• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণ পাবে ব্রহ্মপুত্র-আড়িয়াল খাঁ


ফিচার ডেস্ক এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৩:৩৩ পিএম
প্রাণ পাবে ব্রহ্মপুত্র-আড়িয়াল খাঁ

 

ঢাকা: এককালের খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র এখন মৃতপ্রায়। এই নদের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জেগে ওঠা অসংখ্য চরে নদটি পরিণত হয়েছে ফসলি জমিতে। এ নদকে পুনরায় গতিশীল করতে ভৈরব-কটিয়াদি ৪০ কিমি নৌপথে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। চারটি ধাপে চারটি ভিন্ন ভিন্ন ঠিকাদারের সমন্বয়ে এগিয়ে চলছে এই খননকাজ। ফলে খননের অভাবে নাব্য হারিয়ে মৃতপ্রায় নদটি প্রাণ পেতে শুরু করেছে। আবারো নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এসব এলাকার অধিবাসী।

এই রুটে ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে আরেক নদ আড়িয়াল খাঁ। ব্রহ্মপুত্রের মতো আড়িয়াল খাঁ নদও মৃতপ্রায়। ফলে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এই রুটটি পুনরায় নৌচলাচলের উপযুক্ত করার উদ্যোগ এর তীরবর্তী মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনছে।

একসময় ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব হয়ে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার তীরবর্তী জনপদ ও হাটবাজারগুলোতে পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো। এতে পণ্য পরিবহন খরচ পড়ত অনেক কম। চর জেগে নৌচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার বিভিন্ন হাটবাজারের মালামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহন সমস্যা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্নিত হচ্ছিল। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে হাঁটুপানি। লোকজন সহজে নদটি হেঁটে পার হতে পারে। এতে নৌপরিবহন তো দূরের কথা, সাধারণ ডিঙ্গি নৌকাও চলাচল করতে পারছে না। শুকিয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বহু জমিতে এখন বোরো ধানের আবাদ হয়।

স্বল্পমূল্যে মালামাল পরিবহনে নদীপথের বিকল্প নেই। কিন্তু নদটি নাব্য হারিয়ে নৌযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যয়বহুল সড়কপথে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এক সময় এ জলপথে ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব পর্যন্ত বড় বড় নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করত। নদের ওপর জীবিকা নির্ভর ছিল তীরবর্তী লাখ লাখ মানুষের। নদটি খনন করা হলে যৌবন ফিরে পাওয়ার সঙ্গে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে এই এলাকার অধিবাসীদের। ব্রহ্মপুত্র নদ খননের কাজ শেষে নাব্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির প্রবাহ বাড়বে। ফলে বন্যার প্রবণতা কমে যাবে। তাছাড়া এ এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটবে।

জানা গেছে, সরকার ১৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩টি নৌপথ খননের কাজে হাত দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র অভ্যন্তরীণ নৌপথে ৫৩টি রুটে (প্রথম পর্যায়ে ২৪টি রুট) নদী খনন প্রকল্পের আওতায় ভৈরব-কটিয়াদি নৌপথে ৪০ কিলোমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭১ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত এই নৌরুটে প্রায় ২৮ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। খননকৃত অঞ্চল হচ্ছে- ভৈরব থেকে নতুন বাজার এবং পোড়াদিয়া থেকে মগা পর্যন্ত। এ রুটে ইতোমধ্যেই নৌচলাচল শুরু হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে এই ড্রেজিং সম্পন্ন করতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, নদীর জেগে যাওয়া চরাঞ্চলগুলোয় স্থানীয় মানুষরা চাষবাস শুরু করেছেন। কোথাও কোথাও নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। ফলে মূল নদী ভরাট হয়ে গেছে। এসব কারণে খননকাজে দেরি হচ্ছে।

নদী তীরবর্তী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা খননের পক্ষে। চণ্ডীবাজার ঘাটের বাসিন্দা রইজউদ্দিন বলেন, নদী খননে আমাদের উপকার হবে জানি। বন্যার তীব্রতা কমবে। আবার নৌপথে চলাচলসহ সারা বছর এদিকে নৌকায় পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে। সুতরাং কাজটি যত দ্রুত সম্পন্ন হবে আমাদের জন্য ততই মঙ্গলজনক।

একই কথা বলেন নরসিংদীর বেলাব অঞ্চলের মমতাজউদ্দিন। তিনি বলেন, নদী আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু চর পড়ে সেটা তীরবর্তী মানুষের জন্য উল্টো হুমকি হয়ে উঠেছে। সে কারণে এই ড্রেজিং অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। নদী নাব্য ফিরে পেলে বারো মাস সেচের জন্য পানি পাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথে চলাচল ও পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে।

মেঘনা নদীর মোহনা থেকে বেলাব হয়ে কটিয়াদি পর্যন্ত নৌপথটি ১২০ ফুট প্রশস্ত ও ৯ ফুট গভীরতায় খনন করা হচ্ছে। এতে সারা বছর ২ দশমিক ৭৫ মিটার গভীরতার নৌযান চলাচল করতে পারবে।

সোনালীনিউজ/এসআই

 

Wordbridge School
Link copied!