• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তুতি ম্যাচে ইমরুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি


ক্রীড়া ডেস্ক অক্টোবর ৪, ২০১৬, ০১:৪৬ পিএম
প্রস্তুতি ম্যাচে ইমরুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি

দুহাত আকাশে মেলে ধরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেলেন ইমরুল! নাকি জানান দিলেন তিনি সত্যিই স্বরুপে ফিরেছেন। সে যাই হোক, সাদা চোখে বলা যায় সেঞ্চুরি উদযাপনের বহিপ্রকাশ ছিল এটি। 
ফতুল্লাহ স্টেডিয়ামে গতকাল সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে ব্যাট চালালেন তাতে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতোই ছিল ইনিংস। ওপেনিংয়ে খেলতে নেমে অনেক দিন পর নিজের জাত দেখালেন। ইমরুল বরাবরই এমন খেলতে পছন্দ করতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ফর্ম হারা হয়ে পড়তে দেখা যায় তাকে। যা নিয়ে জাতীয় দলের অবস্থানটাও নড়বড়ে তার। আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকেন বেশিরভাগ। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ছিলেন সেই আসা-যাওয়ার মিছিলে। 

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জাতীয় দলে রাখা হলেও ইমরুলের মূল একাদশ নিয়ে থাকছে শঙ্কা। তবে এবার হয়ত তা কেটে গেছে। হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ১২১ রানের ইনিংস খেলে চমকে দিয়েছেন সবাইকে। তাও কিনা মাত্র ৯১ বলে। যে কিনা ক’দিন আগে আফগানদের বিপক্ষে দুই ম্যাচে করেছেন ৪৫ রান করেছিলেন ( প্রস্তুতি ম্যাচে ৮ ও প্রথম একদিনের ম্যাচে ৩৭ রান)। বাকি দু’ম্যাচ ছিলেন দলের বাইরে।

এবার ফতুল্লাহ যেন সেই জ্বেদটাই দেখালেন ইমরুল। ইংলিশ বোলারদের বল একাধিকবার মাঠের বাইরে পাঠিয়েছেন। ১১ টি বাউন্ডারি ও ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়ে। সেঞ্চুরিটাও করেছেন মাত্র ৮১ বলে। যা কিনা ধুম-ধারাক্কা ক্রিকেটও হার মানিয়েছে। ওপেনিংয়ে খেলতে নেমে ইমরুল পারলেও আবারও ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পরিচয় দেখিয়েছেন সৌম্যসরকার। আফগান সিরিজ থেকে শুরু করে প্রস্তুতি ম্যাচে সবখানেই চরম ব্যর্থ। গত তিন ম্যাচে ৩১ রান করা সৌম্য সরকার এই ম্যাচেও শুরুতেই বিদায়ী হন, মাত্র ১৩ বলে ৭ রান করে। 

প্রস্তুতি ম্যাচের হার-জিত বড় কথা নয়। খেলোয়াড়দের অবস্থান যাচাই করার একটি সুযোগও বটে। এই যাচাইয়ে মুশফিকুর রহিমও খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে। বাদ থাকেন নি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের সাইড লাইনে থাকা নাসির হোসেনও। মুশফিক হাফসেঞ্চুরি করলেও মাত্র চার রানের জন্য তা করা হয়নি নাসিরের। মুমফিক ৫১ রানে আউট হন। আর নাসির করেন ৪৭ রান। তাদের সঙ্গে দারুন ভাবে তাল মিলিয়েছেন তরুন ক্রিকেটার শান্ত। তিনি করেছেন ৩৬ রান। এই চার ব্যাটসম্যানে ভর করেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক লড়াকু ইনিংস তৈরী করলো বিসিবি একাদশ। ৫০ ওভারের ম্যাচে ৯ উইকেটে ৩০৯ রান। তবে রান হতে পারত আরও অনেক বেশি। হতে পারেনি সেই লোয়ার অর্ডারের দূর্বলতায়। গত তিন ম্যাচেও বাংলাদেশ শেষ দশ ওভারের দূর্বলতায় ভুগেছে। এদিন প্রথম ৪০ ওভারে বিসিবি একাদশ ২৬০ রান করেছিল। কিন্তু শেষ শেষ দশ ওভারে তারা সংগ্রহ করে ৪৯ রান। 

তবে ইমরুল আউট হতেই দলের রানে নেমে আসে কিছুটা মন্থরতা। তবুও তিনি প্রত্যাশা পূরণ করেছেন নির্বাচকদের। ইনিংসের প্রথম বলেই ক্রিস ওকসকে কভার দিয়ে চার মেরে শুরু করলেন, তৃতীয় বলেই আবার, এবার পয়েন্ট দিয়ে। পঞ্চম বলে স্ট্রাইক পেয়ে সৌম্যও প্রথম বলে চার, তাঁর শটটিও কভার দিয়ে। জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষায় সবাই। দুই প্রান্তে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টায় নামা দুই ওপেনারের এমন লড়াইয়ে যে দলেরই লাভ!

