বাজার ও আমদানিকারকদের কাছে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে-এমনটা বলছে সরকার। তারপরেও রাতারাতি কেন এ অবস্থা?

এ প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেছেন, মজুত পেঁয়াজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ ভারতই পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা। আর দেশে এখন পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। ফলে যেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা বলা হোক না কেন, ভারত থেকে আমদানি বন্ধের বড় প্রভাব বাজারে পড়বে। আর এ সংকট হবে দীর্ঘমেয়াদি। এ কারণে বাজারে তৎপর হয়ে পড়েছে সিন্ডিকেট।

ব্যবসায়ীরা এ-ও বলছেন, গত রোববার নীতি সংশোধন করে পেঁয়াজকে রপ্তানিনিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রপ্তানি বন্ধের ওই সিদ্ধান্ত দ্রুতই কার্যকর করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পথে থাকা সব ট্রাক আটকে দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়তে সময় লাগেনি। অনেকের পেঁয়াজ আটকা পড়ে লোকসানেও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তারপরেও মুখস্থ কথা বলে যাচ্ছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। গতকাল ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজের মজুত ‘সন্তোষজনক’ পর্যায়ে রয়েছে এবং দাম নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই’ বলে দাবি করেন বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন। তিনি ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পর থেকে তিন দফা বৈঠকে একই কথা বলে আসছেন।

গতকাল তিনি বলেন, কেউ বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। যারা পেঁয়াজের দর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাদের কোনো যুক্তি এখানে নেই। যারা মজুত করবেন এবং বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করবেন-তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। ভোক্তা অধিকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ চারটি টিম কাজ করছে, মার্কেট মনিটরিং করছে। কাল থেকে এর সুফল মিলবে।

ক্রেতাকে আশ্বস্ত করে এখনো সচিব বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে আমরা বসে নেই। বিকল্প ব্যবস্থা হচ্ছে। তিন দেশ থেকে আসছে পেঁয়াজ। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ নিয়ে দুটি জাহাজ ইতোমধ্যে বন্দরে ভিড়েছে। এছাড়া তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আনার প্রক্রিয়া চলমান। আসতে যতটা সময় লাগে।

তিনি আরো জানান, দেশি পেঁয়াজের মজুত পরিস্থিতি জানতে শীর্ষ উৎপাদনকারী ১০ জেলায় প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া স্থলবন্দরগুলোতেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা থাকবেন, যাতে দ্রুত পণ্য ছাড় করা হয়। পাশাপাশি টিসিবিকে ৪৫ টাকা কেজি দরে ইতোমধ্যে ৩৫টি ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রির শুরু করছে। এছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, আদা নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে আমদানির দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয়।

দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বছরে ১৭ থেকে ১৯ লাখ টনের মতো। চাহিদা পূরণ না হওয়ায় আমদানি করতে হয় ৭ থেকে ১১ লাখ টন। স্বল্প দূরত্ব ও সহজলভ্যতার কারণে বেশির ভাগটা ভারত থেকে আসত। এর আগেও সংকটাপূর্ণ অবস্থায় তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন সময়ে উদ্যেগ ফলশূন্য হয়েছে। কিছু সময় পেঁয়াজ এলেও ঘাটতি পূরণের মতো পেঁয়াজ আমদানি সম্ভব হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর পাইকাররা বলছেন, এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকেও একবার ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন ঢাকার খুচড়া বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছিল। এ বছরও পুরোপুরি আমদানি বন্ধ হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

এসব বিষয়ে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, মিসর, তুরস্ক, মিয়ানমারেও পেঁয়াজের দাম কম নয়। সেখান থেকে পেঁয়াজ এনে খুব বেশি লাভ হবে না। ট্রান্সপোর্ট খরচ বেশি। এছাড়া সময় সাপেক্ষ। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে দেশের বাজারে আগাম পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। তার আগে দাম কমার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কারণে এবার ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ভারতের দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যের বাজারে ৮০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এ কারণে প্রথম দফায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেধে দেয় ভারত। তারপরেও দীর্ঘ সময় নিজ দেশে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল না হওয়ার কারণে গত রোববার রপ্তানি নীতি সংশোধন করে পেঁয়াজকে রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে দেশে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ৪৫ টাকা দরে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। অন্যদিকে রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধির পরেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিন দফা বৈঠক করেছে। মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। তবে তা দেশে পৌঁছাবে আগামী মাসে। আর দেশে পেঁয়াজ উঠবে ডিসেম্বরে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!