• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফখরুল-খসরু-রিজভী নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নৈরাজ্য চালান


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১১, ২০১৯, ১০:১৩ পিএম
ফখরুল-খসরু-রিজভী নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নৈরাজ্য চালান

ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিনজন নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা শহরে ব্যাপক নৈরাজ্য চালান এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধ্বংসাত্মক কাজে সম্পৃক্তের জন্য উস্কানি দেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে একটি সিআর প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সেন্টু মিয়া।

মামলার অপর দুজন হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

মামলার প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকীর করা সিআর মামলাটি সার্বিক তদন্তে, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও দাখিল করা অডিও ভয়েস রেকর্ড এবং পত্রিকার কাটিং পার্যালোচনায় আসামিরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা শহরে ব্যাপক নৈরাজ্য চালায়। তারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধ্বংসাত্মক কাজে সম্পৃক্তের জন্য উস্কানি দেয়। যা পেনাল কোড ১৫৩/১০৯ ধারার অপরাধ, প্রাথমিকভাবে যা সত্য বলে প্রতিয়মান হয়। এ কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

দায়ীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন:  নৈরাজ্য চালানোর অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে এ আবেদন করেন মামলার বাদীর আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। আদালত বাদীর উপস্থিতিতে এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।

বিষয়টি নিয়ে আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, মির্জা ফখরুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছি। মামলার বাদী অসুস্থজনিত কারণে আদালতে উপস্থিত হতে না পারায় এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আদালতের পেশকার আশিক বলেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর আজ ছিল প্রথম ধার্য তারিখ। আইন অনুযায়ী প্রতিবেদন গ্রহণের জন্য আজ ধার্য তারিখ ছিল। আইনজীবী গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। তবে মামলার বাদী আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত।

অন্যদিকে, মামলার বাদী এ বি সিদ্দিকী বলেন, আজ শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে আদালতে উপস্থিত হতে পারি নাই। পরবর্তী ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত থাকব। আশা করি, সেদিন তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে।

আগে মামলা টিকান, তারপর গ্রেফতারি পরোয়ানা: আইন অনুযায়ী সিআর মামলায় বাদীকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়। তা না হলে মামলা খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু আজ মির্জা ফখরুলদের বিরুদ্ধে করা মামলায় শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে আদালতে উপস্থিত হননি বাদী এ বি সিদ্দিকী। বাদীর অনুপস্থিতিতে তার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। শুনানিও করেন তিনি।

এ সময় বিচারক আতিকুল ইসলাম বলেন, আপনি তো জানেন, সিআর মামলায় বাদীকে আদালতে উপস্থিত হতে হয়। বাদী তো আদালতে উপস্থিত হননি। আপনি তার পক্ষে কোনো আবেদনও দেননি। অথচ আপনি আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আগে আপনি বাদী না আসার কারণ জানিয়ে আবেদন করেন, তারপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদনের শুনানি করেন। আগে আপনি আপনার মামলা টিকান। তারপর গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করেন’- বলেন আদালত।

মামলার অভিযোগে যা আছে: ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬) এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজীব (১৭) নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন এবং ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করেন।

সে সময় শিক্ষার্থীরা বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে ছাত্র হত্যাকারী চালকের ফাঁসির দাবি, সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি না চলা, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা এবং হাফ ভাড়ার ব্যবস্থাসহ বেশকিছু দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে ঢাকা শহরে বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনকে রাজনীতিকরণসহ সারাদেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধানোর জন্য আসামি মির্জা ফখরুল, আমীর খসরু মাহমুদ ও রিজভী নির্দেশনা বা হুকুম দেন।

৪ আগস্ট (২০১৮) আসামি আমীর খসরু ঢাকা শহরসহ সারাদেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কুমিল্লার নওমী নামের এক কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদলের কর্মীদের নামানো এবং ফেসবুকে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা প্রদান করেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর একটি অডিও ক্লিপ সে সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যেখানে শোনা যায়, কুমিল্লায় অবস্থানরত নওমী নামে এক কর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। নওমীকে তিনি বলছেন, ঢাকা এসে লোকজন নিয়ে নেমে পড়তে।

অপরদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভীর হুকুমে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ছাত্রদলের লোকজন ঢুকে পড়ে। 

এছাড়া তাদের হুকুমে রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদলের কর্মীদের ঢুকিয়ে এনা পরিবহনের দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ, জিগাতলায় আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর এবং হামলা করে কর্মীদের আহত করা, মিরপুরে মারপিট, হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটায় ছাত্রদলের কর্মীরা।

ওইসব ঘটনায় ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম এইচ এম তোয়াহার আদালতে মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তেজগাঁও থানাকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আদেশ দেন। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সেন্টু মিয়া একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। 

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, সিআর মামলাটি সার্বিক তদন্তে, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও দাখিল করা অডিও ভয়েস রেকর্ড এবং পত্রিকার কাটিং পার্যালোচনায় আসামিরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা শহরে ব্যাপক নৈরাজ্য চালায়। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের নৈরাজ্য কাজে সম্পৃক্ত করতে উস্কানি দেয়। যা পেনাল কোড (ফৌজদারি মামলার দণ্ডবিধি) ১৫৩/১০৯ ধারায় প্রাথমিকভাবে অপরাধ সত্য বলে প্রতিয়মান হয়।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!