• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয় নবী‍‍`র (স) প্রতি ভালবাসায় চোখটা ভিজে উঠলো!


সোনালীনিউজ ডেস্ক মে ১৪, ২০১৯, ০৪:০৪ পিএম
প্রিয় নবী‍‍`র (স) প্রতি ভালবাসায় চোখটা ভিজে উঠলো!

সদ্য জয়েন করেছি এখানে। আমার কাজ ব্রিটিশ পুলিশের সাথে। এখানকার ম্যানেজার লিন, আমার বস। কি পরিমাণে মুসলিম বিদ্বেষী সেটা টের পেলাম ২/১ দিনের মধ্যে। আমি আমার অফিসের ডাইনিংএ যোহরের নামাজ পড়ছিলাম সেটা দেখে রেগে অগ্নিশর্মা। আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিল এখানে এসব করা চলবে না। আমার নতুন জব তাই লিনের সাথে এসব নিয়ে ঝামেলায় না জড়িয়ে চুপচাপ তার কথা শুনে গেলাম। এর পর থেকে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে নামাজ পড়তাম।

সেদিনের পর থেকে লিনও কারনে অকারনে রেগে থাকতো। আমাকে দিয়ে বেশি বেশি কাজ করাতো, যেটা আমার কাজ না অথবা যে কাজ না করলেও চলে সে কাজটাও করাতো। আমি সব বুঝতাম কিন্তু মন খারাপ হলেও সবকাজ হাসিমুখেই করতাম। এর মধ্যে লুকিয়ে নামাজ পড়া অবস্তায় একদিন লিনের হাতে ধরাপরে গেলাম। লিন আমার নামে সরাসরি নালিশ করলো আমার নিয়োগকর্তা কোম্পানির কাছে। সেখান থেকে আমাকে বলা হল- ‘এই তুমি নাকি কাজ বাদ দিয়ে শুধু প্রে কর?’

বুঝলাম লিন আমাকে এখান থেকে তাড়াতে চায়। আমি ঠাণ্ডা মাথায় আমার নিয়োগকর্তা কে বললাম- ‘শোন আমার ১ ঘণ্টার লাঞ্চব্রেক থেকে নেই আধা ঘণ্টা, সেই সময়েই প্রে করি, আর বাকি আধা ঘণ্টা থেকে ১০মিনিট নেই এভিনিংএ প্রে করার জন্য, এটা করার জন্য আমি ২০মিনিট বেশি কাজ করি, সু্তরাং বুঝতেই পারছো আমি কাজ বাদ দিয়ে প্রে করিনা’। হালকা একটা থ্রেটও মারলাম- ‘শোন এটা কিন্তু ধর্মীয় ডিসক্রিমিনেশন আমি কাউন্সিলে রিপোর্ট করলে এটা নিয়ে তোমরা সবাই ঝামেলায় পরবে’। নিয়োগকর্তা আমার কথা বুঝতে পেরেছে। কারন সে লিনকে দীর্ঘদিন থেকে চেনে, জানে তার উগ্রমেজাজের কথা তাই আমাকে বলল - ‘তুমি ঠিক আছো, তবু চেষ্টা করো লুকিয়ে লুকিয়ে প্রে করতে’। আমি বললাম ‘ঠিক আছে’। এর পর থেকে আরও সাবধান হয়ে গেলাম। কখনো কখনো চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ পড়ে নিতাম। লিন যথারীতি আমার সাথে নিষ্ঠুর ব্যবহার করে যেতে থাকলো। আর আমিও যথারীতি তার বিপরীতে চরম ভাল ব্যবহার করে যেতে থাকলাম......

লিনের ছিল কফির নেশা। সেখানে সবাইকে নিজের কফি নিজে বানিয়ে খেতে হয়। আমি যতবার নিজের জন্য কফি বানাতাম ততবারই লিনের জন্য বানিয়ে আনতাম। মুখটা বাঁকা করে লিন সেই কফি পান করত। লিন আগে কখনো কফির সাথে হানি খায়নি, আমি ওকে সেটা ইন্ট্রডিউস করে দিলাম। আমার ডেক্সে কাজের জন্য আসলে আমি নিজে দাড়িয়ে লিনকে আমার চেয়ারে বসতে দিতাম, এই ব্যবহারের সাথে লিন কখনো পরিচিত ছিল না। একদিন সে এই বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করলে আমি তাকে বলেছিলাম ‘আমরা বয়োবৃদ্ধদেরকে এভাবে সম্মান করে থাকি’।

লিনের চেহারা দেখে মনে হল আমার কথা শুনে সে বেশ অবাক হয়েছে। লিন MI5 এর আন্ডারে কাজ করতো, ওরা লিন এর বেপারে আমার কাছে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতো, আমি সব সময় লিনের ভালোগুণ গুলোই বলতাম, ওর খারাপ গুলো চেপে যেতাম, এভাবেই চলে যাচ্ছিল দিন...... আমার প্রতি লিনের ব্যবহারও ধিরে ধিরে বদলে যাচ্ছিল। আমার এনুয়াল লিভ চলে আসলো। আমি দেশে যাবো । আর এটাও জানি আমি এখানে আর কোনদিন ফিরে আসবো না। আমি যতবার বৃক্ষ হতে চেয়েছি ততবারই আমি গড়িয়ে গেছি প্রবাহিত নদীর মত, সম্ভবত এটাই আমার নিয়তি।

ছুটির কয়েকদিন আগে লিন কে বললাম – ‘আমি অনেক সময় তোমাকে হার্ট করেছি, এসব মনে রেখ না, তুমি আমাকে মাফ করে দিও’। সেদিনই প্রথম আমি লিনের মধ্যে এক মমতাময়ীর চেহারা দেখেছিলাম। লিন অবাক হয়ে বলে 'এসব কি বলছ, মনে হচ্ছে তুমি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছ, মাত্রতো একমাস, ভালোয় ভালোয় ছুটি কাটিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এসো, আমি সত্যি তোমাকে মিস করবো, স্পেসালি তোমার কফি উইথ হানি'। ঠিক যাওয়ার আগের দিন লিন আমার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, ‘লাতিফ, তুমি কি প্রে করা ছেড়ে দিয়েছ নাকি’? আমি বললাম ‘নাতো’, সে বলল ‘কই দেখিনাতো’।

আমি বললাম ‘তুমি পছন্দ করনা বলে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ি’। লিন এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সস্নেহে বলল ‘ঠিক আছে আর লুকিয়ে পড়তে হবেনা প্রথম দিন ডাইনিংএ যে ভাবে পড়েছিলে এখন থেকে সেভাবেই পড়ো’। আমি কিছুক্ষণের জন্য বোবা হয়ে গেলাম। প্রিয় নবী সাল্লেলাহুয়ালাইহে ওযা সাল্লাম্মের প্রতি ভালবাসায় চোখটা ভিজে উঠলো। তাঁর ছোট্ট একটা শিক্ষা আমি লিনকে ডিল করার কৌশল হিসেবে নিয়েছিলাম.........
ঘৃণার বিপরীতে ভালোবাসা দিয়ে লিন কে জয় করে নিতে আমার মাত্র এক বছর সময় লেগেছিল।"

ছবিঃ বাম থেকে আমি, লিন, ক্যাথরিন, ব্যারি।
বিদায়ের কয়েকদিন আগের ছবি।"

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!