• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিজাইডিং অফিসারকে বাঁচাতে পুলিশের গুলি


নরসিংদী প্রতিনিধি মার্চ ২৪, ২০১৯, ১১:০৩ পিএম
প্রিজাইডিং অফিসারকে বাঁচাতে পুলিশের গুলি

নরসিংদী: অনিয়ম, জালভোট প্রদান, ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন।

রোববার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পযর্ন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব ঘটনা ঘটে। জালভোট ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের সময় হামলার হাত থেকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে বাঁচাতে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ সময় নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে মাজাহারুল নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ও অনিয়ম ছাড়াই শেষ হয়েছে মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তবে চারটি উপজেলা নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্র ছাড়া প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল।

এদিকে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট প্রদানের সত্যতা পাওয়া শিবপুরের দুইটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জেলার চার উপজেলা শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরায় মোট ৪১২টি ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ৮৮০টি ভোট কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১৮ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ১১ প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে র‌্যাবের টিম ও পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

সরেজমিনে শিবপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রোববার সকাল সোয়া ১০টায় বহিরাগত লোকজন তেলিয়া ঝাওয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশ করে। তারা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। পরে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে থাকে। এ সময় উপস্থিত পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করেন। ফলে নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা অসহায় হয়ে যায়।

খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা কেন্দ্রে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় মাজহারুল নামে নৌকার এক সমর্থককে আটক করা হয়।

তেলিয়া ঝাওয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাইনউদ্দিন আব্বাস বলেন, দুর্বৃত্তদের সিল মারা ৭০-৮০টি ব্যালট বাতিল করা হয়েছে। কেন্দ্রের পরিবেশ স্বাভাবিক করে ভোটগ্রহণ শুরু করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান কাউসার বলেন, মাজহারুলকে কেন্দ্রে অনধিকার প্রবেশের কারণে আটক করা হয়েছে। আটককৃত মাজহারুল তেলিয়া গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। সে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক।

দুপুরে শিবপুরের আলিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে নৌকা প্রতীক ও টিয়া পাখির সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেয়া হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু করে।

দুপুর দেড়টায় শিবপুরের কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে ৮-১০ জন আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থকরা সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জাল ভোট প্রদান করে। এ সময় গনমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত হলে আওয়ামী লীগ নেতারা চলে যায়। পরে কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নূরে আলম জাল ভোট বাতিল করেন।

দুপুর আড়াইটার দিকে শিবপুর সৈয়দনগর আতাউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩০-৪০ জনের একটি দল লাঠিশোটা নিয়ে স্কুলের দেয়াল টপকে কেন্দ্রে প্রবেশ করে। পরে ভোট কক্ষে ঢুকে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। পরে একে একে জাল ভোট প্রদান করে।

এ সময় কর্তব্যরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জাল ভোট দিতে বাধা দেয়ায় তার ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পর পর কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

শিবপুর সৈয়দনগর আতাউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আহসানুল কবির বলেন, সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৪ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। এরই মধ্যে দুপুরে একদল লোক কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে জাল ভোট দেয়া শুরু করে। বাধা দিলে তারা আমার ওপর হামলা করতে আসে। তখন আমাকে বাঁচাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পর পর কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এসময় তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট প্রদানের সত্যতা পাওয়ায় শিবপুরের তেলিয়া ঝাওয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ও বংশিদিয়া কেন্দ্রের ভোট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট নেয়া হবে। তবে গুলিবর্ষণের কোনো খবর পাইনি।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!