• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
সংকটে শিক্ষাক্ষেত্র

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৩০, ২০১৬, ০৫:৪৭ পিএম
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা সম্ভব হয়েছে? জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের পরও শুধু এ প্রশ্ন নয়, আরো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। পাঠকক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক ও আকর্ষণীয় করার জন্য চেষ্টা কম হয়নি। কিন্তু সবই বিফলে গেছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখন পর্যন্ত কোচিংনির্ভর। বন্ধ করা যায়নি নোট বই ও গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য। এমন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে গাইড বই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেক শিক্ষকই গাইড বই থেকে পাঠদান করেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হলেও অনেকেই আধুনিক এ পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি।

অন্যদিকে দেশের অনেক কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সরঞ্জামের অভাবও রয়েছে। এভাবেই চলছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। এ থেকে বেরিয়ে আসার সহজ কোনো পথ খোলা আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক এক জরিপের ফল বলছে, একজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে যে ব্যয় হয়, তার ৩০ শতাংশ চলে যায় কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট টিউশনিতে। ১৮ শতাংশ টাকা খরচ হয় বই, খাতা ও শিক্ষা-সরঞ্জামের পেছনে। অথচ কোচিং কিংবা প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করার লক্ষ্যেই সৃজনশীল পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছিল। কোচিং বাণিজ্য বন্ধে দেশের উচ্চতর আদালতের নির্দেশনাও ছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও জারি করা হয়েছিল সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা যায়নি। উপরন্তু অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং নিতে বাধ্য করা হয়। প্রাইভেট পড়তেও অনেক শিক্ষক পরোক্ষে চাপ সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাজধানীতে এমন অনেক জায়গা পাওয়া যাবে, যেখানে ঘর ভাড়া নিয়ে নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিয়মিত প্রাইভেট টিউশনি করেন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকদের একটি বড় অংশ কোনোমতে ক্লাসের সময় কাটিয়ে দেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁদের মনোযোগ কম। ব্যাচে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাপারেই তাঁরা যতœবান। কোচিং বাণিজ্য নিয়ে একটি অশুভচক্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। অন্যদিকে দেশের সরকারি কলেজ পর্যায়ের ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানের ২১২টিতেই রয়েছে শিক্ষক সংকট। অনেক কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের পদ নেই। আবার অনেক কলেজে পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নেই। এর পাশাপাশি রয়েছে শ্রেণিকক্ষের সংকট। আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সরঞ্জামের সংকট তো আছেই। আজ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষদের যে সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানে শিক্ষক সংকট নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিক্ষা জাতির মেরুদ-। কিন্তু সেই মেরুদ- শক্তিশালী করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি?
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনা মূল্যে বই প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। বছরের প্রথম দিন থেকে শুরু হচ্ছে শিক্ষাপঞ্জি। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষাও সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা কি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এখন জরুরি। কারণ দুর্বল মেরুদ- নিয়ে বেশি দিন দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। আমরা আশা করব, শিক্ষাক্ষেত্রের সব সংকট দূর করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কোচিং বাণিজ্য থেকে মুক্ত করা হবে। শিক্ষকরা ক্লাসে মনোযোগী হয়ে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। একই সঙ্গে শিক্ষক সংকট দূর করতে সরকারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!