• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থার ‘অপব্যবহারের’ অভিযোগ


কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি নভেম্বর ২২, ২০১৯, ০৫:০২ পিএম
প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থার ‘অপব্যবহারের’ অভিযোগ

কিশোরগঞ্জ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের স্থায়ী ঠিকানায় চাকরি পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে একই পদে স্বামী কিংবা বাবার স্থায়ী ঠিকানায় চাকরি পান নারীরা। শিক্ষকদের স্বামী বা স্ত্রীর কর্মস্থলে বদলির বিধান রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিকাঠামোতে। ‘জনস্বার্থে’ এর বাইরে আরো শতকরা ২০ভাগ বদলির সুযোগ আছে। তবে কিশোরগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষকদের এই বদলি ব্যবস্থার ‘অপব্যবহারের’ অভিযোগ উঠেছে।

অস্বাভাবিকহারে বদলির কারণে শূন্যপদ না থাকায় কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও ভৈরব- এ চার উপজেলার চাকরি প্রত্যাশী তরুণ-তরুণীরা এবার প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি পাচ্ছেন না। এমনকি আগামী কয়েক বছরেও চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিসের সূত্রগুলো।

জানা গেছে, এসব উপজেলায় কোনো শিক্ষকের পদ শূন্য হলে (বদলির মাধ্যমে) ‘ঝড়ের বেগে’ তা পূরণ হয়ে যায়। এই বদলির পেছনে লাখ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য রয়েছে বলে শোনা যায়। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শিক্ষক কেউ অভিযোগটি অস্বীকার করেন।

জেলার হাওর অধ্যুষিত উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের শিক্ষকরা ‘বানের জলের’ মতো বদলি হয়ে ঢুকে যাচ্ছেন উজানের উপজেলাগুলোতে। জানা গেছে, কেউ স্বামী বা স্ত্রীর কর্মস্থলে, কেউবা নদী ভাঙনে বাড়িঘর হারানো, কেউ আবার ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার কারণ দেখিয়ে বদলি হচ্ছেন।

এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, বদলির আবেদনে যেসব কাগজপত্র দেয়া হয়, সেসব কাগজপত্র অনেক সময় যাচাই করেও দেখা হয় না। বদলির জন্য সাংসদ, জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, বড় কর্মকর্তা এমনকি দেশের সর্বোচ্চ উর্ধ্বতন জায়গা থেকে সুপারিশ ও নির্দেশ আসে। ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকে না।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল, সেই নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় শূন্যপদ রয়েছে মোট ৫০৮টি। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করা ১৪০৩ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে করিমগঞ্জে ১৯ জন, কিশোরগঞ্জ সদরে ৭, তাড়াইলে ৬, ভৈরবে ৬, অষ্টগ্রামে ১৭৮, মিঠামইনে ১৪১, ইটনায় ১১৭, পাকুন্দিয়ায় ৫৮০, হোসেনপুরে ১০৭, বাজিতপুরে ৯৩, কটিয়াদী ৭৩, নিকলীতে ৩৯ ও কুলিয়ারচরে ৩৭ জন রয়েছেন। এ পরিসংখ্যানই বলে দেয়, শিক্ষক নিয়োগে প্রথম চারটি উপজেলা কতটুকু বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষায় কিশোরগঞ্জ সদরে সাতজন পরীক্ষা দিলেও নিয়োগ পাবে না একজনও। কোনো কারণে দু-একজন নিয়োগ পেলেও তাদের অন্য উপজেলায় দিতে হবে। সূত্রমতে, পদ শূন্য না থাকার পরও সদরসহ প্রথম চারটি উপজেলায় সীমিতসংখ্যক চাকরি প্রত্যাশিকে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করানো হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এনামুল হক খান বলেন, আমি তিন বছর হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে ছিলাম। সেখানে আমার হাত দিয়ে ৩৯ জন শিক্ষক সদর, ভৈরবসহ বিভিন্ন উপজেলায় বদলি হয়ে গেছেন। বর্তমানে ২০ভাগ বদলির বিধানে সদরে ৮৮ জন বহিরাগত শিক্ষক রয়েছেন। 

এদিকে আরেকটি সূত্র বলছে, এই ২০ ভাগসহ বৈবাহিক সূত্র মিলিয়ে সদরে অন্তত দেড় থেকে দুইশ বদলির শিক্ষক রয়েছেন। তাই এখানে কোনো শূন্যপদ নেই। সদর উপজেলার ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৯৭১ জন শিক্ষক কর্মরত।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান খান ও সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন শাহীন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বদলি নিয়মের অপব্যবহারের কারণে সদরসহ উজানের অন্তত চারটি উপজেলার চাকরি প্রত্যাশীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এটা রীতিমতো আগ্রাসন।

কয়েকজন নারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওরে নিজেদের বাড়িঘর থাকলেও সেখানে থেকে চাকরি করতে চান না। তাই বৈবাহিত সূত্র ও বদলির নিয়মের সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তারা।

করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামসুল হক ফরহাদ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির যে নিয়মটি চালু রয়েছে, এটি রদবদল না হলে কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও ভৈরবের মতো এলাকা গুলোর চাকরি প্রত্যাশিদের বঞ্চনার অবসান হবে না। বরং দিন দিন আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, যেসব উপজেলা থেকে শিক্ষকরা বদলি হয়ে চলে আসছেন, শূন্য পদগুলোতে আবার চাকরি পাচ্ছে সেখানকার লোকজনই। আর উজানের লোকজন তো ওইসব এলাকার জন্য আবেদনও করতে পারে না। কারণ শিক্ষক পদগুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।

করিমগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মফিজুল হক বদলির কারণে করিমগঞ্জের লোকজন চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন-এ কথা স্বীকার করে বলেন, নিয়ম থাকার কারণে এই বদলি থামানো যাচ্ছে না।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার জানান, যে বদলির কথা বলা হচ্ছে, এগুলো নিয়ম মেনেই করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ এখানে আমি নতুন এসেছি বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না। তবে বদলির কারণে কয়েকটি উপজেলা চাকরি বঞ্চিত হচ্ছে-এটাও গুরুতর সমস্যা। প্রকৃতপক্ষে এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। আমি সমস্যাটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!