কিন্তু সব সম্ভাবনায় পানি ঢেলে সৌম্য আউট হন মাত্র ৭ রানে। অন্য প্রান্তে ইমরুল ততক্ষণেই ২৬ রান করে ফেলেছেন। চারটি চার ও ডেভিড উইলিকে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে মারা ছক্কায় দিচ্ছেন ঝড়ের ইঙ্গিত। নতুন সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্তকে পেয়ে একটু শান্ত হলেন। ওই সময়টাই তাঁর ইনিংসের একমাত্র কালো দাগ। ১১তম ওভারে লিয়াম প্লাঙ্কেটের বলে শর্ট কভারে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন। ব্যস, এরপর আর ফিরে তাকাননি।

একের পর এক চোখজুড়ানো সব কভার ড্রাইভ, সুইপ আর সে সঙ্গে দ্রুত প্রান্ত বদল করে সিঙ্গল-ডাবলস; নাজমুলের সঙ্গে ৮৫ রানের জুটিতে ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দেন ইংল্যান্ডকে। এর মাঝেই ফিফটি পেয়ে গেলেন, মাত্র ৪৬ বলে। তাতে ৬টি চার ও ১ ছক্কা। ফিফটির পর যেন আরও আগ্রাসী হয়ে উঠলেন ইমরুল। মঈন আলী ও আদিল রশিদকে রীতিমতো পাড়ার বোলারদের পর্যায়ে নামিয়ে আনলেন। নাজমুল (৩৬) ফিরলেও বিসিবি একাদশের তাতে কোনো অসুবিধা হলো না। রশিদ ও মঈনকে ডিপ স্কয়ার লেগ ও মিড উইকেট দিয়ে তিন ছক্কায় বুঝিয়ে দিলেন ইংলিশ স্পিনারদের নিয়ে ভাবনার কিছু নেই।

২৭তম ওভারে যখন সেঞ্চুরি পেলেন, তখন তাঁর নামের পাশে ৯টি চার, ৪টি ছক্কা। সেঞ্চুরির পর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ থাকলেন না। দুই স্পিনারকে একটি করে চার ও উইলিকে এক ওভারেই দুই ছক্কা মেরে ৯০ বলেই পৌঁছে গেলেন ১২১ রানে। দুই ছক্কার ওই ওভারেই একটা ফুলটসে নিজেকে ইয়র্কড করে ফিরলেন ২৯তম ওভারে। পুরো এলাকায় তখন হাহাকার, আহা একটা ডাবল সেঞ্চুরি দেখার সুযোগ হাতছাড়া হলো সবার।

অবশ্য ততক্ষণে বিসিবির রানরেট ছয় ছাড়িয়ে গেছে। মুশফিকের সঙ্গে ৮ ওভারের জুটিতে যে ৭১ রান যোগ করে গেছেন ইমরুল। ভুল পড়েননি, মুশফিকুর রহিম। সবাইকে অবাক করে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলতে নেমেছেন তিনি। ফর্মে ফেরার চেষ্টাটা ভালোই কাজে লাগিয়েছেন, ৫৭ বলে হাফসেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলে। ৪১তম ওভারের প্রথম বলে মুশফিক ফিরলেও উইকেটে ছিলেন নাসির হোসেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে জাতীয় দলের মূল দল একাদশে ফেরার ইচ্ছাটা জানাচ্ছিলেন নাসিরও।

কিন্তু ৪৫ বলে ৪৬ রান করে ৪৫তম ওভারে নাসিরও ফিরলেন, বিসিবি একাদশের সাড়ে তিন শ ছোঁয়ার স্বপ্নটাও শেষ হয়ে যায়। শেষ দিকে একের পর এক উইকেট হারিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ৩০০ পেরোয় বিসিবি একাদশ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই 

Wordbridge School
Link copied!