• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্লাস্টিক থেকে জ্বালানি তৈল উৎপাদন


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১০, ২০১৮, ০১:৫১ পিএম
প্লাস্টিক থেকে জ্বালানি তৈল উৎপাদন

ঢাকা : কোনো কিছুই ফেলনা নয়, এ রকম একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। কথাটি উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর সত্যতা প্রমাণিত। আমরা সাধারণত আবর্জনাকে অপ্রয়োজনীয় বলেই গণ্য করে থাকি। তা যে কোনো ভালো কাজে আসতে পারে এবং সেই কাজের মাধ্যমে আমরা নানা দিক নিয়ে লাভবান হতে পারি, এটা ভাবনায় আশ্রয় দিতে চাইনে। অথচ উদ্ভাবক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন আবর্জনা ফেলনা বা অকেজো নয়। তা থেকে সার তৈরি হতে পারে, যা কেবল মানসম্পন্নই নয়, পরিবেশ সহায়কও। বর্তমান বাস্তবতায় জৈবসার রাসায়নিক সারের বিকল্প হতে পারে।

প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনের প্ল্যান্ট স্থাপন করে বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব করতে চান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী দম্পতি ড. মইন উদ্দিন সরকার ও ড. আনজুমান সেলী। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহায়তা চেয়েছেন তারা।

ড. মইন উদ্দিন সরকার বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক বর্জ্য চরম হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল, এলপিজি গ্যাস ও জেট ফুয়েল তৈরি করতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছেন। এর মাধ্যমে প্রতি টন প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য থেকে ১ হাজার ৩০০ লিটার জ্বালানি তেল, ১০ সিলিন্ডার এলপিজি গ্যাস ও ২৩ লিটার জেট ফুয়েল তৈরি হচ্ছে। ওয়াস্ট টেকনোলজিস এলএলসি কোম্পানি নামের এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বর্জ্য ব্যস্থাপনার কাজ চলছে।’ বর্জ্যকে পরিবেশবান্ধব করতে বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি সরকারের সার্বিক সহায়তা কামনা করেন।

ড. মইন উদ্দিন সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করতে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারাও এটিকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করে সার্বিক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মাধ্যমে এ আবিস্কারকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্ল্যান্ট স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে ড. মইন উদ্দিন সরকার।

ড. মইন উদ্দিন সরকার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে আমার নিজের দেশে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করে সেটিকে রোল মডেল হিসেবে দেখিয়ে এশিয়া মহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ প্ল্যান্ট স্থাপন করতে চাই।’

প্লাস্টিক পচনশীল না হওয়ায় এর বর্জ্য মানুষ ও সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৫০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যান্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ সম্ভব। এর বাইরে সবটাই বর্জ্য হিসেবে পড়ে থাকে। এতে করে প্রায় ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। এ সমস্যা সামাধনে চিন্তিত পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞানী মইন উদ্দিন সরকারের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এমএসসি পাস করার পর যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। পরে লন্ডনের ম্যানচেস্টার ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বিগত ২৮ বছর ধরে বিভিন্ন দেশে গবেষণার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে বিজ্ঞানী দম্পতি প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ২০১০ সালে প্লাস্টিক তেল উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবন ও পেটেন্ট করেন। বর্তমানে ওয়াস্ট টেকনোলজিস কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এই বিজ্ঞানী দম্পতি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!