• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরিয়ে দাও ডাংগুলি-কুতকুত!


হৃদয় আজিজ এপ্রিল ১৪, ২০১৭, ০৮:১৮ পিএম
ফিরিয়ে দাও ডাংগুলি-কুতকুত!

ঢাকা: বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলাধুলা প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে ঐতিহ্য লালনকারী লোকজ খেলাধুলা। তবে চিরন্তন বাঙলার খেলাগুলো সংরক্ষণ ও রক্ষণা-বেক্ষণে করে যাচ্ছে সরকারের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তবে ঐতিহ্য আর মাটির প্রতি টান না থাকায় এসব খেলা ফিরিয়ে আনা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।

ডাংগুলি

উপেক্ষা আর অবহেলার ওপর আধুনিকতার ‘আগ্রাসনে’ কালের গর্ভে হারিয়েই যেতে বসেছে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা অঁজপাড়াগাঁয়ের ডাংগুলি কিংবা কুতকুত খেলার আয়োজন। পহেলা বৈশাখে ঘটা করে এসব খেলা প্রদর্শন করা হয়, ঠিক চিড়িয়াখানার জন্তুর মতোই।

এক্কাদোক্কা

চিরচেনা গ্রামীণ লোকজ খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে কিশোরীদের বউ-পুতুল, কিশোরদের ডাংঙ্গুলি, কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, কানামাছি খেলা। শৈশবে এসব খেলাধুলায় দিন কাটিয়েছেন আজকের বয়ো-বৃদ্ধরা। তারাও ভুলতে বসেছেন সেইসব খেলার নামও।

গোল্লাছুট

ঘরে ঘরে বেড়ে গেছে ভিডিও গেমস্-এর দৌরাত্ম্য। বলা যায় আগ্রাসন। এ কারণে খোলা মাঠে গিয়ে যে খেলাগুলো আলো-হাওয়ার মাখামাখিতে করা যায় তার জনপ্রিয়তা কমছেই।

কাবাডি

তাই তো এখন গ্রামে গেলেও তেমন করে চোখে পড়ে না ডাংগুলি, গোল্লাছুট, গোশত তোলা, কুতকুত, হাড়িভাঙা, পাতা আনো, বৌছি, দড়ির লাফ, চেয়ার সিটিং, রুমাল চুরি, বালিশ খেলা, কানামাছি, ওপেন্টি বায়োস্কোপ, এলাটিং বেলাটিং, ইচিং বিচিং, হা-ডু-ডু, কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, নোনতা বলরে, কপাল টোকা, চোর ডাকাত, মার্বেল, সাতচাড়া, ষোলগুড্ডি, মোরগ লড়াই খেলাগুলো। নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো শুধুই কল্পনা।

কানামাছি

প্রবীণদের মতে, গ্রামের এসব খেলার মধ্যে বউ-পুতুল, হা-ডু-ডু, ডাংগুলি, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বৌছি ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। এসব খেলার সময় ঢল নামতো মানুষের। এক সময় ছেলে-মেয়েরা গ্রামীণ খেলাকে প্রধান খেলা হিসেবে জানতো। কিন্তু এসব খেলার জায়গায় চলে এসেছে কেরাম, ক্রিকেট, টিভি ও কম্পিউটার গেমস। 

কুতকুত

অভিজ্ঞরা বলছেন, প্রাচীন সেই ক্রীড়া সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে গ্রামীণ ক্রীড়া ফেডারেশন গঠন করা প্রয়োজন। এতে আগামী প্রজন্ম আমাদের ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা সম্পর্কে জানতে পারবে। ভুলে যাবে না শত বছরের নিজস্ব ক্রীড়া ঐতিহ্য।

লাঠিখেলা

অভিযোগ রয়েছে, খেলাধুলার অভাবে যুবসমাজ ঝুঁকছে মাদকের দিকে। গ্রামে মাঠের অভাব না থাকলেও খেলাধুলা আয়োজন করার মতো লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। শহরে মাঠের অভাবে ছোট্ট সোনা মনিরা খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। গ্রামের শিশুরাও খেলাধুলা বলতে এখন ফুটবল ক্রিকেটকে বুঝতে পারছে।

লাঠিম

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বর্তমানের তুমুল জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট সেই ষোলো শতকের দিকে বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। তখন বিলেতের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন ক্রিকেটকে বাঁচাতে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। এ ক্লাবটিই ক্রিকেটকে অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যেকোনো অখ্যাত খেলাও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। 

মোরগের লড়াই

মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে প্রজন্মকে রক্ষা করতে এমসিসির মতোই গ্রামীণ খেলাকে বাঁচাতে এদেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাছাড়া সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব এসব খেলার হারানো ঐতিহ্য। এমনটাই মনে করছেন প্রবীণ ব্যক্তিসহ সবাই।

মার্বেল

 

ওপেনটি

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!