• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফাঁকা শহরে প্রতিদিন তারা ছিনতাই-ডাকাতি করত


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৪, ২০২০, ০১:৩৮ পিএম
ফাঁকা শহরে প্রতিদিন তারা ছিনতাই-ডাকাতি করত

ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে ঘরে থাকছেন বেশিরভাগ মানুষ। ফলে নিরিবিলি হয়ে পড়েছে সড়ক। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিনতাই-ডাকাতি করে আসছিল প্রায় ১৫ জনের একটি দল। মুখে মাস্ক পরে দুটি ছোট ট্রাক নিয়ে তারা নেমে পড়ত রাস্তায়। জরুরি পণ্য বহনের নাম করে পথচারীদের টার্গেট করত। কয়েকজন মিলে ঘিরে ধরে কেড়ে নিত সর্বস্ব। ওষুধের দোকানেও ডাকাতি করেছে তারা। এভাবে গত এক মাসে প্রায় ১০০ ছিনতাই করেছে ওরা! সম্প্রতি একটি ফার্মেসির সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা বলেন, গ্রেপ্তাররা ডাকাতি-ছিনতাইয়ে জড়িত একটি বড় চক্রের সদস্য। তারা বাড্ডা, রামপুরা, কালশী, বেড়িবাঁধ, আদাবর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, তুরাগ, রূপগঞ্জ ও কাঁচপুর ব্রিজ এলাকায় নিয়মিত ডাকাতি-ছিনতাই করে আসছিল। তাদের কাজের ধরন একটু ভিন্ন। প্রতিদিন তারা একই এলাকায় যেত না। এমনকি প্রতিদিন ডাকাতি-ছিনতাইও করত না। সপ্তাহে তিন-চারদিন তারা একাধিক দলে ভাগ হয়ে বের হতো। আর বের হলে অন্তত তিনটি ছিনতাই না করে ফিরত না।

ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, ডিবি পশ্চিম বিভাগের উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেলের নির্দেশনায় তিনি (শাহাদত হোসেন সুমা) ও মোহাম্মদপুর জোনের এডিসি আনিছ উদ্দিন এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। গ্রেপ্তাররা হলো- দলনেতা সোহেল, সোহরাব, নেওয়াজ, শাহীন ও রাজু। রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ছোট ট্রাক, চাপাতি, দা, লোহার রড ও পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার তাদের এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পলাতক টিটুসহ অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতির আগে তারা মাসে ২০-৩০টি ছিনতাই করত। তবে এখন রাস্তাঘাটে লোকজন কম থাকার সুযোগে তারা তিন-চারগুণ বেশি ছিনতাই করছে। পলাতক টিটু ও গ্রেপ্তার সোহেল এ দলটির নেতৃত্ব দেয়। টিটু সাধারণত গাড়ি চালাত ও ছিনতাইয়ের টাকা জমা রাখত। পরে সবাই তা ভাগ করে নিত। এর মধ্যে টিটু ও সোহেল মোট টাকার ৪০ ভাগ করে নিত। দলের বাকি সদস্যদের মধ্যে ভাগ হতো অবশিষ্ট ২০ শতাংশ টাকা। তারা সবাই মাদকাসক্ত। ডাকাতি-ছিনতাই করে পাওয়া টাকার পুরোটাই যেত মাদকের পেছনে।

ডিবি সূত্র জানায়, টিটু, সোহেল ও সোহরাব ছোটবেলায় কারওয়ান বাজারে ট্রাক থেকে সবজি নামানোর কাজ করত। তখন থেকেই তারা ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আর মাদকের টাকা জোগাতে শুরু করে ডাকাতি-ছিনতাই। ফলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও যেতে হয়। কারাগারেই পরিচয় হয় দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১ এপ্রিল রাতে মোহাম্মদপুরের কলেজগেট এলাকায় বিল্লাহ ফার্মা ও ৫ এপ্রিল খিলগাঁওয়ের লাজ ফার্মায় একই কায়দায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তারা একটি পিকআপভ্যান নিয়ে মুখে মাস্ক ও গামছা পেঁচিয়ে যায়। চাপাতি, দা ও লোহার রডের ভয় দেখিয়ে টাকা, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ লুট করে। বিল্লাহ ফার্মেসিতে ডাকাতির দিনই তারা বেড়িবাঁধে একটি পাজেরো জিপ থামিয়ে ছিনতাই করে সাত হাজার টাকা পায়। সর্বশেষ ১০ এপ্রিল রাতে তারা রামপুরায় ১৫-২০ কার্টন চিংড়ি লুট করে। সেগুলোর দাম প্রায় দুই লাখ টাকা হলেও বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকায়। সে দিনই বাড্ডায় একটি রিকশা থামিয়ে ৮০০ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে।

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!