• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
কাঁচা পেঁয়াজের বিকল্প প্রক্রিয়াজাত গুড়া পেঁয়াজ

পেয়াঁজ সংকটের নতুন পথ উদ্ভাবন!


বগুড়া প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০, ০১:০৭ পিএম
পেয়াঁজ সংকটের নতুন পথ উদ্ভাবন!

বগুড়া : বগুড়া মশলা গবেষণা কেন্দ্রে পেয়াঁজ সংকট মোকাবিলায় নতুন পথের উদ্ভাবন করেছে। পেঁয়াজ প্রক্রিয়া ও প্যাকেটজাত করে সংরক্ষনের মাধ্যমে কাঁচা পেয়াঁজের বিকল্প হিসাবে গুড়া পেয়াঁজ ব্যবহারের দেশীয় পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন গবেষকরা।

ছোট পরিসরেই উদ্যেক্তাদের মাধ্যমে সহজে গুড়া পেয়াঁজ উৎপাদন প্রক্রিয়া ছড়িয়ে দিতে পারলে আমদানী ছাড়াই পেঁয়াজের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মশলা গবেষষকরা বলছেন। এছাড়া সাধারণ ভাবে ঘরেই গুড়া পেঁয়াজ উৎপাদন ও সংরক্ষন করা সম্ভব। বগুড়া মশলা গবেষণা কেন্দ্রে দেশীয় পদ্ধতিতে এই গুড়া পেঁয়াজ পরীক্ষামুলক উৎপাদন শুরু করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট গবেষক ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জড়িতরা বলছেন, কাঁচা পেয়াজ থেকে গুড়া পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ালে, সাধারণ ভাবে পেঁয়াজের সংরক্ষন জনিত যে ৩০ ভাগ ঘাটতি(অপচয়) থাকে তাও আর এই পদ্ধতিতে থাকবে না।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিউটের মশলা গবেষণা কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বছরে পেঁয়াজের বর্তমান চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশীয় ভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন ২৩ দশমিক ৭৬লাখ মেট্রিক টন। ১১ থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রতিবছর ঘাটতি থাকে। যা আমদানী করে চাহিদা মেটানো হয়। দেশীয় উৎপাদনের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ভাগ হয়, চারা থেকে উৎপন্ন বোপন পেঁয়াজ। এটা দীর্ঘসময় সংরক্ষন করা যায় বলে এর বাজার চাহিদাও বেশি। আর মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ দেশীয় দেশজ উৎপাদনের প্রায় ১৫ থেকে ২০ভাগ মেটায়। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ রয়েছে।

বগুড়া মশলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা(পোস্ট হারভেস্ট) ড. মোঃ মাসুদ আলম এবং উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা(উদ্যানতত্ব) কৃষিবিদ নুর আলম চৌধুরী জানান, সংরক্ষনের সময় সব ধরনের পেয়াঁজ অন্ততঃ ৩০ ভাগ ঘাটতি বা অপচয় হয়। দেশীয় জাতের পেঁয়াজের হেক্টর প্রতি উৎপাদন ১০ থেকে ১১ টন উৎপাদন হলেও গ্রীষ্মকালীন বারি-৫ পেঁয়াজের উৎপাদন হেক্টর প্রতি ২৩ টন পর্যন্ত। উচ্চ ফলনশীল এই পেয়াঁজ দেশীয় বা স্থানীয় জাতের চেয়ে হেক্টর প্রতি দ্বিগুনেরও বেশি উৎপাদন হলেও কৃষক পর্যায়ে এর উৎপাদন সীমিত রয়েছে।

স্থানীয় জাতের দেশী পেঁয়াজের চেয়ে বারি ২,৩,৪,৫ও৬ জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হলেও নানা কারনে কৃষক পর্যায়ে এর উৎপাদন ছড়ানো যায়নি। এর অন্যতম কারণ এসব পেঁয়াজের সংরক্ষনের সময় ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত। এজন্য অনেক কৃষকই গ্রীষ্মকালীন বারি জাতের পেঁয়াজে তেমন আগ্রহী নন বলে সংশ্লিস্টদের ধারণা।

গবেষক মাসুদ আলম বলেন, তাদের উদ্ভাবিত পেঁয়াজের গুড়া পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সংরক্ষনে সময় জনিত আর কোন সমস্যা থাকবে না। কারণ পেঁয়াজের গুড়া অনায়াসে এক বছর প্যাকেটজাত করে সংরক্ষন করা যায়। এতে বারী জাতের উচ্চ ফলনশীন গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের পর তা গুড়া করে সংরক্ষন ও ব্যবহার করলে সংরক্ষন ঘাটতি যেমন থাকবে না। তেমনি কৃষকরা ন্যায্যমুল্যেও পাবেন। আর উচ্চ ফলনশীল বারি জাতে পেঁয়াজে কৃষকদের আগ্রহও বেড়ে যাবে।

বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে ড.মাসুদ আলমের তত্বাবধানে গবেষণাগরে গুড়া পেঁয়াজের উৎপাদন চলছে। তার গবেষণার বিষয় ছিলো খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ। তিনি জানালেন, অনেক দেশে পেয়াঁজের গুড়া প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে নেই। একারণে তিনি প্রায় ৩ বছর ধরে পেঁয়াজের প্রক্রিয়াজাতকরণ বা পেঁয়াজ গুড়া করে সংরক্ষনের বিষয়ে গবেষণা করেন।

তিনি জানান, খুব সাধারণ ভাবে যে কোন উদ্যোক্তা বা ঘরে বসেই এই পেয়াজের গুড়া উৎপাদন ও সংরক্ষন করা সম্ভব। এটি ছড়িয়ে দিতে পারলে সংরক্ষন নিয়ে সমস্যা দুর হওয়া পেয়াঁজ সংকট আর থাকবে না। এটির পদ্ধতি খুব সাধারণ। খোসা ছাড়িয়ে পেঁয়াজ প্রথমে স্লাইস করে ভাব দিতে হবে। পরে তা শুকিয়ে সোডিয়াম মেটাবাইসারফেট দ্রবণে ৪/৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর তা শুকাতে হবে। এর পর সাধারণ ব্লেন্ডিং মেশিনেই এটি গুড়া করা যাবে।

তিনি আরো জানান, এটি নিশ্চিন্ত এক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করার কথা তারা বললেও আসলে এই পেঁয়াজের গুড়া ২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষন করা যাবে।

মশলা গবেষকদের বক্তব্য বারি জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়িয়ে সংকট মেটানোর ক্ষেত্রে পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষন তথা গুড়া পেঁয়াজ অন্যতম পথ হিসাবে বিবেচিত হওয়ার একটি সম্ভবনাময় পথ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!