• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৪, ২০১৬, ০৫:০৭ পিএম
প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র

সিরাজুল ইসলাম, তেহরান থেকে
পারস্য উপসাগরে মেরিন সেনা আটকের ঘটনায় মার্কিন বিমানবাহী জাহাজের উসকানিমূলক তৎপরতার জবাব দিতে প্রস্তুত করা হয়েছিল ইরানের ভূমি থেকে সমুদ্রে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র।

ইরানি সেনারা শুধুমাত্র নির্দেশের অপেক্ষা করছিল। নির্দেশ দিলেই তারা উপকূল থেকে মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস ট্রুম্যানকে লক্ষ্য হামলা শুরু করত। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র নৌ শাখার কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী ফাদাভির বরাত দিয়ে ফার্স নিউজ এ খবর দিয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, মেরিন সেনাদের আটকের পর মার্কিন নৌবাহিনী উত্তেজিত ও অপেশাদারসুলভ আচরণ করেছে। পারস্য উপসাগরের ফার্সি দ্বীপের কাছে ইরানি সমুদ্রসীমা লঙ্ঘনের দায়ে দু সপ্তাহ আগে আইআরজিসি মার্কিন নৌবাহিনীর দুটি যান এবং ১০ মেরিন সেনাকে আটক করে। এর মধ্যে নয়জন পুরুষ ও একজন নারী ছিল।

অ্যাডমিরাল আলী ফাদাভি জানান, “সেনা আটকের পর বিমানবাহী দুটি মার্কিন ও একটি ফরাসি জাহাজ এবং সহযোগী বহর ও বহু হেলিকপ্টার ইরানের পানিসীমার কাছে অভিযান চালানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। এর মধ্যে মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস ট্রুম্যান প্রায় ৪০ মিনিট ধরে খুবই অপেশাদার আচরণ করেছে। ফলে আমরা আমাদের উপকূল থেকে সমুদ্রে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপযোগ্য স্পিডবোট এবং অন্যান্য বহু সংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রস্তুত হয়ে উঠি।
তারা যদি শত্রুতামূলক কোনো কাজ করত তাহলে হামলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।” মার্কিন সেনাদের মুক্তির পর আলী ফাদাভি এসব কথা প্রকাশ করেছেন।


ওই ঘটনার জন্য তিনি মার্কিন মেরিন সেনাদের উসকানিমূলক ও অনিয়ন্ত্রিত আচরণকে দায়ী করেন। আলী ফাদাভি জানান, “যখন মেরিন সেনাদের আটক করা হয় তখন তারা তেমন কোনো প্রতিরোধ করে নি এবং ইরানি সেনাদের কাছে আত্মসর্পণের নির্দেশকে মেনে নেয়। এরপর ইরানি পানিসীমার কাছে মার্কিন নৌবহর পৌঁছায় এবং নানা ধরনের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করে। জবাবে ইরানি সেনারা আন্তর্জাতিক রেডিও সিস্টেমের মাধ্যমে মার্কিন সেনাদের সঙ্গে যোগযোগ করে এ বার্তা দেন যে, যদি তারা আরো কোনো ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন তৎপরতা দেখায় তাহলে জবাব দেয়া হবে। এরপর তারা বুঝতে পারে যে, “আইআরজিসি’র কথাই হচ্ছে এখানে প্রথম ও শেষ কথা।”

আইআরজিসি কমান্ডার জানান, “মার্কিন ও ফরাসি বিমানবাহী জাহাজ আমাদের নাগালের মধ্যেই ছিল এবং যদি তারা আরো কোনো অপেশাদার তৎপরতা দেখাতো তাহলে তারা এমন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ত যা তারা সমগ্র ইতিহাসে দেখে নি। তারা যদি গোলা-গুলি ছুড়ত তাহলে তারা ধ্বংস হয়ে যেত।”

কমান্ডার আলী ফাদাভি জানান, হরমুজ প্রণালী ও পারস্য উপসাগরে ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে আইআরজিসি’র ওপরে। তিনি এটাও জানান যে, “পরে তদন্ত করে দেখা গেছে তারা (মার্কিন মেরিন সেনারা) পথ ভুল করেছে এবং না জেনেই ইরানের পানিসীমায় ঢুকেছে।”

শেষ পর্যন্ত মার্কিন কূটনীতিবিদ ও কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, এটা তাদেরই ভুল ছিল এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন। তবে আটক সেনাদের সঙ্গে মুক্তি পর্যন্ত ইরান সম্মানজনক আচরণ করেছে বলে রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী ফাদাভি জানান।

ইরানের এ কমান্ডার আরো বলেছেন, “আমেরিকা ও তার নৌবাহিনী জানে যে, পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীতে ইরানের সঙ্গে কোনো ধরনের যুদ্ধ হলে তারা বিজয়ী হতে পারবে না এবং এ ধরনের যুদ্ধে তাদের জাহাজগুলো ডুবতে বাধ্য হবে; শেষ পরিণতি হবে ধ্বংস। কিন্তু ওই ৪০ মিনিটে মার্কিনীরা প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে ভুগছিল এবং তারা কোনো পেশাদার ও দায়িত্বশীল বাহিনীর আচরণ করে নি। যখন মার্কিন মেরিন সেনারা আটক হয় তখন তারা ইরানের পানিসীমার তিন নটিক্যাল মাইল ভেতরে ছিল।

এ সময় আইআরজিসি’র দ্বিতীয় নৌবহর জোনে ৫০ মিলিমিটার ক্যালিবারের মেশিনগান ও আরো কিছু হাল্কা ও আধা-ভারী অস্ত্র মোতায়েন ছিল।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!