• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিপক্ষের হেভিওয়েটরা বাদ পড়ায় ‘নির্ভার’ আ.লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৫, ২০১৮, ০২:৩৮ পিএম
প্রতিপক্ষের হেভিওয়েটরা বাদ পড়ায় ‘নির্ভার’ আ.লীগ

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ হেভিওয়েট অনেক নেতার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

মামলায় দণ্ড, ঋণখেলাপি, মনোনয়নপত্রে সই না করার কারণে বাদ পড়া এসব নেতা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আদালতে আবেদন করলেও সবার প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের প্রভাবশালী এসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় অনেকটাই ‘নির্ভার’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রতিপক্ষের তুলনামূলক ‘দুর্বল প্রার্থী’র সঙ্গে ভোটের মাঠে সহজে ‘জয়ী’ হওয়ার আশা করছে আওয়ামী লীগ।

দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াসহ দলটির ‘হেভিওয়েট প্রার্থী’ হিসেবে পরিচিত অন্তত ৫০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ফলে সমসংখ্যক সংসদীয় আসনে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। বিএনপির মোট ১৪১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও ‘ছোটোখাটো’ কারণে বাতিল হওয়াদের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মামলায় দণ্ড, ঋণখেলাপি হওয়া ও মামলার তথ্য গোপন করায় দলটির অন্তত ৫০ শীর্ষ নেতার প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে অংশ নিতে যাওয়া প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা বিশেষ কৌশলের কারণে প্রকাশ করতে সময় নিচ্ছে দলটি। কৌশল হচ্ছে- কোন আসনে প্রতিপক্ষের প্রার্থী কে তা আগে জানা। প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে ভোটের মাঠে সবদিক থেকে মোকাবেলা করে জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রার্থী দিতে চায় আওয়ামী লীগ। প্রতিপক্ষের ‘শক্তিশালী প্রার্থীর’ মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় এ কৌশলে অনেকটাই এগিয়ে গেছে দলটি।

সূত্র মতে, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির আর কোনো প্রার্থী নেই। এগুলো হলো, বগুড়া-৭, ঢাকা-১, মানিকগঞ্জ-২, জামালপুর-৪, শরীয়তপুর-১ ও রংপুর-৫। ফলে বগুড়া-৭ আসনে মহাজোটের প্রার্থী, ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান, জামালপুর-৪ আসনে ডা. মুরাদ হাসান, রংপুর-৫ আসনে এইচএন আশিকুর রহমান, মানিকগঞ্জ-২ আসনে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম ও শরীয়তপুর-১ আসনে ইকবাল হোসেন অপুর জয় অনেকটা সহজ হয়ে উঠেছে।

খালেদা জিয়ার ফেনীসহ আরো দুটি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী দেয়নি। দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী। দণ্ডিত হওয়ায় ঢাকা-২ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বিএনপির ‘হেভিওয়েট প্রার্থী’ মুশফিকুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় মহাজোটের প্রার্থী, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী ডা. হাবিবে মিল্লাত ও চট্টগ্রাম-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে এখন প্রতিপক্ষের প্রার্থী ‘দুর্বল’।

চট্টগ্রাম-৭ ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপির প্রার্থী যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় ড. হাছান মাহমুদের (চট্টগ্রাম-৭) লড়াই সহজ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম-২ আসনটি আওয়ামী লীগ এবার শরিক দলের জন্য ছাড় দিয়েছে।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছিরউদ্দিন ও তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এ আসনে মহাজোটের প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা নেই। চট্টগ্রাম-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী সামসুল আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর ছেলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।

দণ্ড থাকায় নাটোর-২ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্রও বাতিল। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শিমুল। তিনি লড়বেন বিএনপির প্রার্থী দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। সাবিনার তুলনায় শিমুল এলাকায় ‘বেশি জনপ্রিয় ও শক্তিশালী প্রার্থী’ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

মৌলভীবাজার-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরীর মনোনয়নপত্রও বাতিল। এ আসনে আছেন আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন। তিনি ‘বিএনপির দুর্বল প্রার্থীর’ তুলনায় এলাকায় বেশি জনপ্রিয় বলে ধারণা আওয়ামী লীগের। ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এখানে এখন বিএনপির প্রার্থী ছাত্রদলের সাবেক নেতা হাবিবুর রশীদ। আসনটিতে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী লড়ছেন।

ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহাম্মেদের স্ত্রী নাছিমা আক্তারের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী সেলিমের ‘সহজে জয়ী’ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। একই ধারণা করা হচ্ছে ঢাকা-১৪ আসনের বেলায়ও। এখানে বিএনপির আবু বকর সিদ্দিকের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় দলটির প্রার্থী জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন আসলামুল হক।

রাজশাহী-১ আসনের বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আমিনুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় এখানে দলটির বিকল্প প্রার্থী তার স্ত্রী আভা হক। আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরীর মতো পরিচিতি নেই আভার। বরগুনা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মতিউর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে ‘শক্ত প্রার্থী’ নেই। রাজশাহী-৩ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে নেই প্রতিপক্ষের জনপ্রিয় কোনো প্রার্থী।

ময়মনসিংহ-৪ আসনে বিএনপির এজেডএম জাহিদ হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ‘সহজ জয়’ দেখছেন তার অনুসারীরা। জামালপুর-১ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রশিদুজ্জামান মিল্লাতের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এখন দলটির দ্বৈত প্রার্থী সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম ও মিল্লাতের ছেলে শাহাদাত জামান। আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে মনোনয়নের দ্বৈত চিঠি পেয়েছেন আবুল কালাম আজাদ ও নূর মোহাম্মদ। বিএনপির প্রার্থী দেখে আওয়ামী লীগ এ আসনে ‘বেশি যোগ্য ও শক্তিশালী প্রার্থী’ চূড়ান্ত করবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!