• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিপক্ষহীন আ.লীগ!


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২৩, ২০১৯, ০২:২৫ পিএম
প্রতিপক্ষহীন আ.লীগ!

ঢাকা : টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পথে আওয়ামী লীগ তার প্রতিপক্ষকে প্রায় নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে। দেশে কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডও তেমন একটা নেই।

আওয়ামী লীগের যে শরিক ১৪ দল ছিল সেই ১৪ দলকেও মন্ত্রিসভা থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এই রাজনীতিবিহীন মাঠে আওয়ামী লীগ একাই এককভাবে শক্তিশালী। আপাত দৃষ্টিতে বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই।

কিন্তু রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন সংগ্রাম না থাকলেও আওয়ামী লীগকে বর্তমানে কিছু সামাজিক আন্দোলন নিয়ে দুশ্চিন্তায়  রয়েছে। এসব সামাজিক আন্দোলন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, রাজনীতি না থাকার যেমন সুবিধা আছে, ঠিক তেমনি অসুবিধাও অনেক। রাজনীতি না থাকার ফলে সামাজিক এবং গণদাবির ইস্যুগুলো হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এবং সরকারকে একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলতে পারে।

সূত্রমতে, শিক্ষার্থী আবরারের মৃত্যুর পর আবার নতুন করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরু হয়েছে। যদিও সেই আন্দোলন ২৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। তৃতীয় দফা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের একটা তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো-  সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে এবং তারা অনেক বেশি সংগঠিত। মাত্র কয়েক মিনিটের নোটিশে তারা পুরো ঢাকা শহরকে অচল করে দিতে পারছে। এটা আওয়ামী লীগের জন্য উদ্বেগজনক এবং আওয়ামী লীগ এই বিষয়টিকে সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ এরকম একটা সংগঠিত জনগোষ্ঠীকে যে কেউ যদি তার পক্ষে নিয়ে যায়, তাহলে সরকারের জন্য একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়াও দেশে একের পর এক বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সেগুলোও যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগগুলো কিছুদূর আগানোর পরেই থেমে গেছে। হঠাৎ হঠাৎ এমন দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডের কারণে জনগণের মধ্যে বিভিন্ন অসন্তোষ বাড়ছে। সরকারের জন্য এটাও একটা সতর্কবার্তা। সরকার মনে করছে এ ধরনের ঘটনাগুলো বার বার ঘটতে থাকে এবং সরকার তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকারগুলো পূরণ করতে না পারে- তাহলে এটি জনঅসন্তোষের একটা কারণ হতে পারে। সেজন্য সরকার এই বিষয়টির ব্যাপারেও উদ্যোগী হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অপরদিকে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো শক্তিশালী প্লাটফর্ম না হলেও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে প্রকাশ্যে। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতোই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলেই সারাদেশে স্বতস্ফুর্ত আন্দোলন সংগঠিত হতে পারে। এই বিষয়টি নিয়েও আওয়ামী লীগ সতর্ক। আওয়ামী লীগ মনে করছে, এইভাবে যদি সাধারণ মানুষের আন্দোলন শুরু হয়, সেটা সরকারের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

এদিকে, সরকার গত দু’বছর উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর এবছর আবারও নতুন ভ্যাট আইন প্রনয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে যে, নতুন ভ্যাট আইন জারি করা হলে সঙ্গে সঙ্গে তারা আন্দোলনে যাবে। এর আগে দুদফা নতুন ভ্যাট আইন সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চাপে আন্দোলনের মুখে বন্ধ করতে পারেনি। এবারও যদি সরকার এই পদক্ষেপ নেয় সেটাও একটা আন্দোলনের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এবং সেটা সরকারকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলতে পারে।

সূত্রমতে, এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে অন্তর্দ্ব›দ্ব। সারাদেশে অন্যদলগুলোর রাজনৈতিক সক্রিয়তা কমে যাওয়ার ফলে আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে। আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যেই সন্ত্রাস আর সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অন্তর্কলহ যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে তার মাশুল দিতে হবে। এইসব ইস্যুগুলো নিয়েই আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন এবং দ্রুতই এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়ার চেষ্টা করছে যেন পরিস্থিতি কোনোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।

কারণ আওয়ামী লীগ জানে যে যেকোনো ইস্যু নিয়ে যদি একবার কোনো আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তো সেটা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে যাবে। একটা অরাজনৈতিক ইস্যুতেই আন্দোলন সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ হয় এবং সেই আন্দোলন মোকাবেলা করা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

এজন্য আওয়ামী লীগ মনে করছে এখনই এই বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার, এবং তারা মনোযোগ দিয়েছে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!