• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুপাতো ভাইয়ের দেয়া আগুনে সেই কলেজছাত্রীর মৃত্যু


নরসিংদী প্রতিনিধি জুন ২৬, ২০১৯, ১২:৩২ পিএম
ফুপাতো ভাইয়ের দেয়া আগুনে সেই কলেজছাত্রীর মৃত্যু

নরসিংদী : নরসিংদীতে ফুপাতো ভাইয়ের দেওয়া আগুনে দ্বগ্ধ কলেজছাত্রী ফুলন বর্মণ ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছে।

বুধবার (২৬ জুন) ভোর ৬ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নরসিংদীর বীরপুরে কলেজছাত্রী ফুলন বর্মণ কেক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা ।

ফুলনের বাবা যুগেন্ধ বর্মন বলেন,আগুনে ফুলনের শরীরের ২১ শতাংশ পুড়ে যায়। মুখে কেরোসিন ঢালার কারণে ফুলনের  শ্বাসনালীতে সমস্যা ছিলো। যার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। । এজন্য গত বৃহস্পতিবার ফুলনের অপারেশন করা হয়। এর পর থেকে ফুলন ভালোই ছিলো। কিন্তু গতকাল থেকে তার বমি হচ্ছিলো ও শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিলো। চিকিৎসকেরা তাকে সুস্থ্য করার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু সকল চেষ্টা বিফলে ফেলে সে ভোরে মারা যায় ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার বলেন, সকালে ফুলনের বাবা যুগেন্দ্র বর্মণ  ফোন করে আমাদের মৃত্যুর খবর জানায়। আমরা নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবো।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নরসিংদীর বীরপুরে কলেজছাত্রী ফুলন বর্মণ কেক নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির আঙ্গিনায় পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা অজ্ঞাতনামা দু’জন দুর্বৃত্ত তার হাত-মুখ চেপে ধরে। পরে টেনে হিচড়ে পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তার বাবা যোগেন্দ্র বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দুই জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত ভার পড়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিবির উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফারের নেতৃত্বে অভিযানে নামে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সঞ্জিবসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করে।

পরে তথ্য পুক্তি ব্যবহার করে গত ২০ জুন রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাজু সূত্রধর নামে একজনকে শহরের শিক্ষা চত্বর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় পুলিশের কাছে আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার করেন রাজু। রাজুর দেওয়া তথ্য মতে ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষ ও আনন্দকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে গ্রেপ্তার হওয়া রাজু পরদিন ২১ জুন বিকেলে নরসিংদীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার পিংকীর আদালতে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর শনিবার বিকেলে কলেজছাত্রী ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষ বর্মণ নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা আক্তারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে রাজু ও ভবতোষ উল্লেখ করেন, ফুলনের ফুপাত ভাই ভবতোষের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজু সূত্রধর ও আনন্দ বর্মণ। ফুলনের বাবা যোগেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিবেশী সুখ লাল ও হিরা লালের সঙ্গে বাড়ির জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে এলাকায় সালিশ দরবার হয়েছে।

ঘটনার দুই দিন আগে ১১ জুন মঙ্গলবার ভবতোষ ও তার মামীর (ফুলনের মা) সঙ্গে ঝগড়া হয় প্রতিবেশী সুখ লালের। এ ঝগড়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ফুলনের মা বলেন, এখানে থাকবো না। দরকার হয় জমি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাবো। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ফুলনের শরীরে আগুন দিয়ে প্রতিবেশীকে মামলায় ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে কলেজছাত্রী ফুলনের ভাই ভবতোষ। ঘটনার দিন ভবতোষ তার বন্ধু রাজু সূত্রধর ও আনন্দ বর্মণকে নিয়ে বীরপুর রেললাইনে বসে পরিকল্পনা করে।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ফুলন কেক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাজু ফুলনের মুখ চেপে ধরে আর আনন্দ মাথায় ও শরীরে কেরোসিন ঢালে। আর ভবতোষ দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেওয়ার পর ভবতোষ, আনন্দ একদিক দিয়ে ও রাজু অন্যদিক দিক দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!