• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল চেয়ে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২০, ২০২০, ০৯:৩২ পিএম
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল চেয়ে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি

ঢাকা: পঞ্চম শ্রেণির কোমলমতি শিশুদের জন্য নির্ধারিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল চেয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি দুটি সংস্থা 'গণসাক্ষরতা অভিযান' ও 'এডুকেশন ওয়াচ'।

গণসাক্ষরতা অভিযানের শতাধিক সহযোগী সংগঠন ও এডুকেশন ওয়াচের শতাধিক সদস্যের পক্ষে এ চিঠিতে সই করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

চিঠিতে 'প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড' গঠনের উদ্যোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, শিক্ষাবোর্ড গঠন করে সমাপনী পরীক্ষাকে স্থায়ীভাবে রুপ দেওয়ার চেষ্টা জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।'

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রথিতযশা সকল শিক্ষাবিদের মতে, পঞ্চম শ্রেণিতে প্রবর্তিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসি) উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বিভিন্ন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই পরীক্ষাটি মুখস্ত নির্ভরতা, গাইড-বই অনুসরণ, কোচিং বাণিজ্য ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের প্রসার ঘটিয়েছে। বিদ্যালয়ের পাঠদান এবং শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগ জ্ঞান অর্জন থেকে সরে পরীক্ষামুখী হয়ে গেছে।

প্রতিমন্ত্রীকে চিঠিতে জানানো হয়, গণসাক্ষরতা অভিযান সম্প্রতি ঢাকার বাইরে ৮টি এলাকায় অংশীজনদের সঙ্গে র্ভাচুয়াল পদ্ধতিতে ৮টি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল, যেখানে শিক্ষক, অভিভাবক, এসএমসি সদস্য এবং উপজেলা/জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের ওপর অহেতুক চাপ কমানো এবং কোচিং বানিজ্যের লাগাম টানার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বন্ধের জোরালো প্রস্তাব এসেছে।

এতে আরও বলা হয়, গত ২০১৮ সালে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান (যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি শিক্ষক ছিলেন) একটি আলোচনা সভায় বলেছিলেন 'প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।' তার এই বক্তব্যটি তখন ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। সম্প্রতি স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ তার একটি বক্তব্যে সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, 'পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বন্ধ হোক।' আরো অনেক বিশিষ্টজন ও নীতিনির্ধারক বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে মত প্রকাশ করেছেন যে-'পরীক্ষা নির্ভর, সনদসর্বস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।' কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা জানতে পেরেছি যে আপনার মন্ত্রণালয় একটি 'প্রাইমারি শিক্ষাবোর্ড' গঠন করে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাকে স্থায়ীরূপ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে, যা শিক্ষাবিদ এবং তথ্যাবিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর দিকনির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা মূল্যায়ন শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি প্রধান উপাদান। এক্ষেত্রে বহু দেশে প্রচলিত ব্যবস্থা হচ্ছে স্কুল শিক্ষার বিভিন পর্যায়ে প্রমিত মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন ও বিদ্যালয়ের কার্যকারিতা যাচাই করা। প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষা ও গণিতের দক্ষতা পরিমাপ করা হয়। মূল্যায়নের অন্যান্য দিক প্রতি বিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থায় যাচাই করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এই জন্য উপযুক্ত উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

চিঠিতে প্রতিমন্ত্রীকে বলা হয়, বর্তমান করোনাকালীন পরিস্থিতি এবং করোনা পরবর্তী পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা যেখানে সরকারের প্রাধিকারভূক্ত একটি বিষয় সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্থায়ী করা হবে একটি পশ্চাদমুখী ও নেতিবাচক পদক্ষেপ। প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী শিক্ষা অর্জন ও ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা করার কোন বিকল্প নেই। তাই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে আপনার মন্ত্রণালয় যথাযথ উদ্যোগ নিলে যে কোন ধরণের সহযোগিতা প্রদানে আমরা আগ্রহী।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!