• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতীক পেয়ে প্রচার উৎসবে প্রার্থীরা


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১১, ২০১৮, ১২:৫৮ পিএম
প্রতীক পেয়ে প্রচার উৎসবে প্রার্থীরা

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ সব রাজনৈতিক দল। নির্বাচনী প্রচারণায় এবার ডিজিটাল পদ্ধতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে জোট ও জোটের প্রার্থীরা।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে ভোট চাইবে আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণায় নামছে বিএনপি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রতিশ্রুতি থাকবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণায়। 

আর কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ইশতেহারে ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’র কথা বলা হয়েছে। ইসলামী দলসহ অন্য দলগুলোও নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে তৈরি করছে ইশতেহার। এরই মধ্যে প্রার্থীদের পদচারণায় নির্বাচনী মাঠ হয়ে উঠছে সরগরম।

সোমবার (১০ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক পাওয়ার পরপরই নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রার্থীরা মিছিল ও জনসংযোগ শুরু করেছেন। দলীয় মনোনয়নে প্রার্থীদের প্রতীক আগে থেকে জানা থাকায় কর্মীরা আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। এবার প্রচারণায় পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতেও প্রচারণা করবেন তারা। এদিকে প্রচারের সময় যাতে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন না হয়, সে জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। দলীয় প্রধান ও প্রতীকের ছবিসহ পোস্টার ছাপিয়ে নিজ নিজ আসনে তা টাঙ্গানো শুরু করেছেন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। 

এছাড়া আওয়ামী লীগের টানা ১০ বছরের ক্ষমতায় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের তথ্য লিফলেট আকারে ভোটারদের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া শুরু হয়েছে। চলছে পোস্টার ও লিফলেট ছাপানোর কাজ। প্রার্থীরা এখন ইশতেহার ঘোষণার অপেক্ষা করছেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির উদ্দেশে এই ইশতেহার উপস্থাপন করবেন। এরপর ইশতেহার নিয়ে ভোটের মাঠে নামবেন প্রার্থীরা। প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকদের এক কথা- উন্নয়নের বিকল্প নাই; নৌকারও বিকল্প নাই। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট চাই।

সোমবার রাত ৮টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রচারণার লক্ষ্যে অডিও-ভিডিও সিডির উদ্বোধন করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ প্রায় শেষ করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণার পাশাপাশি ভবিষ্যতে করণীয় বিষয়ে নানা প্রতিশ্রুতি থাকছে ইশতেহারে।

ক্ষমতায় এলে সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি থাকছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণায়। প্রচারণায় আরও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা থাকছে, তার মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।

এছাড়া প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণসহ তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে থাকবে বেশ কিছু চমক। কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে পাঁচ থেকে ১০ ভাগ করবে জোটটি। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তিকে প্রধান দাবি হিসেবে রাখছে বিএনপি।

রুটি-রুজি অধিকারের জন্য শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ বাস্তবায়নে মাঠে নামবে সিপিবি। এরই মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে দলটি। ইশতেহারে রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সংস্কার এবং ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণসহ ৩০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। ইশতেহারে সিপিবি বলছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের ধারার বিপরীতে দেশে লুটপাটতন্ত্রের ধারা শক্তিশালী হয়েছে।

বাংলাদেশে এখন মূল দ্বন্দ্ব হলো ‘এক ভাগ’ লুটপাটকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘নিরানব্বই ভাগ’ জনগণের স্বার্থের দ্বন্দ্ব। অথচ এই মৌলিক দ্বন্দ্বকে আড়াল করতে এক ভাগের স্বার্থরক্ষাকারী দুটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে দেশের জনগণের সামনে প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে বজায় রাখা হয়েছে। এই দুটি রাজনৈতিক দল একে অন্যের বিকল্প নয়-তারা আসলে একই পক্ষের, তথা সমাজের এক ভাগ লুটেরা শোষকদের স্বার্থরক্ষাকারী পক্ষের দুটি প্রধান বিবাদমান গোষ্ঠী।

‘ভয়মুক্ত বাংলাদেশ, কার্যকর গণতন্ত্র, সবার জন্য উন্নয়ন’- এই স্লোগান নিয়ে আজ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোদাল প্রতীকে প্রচারণা শুরু করবেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি। তিনি ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থী।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩০০ আসনে কোন দল থেকে কে প্রার্থী হয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোন কোন আসন ছাড় দিয়েছে এরই মধ্যে তা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের ৪৮ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। তবে এবারের প্রচারণায় আচরণবিধি ভঙের আশঙ্কা করছে খোদ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটগ্রহণের ২১ দিন পূর্বে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয়নি। 

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছে, কোন প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের জন্য মাঠে রয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।

এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে যুগ্ম জেলা জজ ও সহকারী জজদের সমন্বয়ে গত ২৫ নভেম্বর ১২২টি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়। আইন অনুযায়ী, এই কমিটি কারও অভিযোগের ভিত্তিতে বা নিজ উদ্যোগে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে পারবে। তবে এই কমিটির কাউকে সরাসরি সাজা দেয়ার ক্ষমতা নেই। তারা অভিযোগ তদন্ত করে তিনদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করবে। জানা গেছে, কমিটির কয়েকজন সদস্য নিজ নিজ কার্যালয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এর আগের নির্বাচনে ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ সংশ্লিষ্ট এলাকায় গাড়িতে টহলে থাকত।

আচরণবিধিতে যা বলা হয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোটের প্রচারণায় কোন প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে কোন প্রকার উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া যাবে না। সভা করতে ২৪ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে। সভার জন্য লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং আগে যে আবেদন করবে তাকে আগেই অনুমতি দিতে হবে। নির্বাচনী প্রচারণায় কোন ধরনের গেট বা তোরণ নির্মাণ ও প্যান্ডেল স্থাপন করা যাবে না। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে। পোস্টার হবে সাদাকালো।

শুধু প্রার্থী এবং দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে ব্যবহার করা যাবে। প্রার্থীরা দলীয় এবং সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় নির্বিশেষে প্রতিটি ইউনিয়নে সর্বোচ্চ একটি এবং পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডে একটির অধিক ক্যাম্প করা যাবে না। সরকারি রেস্টহাউজ, ডাকবাংলো, সার্কিট হাউজ কোন দল বা প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা যাবে না, সরকারি যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না, রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনসভা বা প্রচার সভা করা যাবে না। 

কোন প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ নির্বাচনের আগে উক্ত প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় বসবাসকারী কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা উক্ত এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোন প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন চাঁদা বা অনুদান দেয়া বা দেয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না। প্রার্থী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অথবা সদস্য হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানের কোন সভায় অংশ নিতে পারবেন না।

সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও তাদের সমমর্যাদাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মকান্ড যোগ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থী তার এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না এবং এ সংক্রান্ত কোন সভায় যোগ দিতে পারবেন না। এই আইন লঙ্ঘনকারী ছয় মাসের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!