• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফখরুল-রিজভী লড়াই জমে উঠেছে, কৌশলে কে এগিয়ে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৫, ২০২০, ০৯:৫৭ পিএম
ফখরুল-রিজভী লড়াই জমে উঠেছে, কৌশলে কে এগিয়ে

ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মধ্যে দ্বৈরথ নতুন নয়। দুইজন ভিন্ন অবস্থানে।

মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীর অ'পেক্ষাকৃত নমনীয় মডারেট এবং সমঝোতাপন্থি রাজনীতিবিদ হিসেবে দলের মধ্যে পরিচিত। তিনি উগ্রবাদী নন এবং সমঝোতার রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে তিনি দলকে পুনর্গঠিত করতে চান।

অন্যদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আক্রমণাত্মক এবং তিনি সরকারের বিরুদ্ধে আপোসহীন, অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করতে চান। সরকারের সাথে কোনরকমের সমাঝোতা না করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে চান। আর এই বাস্তবতায় দুজনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। এই লড়াই প্রকাশ্য হয় যখন বেগম খালেদা জিয়া দূর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে গ্রে'প্তার হন।

এই সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী এখনই বড় ধরনের আন্দোলন নয়, বরং ধীরে ধীরে এবং ধাপে ধাপে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির পরিকল্পনা করেন।

এই সময়ে রুহুল কবির রিজভীর চিন্তা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তখনই রাস্তায় নেমে গণকারাবরণ করা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত টানা কর্মসূচীর পক্ষে ছিল। কিন্তু নানা বাস্তবতায় মির্জা ফখরুলের মতবাদই জয়ী হয়। যদিও এই সময় তৃণমূলের মধ্যে রুহুল কবির রিজভীর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এই সময়ে রুহুল কবির রিজভী স্বেচ্ছায় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন এবং সেখান থেকে তিনি বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নানারকম তথাকথিত চেষ্টা করতে থাকেন।

আর অন্যদিকে মির্জা ফখরুল আলমগীর সরকারের সঙ্গে একটি সমাঝোতার প্রক্রিয়ায় যান। এই সমাঝোতার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে। যদিও এই নির্বাচনের বিরোধী ছিলেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি নিজেই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। এই নির্বাচনের ফলাফলের পরেই মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীর এবং রুহুল কবির রিজভীর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য আকার ধারণ করে।

মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীর যেমন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করতে চান, তেমনিভাবে রুহুল কবির রিজভী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিরোধী। এই বাস্তবতায় এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে সেটা নিয়ে অনেকের মাঝেই সন্দেহ ছিল। কারণ মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীরের প্রতি দলের শীর্ষ দুই নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া দুইজনেরই আস্থা ছিল।

তারেক জিয়ার সম'র্থনের কারণেই ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর দলের মধ্যে খলনায়কে পরিণত হয়েও মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীরকে দলের মহাসচিবের পদটি হারাতে হয়নি। কিন্তু এখন করো'না সঙ্কটের সময় এই লড়াই অনেকটাই জমে উঠেছে এবং রুহুল কবির রিজভীর কাছে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীর- এমনটাই জানা যাচ্ছে বিএনপির একাধিক সূত্র থেকে।

রুহুল কবির রিজভী করো'নাকালে বেশ আলোচনায় এসেছেন। বিশেষ করে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন কোন কোন নেতারা। এই সময় তিনি একাধিক গ্যালারী শো করেছেন, কিছু কিছু ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করেছেন, যতটা না ত্রাণ বিতরণ করেছেন তাঁর থেকে বেশি তিনি সরকারের সমালোচনা করেছেন। মিডিয়ার দৌলতে তিনি আলোচনায় এসেছেন। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন বলেও মনে করছেন অনেকে।

আর এই সময়ে মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীরও সরকারের কিছু সমালোচনা করেছেন। অর্থাৎ রুহুল কবির রিজভীর যে আক্রমণাত্মক ধারা, সেই ধারাতেই পা বাড়িয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর এতে মনে করা হচ্ছে যে, রুহুল কবির রিজভীর কাছে কোণঠাসা হয়েই মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীর তাঁর সহ'জাত রাজনৈতিক চরিত্র বদলে আক্রমণাত্মক হয়েছেন।

তবে বিএনপির মধ্যে একাধিক নেতা বলেছেন যে, মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীরের ব্যাপারে এখন বেগম খালেদা জিয়ার ভিন্ন চিন্তাভাবনা রয়েছে। তাঁরা মনে করছেন যে, মির্জা ফখরুল ইস'লাম আলমগীরের প্রতি তারেক জিয়ারও যে অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল, তাতেও ভাটার টান পড়েছে। বিশেষ করে নেতাকর্মীদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি অস্বস্তি এবং অনাস্থা রয়েছে। এই বাস্তবতায় এখন সামনে চলে এসেছেন রুহুল কবির রিজভী।

আর খালেদা জিয়াও রিজভীর সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে খুশী বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। আর এই কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আর রুহুল কবির রিজভীর লড়াই জমে উঠেছে আর এই লড়াইয়ে কে জিতবেন তা বোঝা যাবে যদি বিএনপির মহাসচিব পদে কোন পরিবর্তন আসে তাহলে।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!