• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
রাজপথ এখনো পুলিশের নিয়ন্ত্রণে

ফাঁকা বুলিতেই বিরোধীদের আন্দোলন


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৩:৫৯ পিএম
ফাঁকা বুলিতেই বিরোধীদের আন্দোলন

ঢাকা : জনগণ একবার মাঠে নামলে সরকারদলীয়রা পালানোর পথ পাবে না, সরকারের বিদায় সময়ের ব্যাপার মাত্র, দুই বা তিন মাস থাকতে পারবে, সভা-সমাবেশ করতে আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছাড়পত্রের অপেক্ষা নয়, আওয়ামী লীগের নেতাদের বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে— এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আর মন্তব্য করে সরকারবিরোধী দলগুলোর নেতারা রাজনীতির শীতল মাঠ গরমের ‘ফেক’ কৌশল নিয়েছেন।

বাস্তবে সরকারকে কাবু করার মতো আন্দোলন বা সংগঠনকে শক্তিশালী করার মতো কোনো উদ্যোগ নেই বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলোর। ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদের ফাঁকা আওয়াজ ও ফানুস মার্কা হুংকারকে পাত্তাই দিচ্ছে না।  

অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের মাঠপর্যায়ের নেতাদের বিশ্লেষণ— শেষ সারির নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতেই ফাঁকা বুলি দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। চার দেওয়ালের ভেতরে নেতাদের বক্তব্য আর বাস্তব চালচলনের মধ্যে বিস্তর গরমিল খুঁজে পান নেতাকর্মীরা। মুখে বলেন নেত্রীর মুক্তির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে তারা প্রস্তুত; কিন্তু কর্মসূচির দিনক্ষণ কাটে এসি লাগানো চার দেওয়ালের ভেতরেই। সরকারবিরোধী নেতার বিরুদ্ধে সরব হুংকার মুখে থাকে, একই সঙ্গে যৌথমালিকানায় চলছে নানামুখী ব্যবসা-বাণিজ্য আয়-ব্যয়ের হিসাবনিকাশ।     

দীর্ঘদিন আগের সিদ্ধান্ত, ঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি সভা-সমাবেশের দিনক্ষণ বদল করেছে বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ মিত্ররা। বাহ্যিক চিত্র বলে, রাজপথ আগের মতোই নিয়ন্ত্রণে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে শনিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচির দিন পরিবর্তন করে রোববার (২৪ নভেম্বর) পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই পরিবর্তিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আবেগের রঙিন কাচে ঘেরা কুঠুরিতে বসে ‘দৈবক্রমে কিছু একটা ঘটবে, তাতেই সরকারের বিদায় হবে’— এমন স্বপ্নও দেখেন বিরোধী শিবিরের নেতাকর্মীরা।   

সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বর্জনের পাশাপাশি শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনসিহ ঐক্যফ্রন্ট। এরপরেই সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হবে ভাবা হলেও তা হয়নি।

বরং আগের অবস্থান থেকে সরে এসে এমপিরা সংসদে যোগ দিয়ে নির্বাচনকে পুরোপুরি বৈধতা দেন। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সংসদে যোগদানের কথা বলে নিজেই প্লটের আবেদন করেন কেউ। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। টানাপোড়েন চলে ২০ দলীয় জোটেও।

এরপর কয়েক দফা দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি ঘুচিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি।

একাধিকবার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত আর মাঠে দেখা যায়নি ঐক্যফ্রন্টকে। ঘটা করে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের তারিখ দিলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। নাম ঐক্যফ্রন্ট ও জোট হলেও কার্যত এই জোটে ঐক্য নেই বললেই চলে। সাংগঠনিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় নেতারা নিজেদের কার্যক্রম শুধু বাক্য কর্মসূচিতেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। শরিক দল জামায়াতে ইসলামী সীমাবদ্ধ আছে বিবৃতিতেই।

