• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
চাপ ও অনলাইন প্রচারণার প্রভাব

প্রাণহীন নির্বাচনী ক্যাম্প


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮, ০৩:৫৪ এএম
প্রাণহীন নির্বাচনী ক্যাম্প

ঢাকা : দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘনিয়ে আসছে চূড়ান্ত প্রহর। রোববার (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আর নির্বাচনের প্রচারণার সময় শেষ হচ্ছে ২৮ ডিসেম্বর মাঝরাতেই। কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে প্রাণ আসেনি এখনো। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মহল্লায় মহল্লায় নির্বাচনী ক্যাম্প থাকলেও সেগুলোয় লোকসমাগম একদমই কম। দিনের বেলায় চেয়ার-টেবিলে বসার মতো নেতাকর্মীর দেখা মিলছে না।

অন্যদিকে চাপ, সমন্বয়হীনতাসহ নানা কারণেই অন্য দল বা জোটের প্রার্থীদের বেশিরভাগই নেই প্রচারণার মাঠে। সব মিলিয়ে আগের নির্বাচনগুলোতে ভোর থেকে গভীর রাত অবধি নির্বাচনী ক্যাম্পগুলো নেতাকর্মীদের জমজমাট আড্ডা, আপ্যায়ন, নির্বাচনী গান-বাজনা ও স্লোগানে মুখরিত থাকলেও এবারের নির্বাচনে ক্যাম্পগুলোর অধিকাংশই ফাঁকা থাকছে।

এ বিষয়ে দলভেদে স্থানীয় নেতাকর্মীরা দিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ ও যুক্তি। বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীনদের হুমকির কারণে তারা নামতে পারছেন না প্রচারণায়, বসতে পারছেন না ক্যাম্পগুলোতেও।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, প্রচারণার ধরন বদলের কারণেই এই নির্বাচনে ক্যাম্পভিত্তিক প্রচারণায় ভাটা পড়েছে। অনলাইনের কল্যাণে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে না গিয়ে বা তাদের ক্যাম্পে আমন্ত্রণ না জানিয়েই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে প্রার্থীদের বার্তা। তবে সাধারণ ভোটারদের কেউ কেউ বলছেন, কোন দল ‘ক্ষমতায় যাবে’ তা আঁচ করতে পেরেই সাধারণদের নির্বাচনী আগ্রহ তুলনামূলক কম।

এবারের নির্বাচনে ঢাকা মহানগরে ১৫টি আসনে (৪ থেকে ১৮ নম্বর আসন) মোট ১৩২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করছেন। গত কয়েকদিন ওইসব আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায়ই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থীদের পোস্টারের ছড়াছড়ি। রয়েছে অসংখ্য নির্বাচনী ক্যাম্পও। তবে সেসব ক্যাম্পের বেশিরভাগই সারা দিন থাকছে ফাঁকা। রাত ১০টার পরও সেখানে দেখা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি।

রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, মিরপুর-১১, লালবাগ, ধানমন্ডি ও টিকাটুলি এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে সেসব এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থী সাদেক খান, ইলিয়াস আলী মোল্লা, হাজী মো. সেলিম, ফজলে নূর তাপস ও কাজী ফিরোজ রশিদের পোস্টার ও ব্যানারের ছড়াছড়ি। পাড়া-মহল্লায় রয়েছে মহাজোট মনোনীত প্রার্থীদের এক বা একাধিক ক্যাম্পও। কিন্তু বিকাল পর্যন্ত সেসব ক্যাম্প থাকছে প্রায় ফাঁকা। আর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের কোনো ক্যাম্প এখনো চোখেই পড়েনি।

ঢাকা-১৩ আসনের নৌকার প্রার্থী সাদেক খানের প্রচারণার জন্য এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সোম ও মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, বেড়িবাঁধ ও বসিলা এলাকার বেশিরভাগ ক্যাম্পই ছিল নেতাকর্মী-শূন্য।

এ বিষয়ে বসিলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী পারভেজ জাহান জানান, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘোরা, সভা-সমাবেশ, মিছিল বা মাইকে প্রচারণা এই ছিল চিরাচরিত নির্বাচনী প্রচার কৌশল। কিন্তু এখন অনলাইনের কল্যাণে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে না গিয়েও তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে প্রার্থীদের বার্তা। তাই ক্যাম্পভিত্তিক প্রচারণা কিছুটা কম।

তবে ঢাকা-৭ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মোস্তফা মোহসীন মন্টুর সমর্থকরা বলছেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকির কারণে তার পক্ষে নেতাকর্মীরা মাঠে নামাতে পারছেন না। ক্যাম্প করতে পারেননি অনেক এলাকায়। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো হয়নি।

একই অভিযোগ ঢাকা-৬ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ও গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরীর সমর্থকদের। গোপীবাগ এলাকায় কথা হয় আসলাম নামের এক ধানের শীষ সমর্থকের সঙ্গে। তিনি বলেন, হুমকি, শঙ্কাসহ নানা চাপের কারণে তারা প্রচারণায় নামতে পারছেন না।

তবে প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে ক্যাম্পভিত্তিক প্রচারণায় যে কিছুটা প্রভাব পড়ছে বা প্রযুক্তিনির্ভর প্রচারণায় প্রার্থীরা যে সক্রিয় আছেন, তার নজির এই প্রতিবেদক একই দিনে একাধিক প্রার্থীর থেকে পেয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা-১২ আসনের মহাজোট প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের পক্ষে ভোট চেয়ে প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল আসে একটি রবি নম্বর থেকে। আসে হাজী সেলিমের পক্ষে নৌকায় ভোট চেয়ে ক্ষুদেবার্তা। ঢাকা ১০ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আবদুল মান্নানের পাঠানো একটি ক্ষুদেবার্তায়ও এই প্রতিবেদকের কাছে চাওয়া হয়েছে ভোট।

এ ছাড়া অনলাইন খুঁজে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব বড় দলেরই ফেসবুক পেজ আছে। এসব পেজে নির্বাচন উপলক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমও তুলে ধরা হয়েছে। খোলা হয়েছে ইউটিউব চ্যানেলও। এসব পেজ ও চ্যানেলে বিভিন্ন ভিডিওবার্তাও দেওয়া হচ্ছে ভোটারদের। কেন্দ্রীয়ভাবে এমন পেজের বাইরে প্রার্থী ও সমর্থকরা নিজস্ব ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ খুলে নির্বাচনী গণসংযোগ, মতবিনিময়, পথসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ছবিসহ তথ্য দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবীর নির্বাচনী প্রচারণায় ভিন্নতা আসার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, ১০ বছর আগে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ, এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। ব্যবহারকারী বাড়ায় নির্বাচনে অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!