• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
একরাম হত্যার পাঁচ বছর

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ জনসহ ১৯ আসামির হদিস নেই


ফেনী প্রতিনিধি মে ২১, ২০১৯, ১২:০৫ পিএম
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ জনসহ ১৯ আসামির হদিস নেই

ফেনী : ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরামকে হত্যার পাঁচ বছর ছিল সোমবার (২০ মে)। ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে একরামকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামিসহ ১৯ আসামির কোনো হদিস বের করতে পারেনি পুলিশ।

অন্যদিকে দীর্ঘ ১৪ মাসে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিতদের আপিলের শুনানির কোনো উদ্যোগ না থাকায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন নিহতের স্বজনরা।

নিহতের ভাই মোজাম্মেল হক জানান, তার ভাই হত্যার বিচারে দোষীদের উপযুক্ত সাজা ঘোষণা করা হলেও ঘটনার হোতা পর্দার আড়ালেই রয়ে গেছে। তবে উচ্চ আদালত থেকে ফাঁসির আসামিরা যেন কোনোভাবে রেহাই না পায় সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। একইসঙ্গে রায় দ্রুত কার্যকর করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই জসিম উদ্দিনের করা হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনীর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনুল হক ৩৯ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেন। সেইসঙ্গে মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারসহ ১৬ জনকে বেকসুর খালাস দেন।

রায় ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্সের নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ডেথ রেফারেন্স নথির ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত হলেই হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল শুনানি হবে। তবে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে কোনো অগ্রগতি নেই।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ২২ জন রয়েছেন কারাগারে; আটজন জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক এবং নয়জন শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিরা হলেন- ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জিহাদ, সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারির মামাতো ভাই আবিদুল ইসলাম আবিদ, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জি. রাসেল, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান ওরফে ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলে উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মহিউদ্দিন আনিছ, বাবলু ও টিটু।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায়ে বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচন থেকে আসামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণেই একরামকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত জিহাদ ও আবিদ প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে আইনশৃঙ্খলার গোচরেই পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

তবে আসামিদের অবস্থানের বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আযাদ।

একরাম হত্যা মামলায় দণ্ডিতদের গ্রেফতারে পুলিশের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য হত্যা মামলার মতো এক্ষেত্রেও পলাতক ১৭ দণ্ডিত আসামির অনুসন্ধানে রয়েছে পুলিশ। তাদের হদিস পেলেই গ্রেফতার করা হবে। তবে শুনেছি বেশ কয়েকজন আসামি বিদেশে আছে।

এই দণ্ডিতদের মধ্যে কারাবন্দি ২২ জন হলেন- হত্যার পরিকল্পনাকারী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাত, আবু বক্কার সিদ্দিক ওরফে বক্কর, আজমির হোসেন রায়হান, শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মোহাম্মদ সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।

মামলা থেকে খালাস ১৬ জন হলেন- বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, একরামের একান্ত সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, আলমগীর ওরফে আলউদ্দিন, আবদুর রহমান রউফ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া, ইকবাল হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা ওরফে কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মোহাম্মদ মাসুদ, কাদের ও ফারুক। এর বাইরে রুটি সোহেল নামে এক আসামি র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।

কারাবন্দি দণ্ডিত আসামিদের আইনজীবী আহসান কবীর বেঙ্গল বলেন, নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার কয়েক দিন পর উচ্চ আদালতে আপিল করে কারাগারে থাকা ২২ জন আসামি।

জেলা কারাগারের জেলার দিদারুল আলম জানান, রায়ের পর আসামিদের ফেনী জেলা কারাগার থেকে ঢাকার কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ফেনী জেলা কারাগারে রয়েছে আসামি নুর উদ্দিন মিয়া, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ ও তোতা মানিক। দণ্ডপ্রাপ্ত এ তিন আসামি একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় আদালতে হাজিরা দিতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের ফেনী কারাগারে আনা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা জেলা কারাগারে রয়েছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির আদেল ও আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ শিবলু।

এদিকে একরাম স্মরণে তার গ্রামের বাড়িতে পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ মে) বাদ মাগরিব ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল ও শোকসভারও আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া একরামুল হক একরামের আত্মার শান্তি কামনায় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির উদ্যোগে মাস্টারপাড়ায় হাজারী বাড়ি জামে মসজিদ এতিমখানার শতাধিক এতিমের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!