• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকে কমিটির যোগ্যতা নির্ধারণ হলেও নেই মাধ্যমিকে


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৬, ২০১৯, ১০:০৫ এএম
প্রাথমিকে কমিটির যোগ্যতা নির্ধারণ হলেও নেই মাধ্যমিকে

ঢাকা : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠনে নতুন নীতিমালা করেছে। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি নীতিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েও তা সম্পন্ন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠনে নতুন নীতিমালা জারি করেছে।  এতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কমিটির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে।  নীতিমালায় বলা হয়েছে, কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক এবং সদস্যদের যোগ্যতা হবে এসএসসি উত্তীর্ণ।  তবে প্রাথমিক স্তরের নীতিমালা সংস্কার করে বাস্তবায়নের পথে হাঁটলেও পিছিয়ে আছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের দায়িত্বশীল দপ্তর। নানারকম দ্বিধা আর সমালোচনার আশঙ্কায় কমিটি গঠন নীতিমালা সংস্কার শেষ করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যারা সম্পৃক্ত তাদের দ্বারাই একটি প্রতিষ্ঠান সুন্দর, সুশৃঙ্খল হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষারও মানোন্নয়ন হওয়ার কথা। কিন্তু বিদ্যমান নীতিমালায় যেসব কমিটি হচ্ছে তাদের অধিকাংশই শিক্ষার উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের উন্নয়নে বেশি ব্যস্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার আড়ালে এসব কমিটি স্কুলে প্রভাব বিস্তার, স্বজনপ্রীতি, দলীয় প্রীতি, ভর্তিবাণিজ্য, নিয়োগবাণিজ্য, কেনাকাটায় অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ কাজেজড়িয়ে পড়েন।

সরকারের দায়িত্বশীলরাও মনে করছেন, নীতিমালায় কিছু দুর্বলতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে অশিক্ষিত ও শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন ব্যক্তিরা কমিটিতে স্থান করে নিচ্ছেন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয় বিদ্যমান কমিটি গঠন নীতিমালা সংস্কারের প্রতি।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকেই বিবিধ আলোচনা আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা-ব্যবস্থাপনা কমিটি সম্পর্কিত বিধি সংস্কারের।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠন সম্পর্কিত নীতিমালায় কিছু দুর্বলতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে অশিক্ষিত ও শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন ব্যক্তিরা কমিটিতে স্থান করে নিচ্ছেন।  ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়।’ তাই বিদ্যালয় পরিচালনা-ব্যবস্থাপনা কমিটি সংস্কারের বিষয়টি সভার আলোচ্যসূচিভুক্ত করে স্টেকহোল্ডারদের উপস্থিতিতে আলোচনার জন্য তিনি সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দিলে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত শিক্ষানুরাগীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।’

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে উপমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে আইন প্রণেতা হিসেবে সংসদ সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি; সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এটা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার। তবে পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যে অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে তা বন্ধ হওয়া উচিত। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি গঠন সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন। কমিটিতে বিদ্যোৎসাহীদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কিছু যোগ্যতা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রাথমিকস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠনে নীতিমালা সংস্কার একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। মাধ্যমিক স্তরে এটি করতে অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। এখানে এমপিওভুক্তি, নন-এমপিও আবার সরকারি বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। এর পরও বলব আলোচনা-সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে কমিটি সংস্কার আনা উচিত।  তবে যে কারণে কমিটিগুলো সমালোচিত, তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সৎ যোগ্য শিক্ষিত ব্যক্তিকে মনোনীত করতে হবে। একই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া ব্যক্তিদের তাদের অধিকারের কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত। নারীদের কমিটিতে ঠিকই রাখা হয় কিন্তু তারা কোনো ভূমিকা নিতে পারেন না। তাই নারীদের আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে সুযোগ দেওয়া দরকার।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!