সম্প্রতি বিরোধী অর্ধডজন নেতার বক্তব্য ও বিবৃতি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সরকারের দাবি জানিয়ে ঐক্যফ্রন্ট একটি বিবৃতি দেয়।

ক্ষমতাসীন দলের শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে হঠাৎ জাতীয় সরকারের দাবি ওঠায় বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা ব্যাপক কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। ক্ষমতার পালাবদলের স্বপ্নও দেখতে শুরু করেন অনেকে।

কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন জাতীয় সরকারের এ ধারণা এবং প্রস্তাব এসেছে ঐকফ্রন্টের শরিক দল জেএসডির কাছ থেকে। এটা বাস্তবায়নের জন্য শক্তিশালী কোনো পরিকল্পনাও নেই। বিষয়টি জেনে হতাশ হন নেতাকর্মীরা।

এরই মধ্যে গত ৮ নভেম্বর নেতাকর্মীদের মনোবলে চাঙা থাকার পরামর্শ দিয়ে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একটি অনুষ্ঠানে বলেন, বর্তমান সরকারের পতন এখন ‘সময়ের ব্যাপার’।

আর ক’দিন আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, শিগগিরই জনগণ তাদের মালিকানা বুঝে নেবে। প্রয়োজনে রাস্তায় নামবে।

এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, সরকার বুঝতে পেরেছে তাদের আয়ুষ্কাল স্বল্প। তাই চুনোপুঁটি ধরে ভালো সাজার অপচেষ্টা করছে।

শীর্ষনেতাদের এমন বক্তব্যে নেতাকর্মীরা কিছুটা চাঙা হচ্ছেন ঠিকই। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আপাতত সরকার পতনের মতো আন্দোলন করার কোনো পরিকল্পনা বিএনপির নেই। আর আওয়ামী লীগ থেকে বড় কোনো নেতার বিএনপিতে যোগ দেওয়ার মতো কোনো খবরও নেই বিএনপির কাছে।   

শীর্ষনেতাদের রাজনৈতিক বক্তব্যে নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে চাঙা হবে বা ভেঙে পড়বে এমনটাই স্বাভাবিক। তবে সরকারের মেয়াদের সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে বক্তব্য দিলে তা আলোচনায় বেশি আসে। এজন্য কৌতূহলী হয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও।

সম্প্রতি ‘সরকার আর ২ থেকে ৩ মাস ক্ষমতায় থাকতে পারবে’ এই শিরোনামে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়।

এরপরই রাজনৈতিক মহলে বিশেষ করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোতে আলোচনা শুরু হয়— সত্যি কি কিছু হতে যাচ্ছে? আসলেই কি কোনো পরিকল্পনা আছে? এর আগে মান্নার ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা ফের আলোচনায় এসেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার এমন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।  

প্রকৃত বিষয় জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন করে টিকে আছে। এজন্য আন্দোলনও হচ্ছে। আর জনতার আন্দোলন বেগবান হলে দুই-তিন মাসের বেশি সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। একথা সেদিন পরিকষ্কারভাবেই বলেছি।

সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়ায় সবাই মনে করছে বিরোধী দলগুলোর কোনো পরিকল্পনা থাকতে পারে, আসলে সরকার পতন আন্দোলনের বিষয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, না এমন কোনো পরিকল্পনা বা উদ্যোগ তাদের নেই।

জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে ঐক্যফন্টের দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মান্না বলেন, এটি জেএসডির একটি প্রস্তাব ছিল। তবে এ নিয়ে এখন কোনো তৎপরতা নেই। সময় সময় ইস্যুভিত্তিক বিবৃতিতে সরকারের পতন ঘটানোর মতো চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বসে নেই বাম সংগঠনগুলোও।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন, জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সন্নিকটে, সরকারের বিদায় অনুষ্ঠানের দিনক্ষণও ধারেকাছে।

গণসংহতির আহ্বায়ক জুনায়েদ সাকি বলেছেন, সরকার ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এটা পতনের ডঙ্কা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!