• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফুরফুরে মেজাজ ঐক্যফ্রন্টে


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৫, ২০১৮, ১১:০৬ পিএম
ফুরফুরে মেজাজ ঐক্যফ্রন্টে

ঢাকা : সমাবেশের অনুমতি পাওয়া না পাওয়া, গ্রেপ্তার আতঙ্ক ও নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেই সিলেটের বন্দরবাজার এলাকায় রেজিস্ট্রি মাঠে বুধবার (২৪ অক্টোবর) প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশ করেছে নবগঠিত বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই সমাবেশ-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

 সমাবেশ করতে গিয়ে সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক বাধা-বিপত্তি ছিল। আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককেই পথে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাস থামিয়ে দিয়েছে।’ ‘আমরা তো বাইরে থেকে ভাড়া করা লোক আনিনি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা আসতে চেয়েছেন তাদেরও বাধা দেওয়া হয়েছে। যাকে পেরেছে তাকে ধরেছে, গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। সিলেটে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে আমাদের হোটেলের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেছে। কী আর বলব- নির্বাচনের আর বাকি আছে দুই মাস, এরকম যদি চলতেই থাকে, তাহলে কিভাবে নির্বাচন করবো জানিনা,’ যোগ করেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতে, ‘এতো বাধা-বিপত্তির পরেও, এতো জন সমাগম হবে তা আমরা আশা করতে পারিনি। ভাবতেও পারিনি।’

গত বুধবার সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার জানান, সমাবেশের আগে এবং পরের ২৪ ঘণ্টায় সিলেট নগরী থেকে ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, ‘নাশকতা ও ভাঙচুরের পুরনো মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদেরকেই কেবল গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘পুরনো মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদেরই যদি গ্রেপ্তার করবে, তাহলে আগে করেনি কেনো? নির্বাচনের আগে কেনো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আর এগুলোর বেশিরভাগই তো গায়েবি মামলা। এসব মামলার তো কোনো অস্তিত্ত¡ নেই। এমন অভিযোগেও মামলা দেওয়া হয়েছে, যা ঘটেইনি। এটি অচিন্তনীয় ব্যাপার। আমার ষাট বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনও শুনিনি, ঘটনা ছাড়াই মামলা হতে পারে। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর এ ধরণের প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে।’

কারো বিরুদ্ধে মামলা থাকলে কি তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘অবশ্যই পারবে। কিন্তু কথা হলো- যে কারণে মামলা হয়েছে তা আসলে ঘটেছে কিনা। হাতিরঝিল মামলায় আমাকেসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রায় সবাইকেই আসামি করা হয়েছে।
আমরা আগাম জামিন নিয়েছি, কিন্তু এখন আমরা যদি আদালতে যাই, নিম্ন আদালত যদি আমাদের জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়, তখন কি হবে! জেলেই তো পাঠিয়ে দেবে, এর জন্যই এসব ভুয়া মামলা করা হয়েছে।’

‘আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মনিরুল হক চৌধুরীকে এভাবেই জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার চিন্তা-ভাবনা করেই আমাদের সাড়ে তিন লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এসব মামলা দিয়েছে। এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে করে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি। আসলে যা হচ্ছে তা কল্পনারও বাইরে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই সমাবেশের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা তো রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে চাই। তবে রাজনীতির নামে অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলে তা শক্তভাবে দমন করা হবে।

আর একটা বিষয় হচ্ছে, অতীতে যে সব অরাজনৈতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, মানুষ হত্যা করানো হয়েছে, তার মানে এই নয় যে, বর্তমানে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করছেন মানেই তাদের অতীতের কর্মকাণ্ড বিলোপ হয়ে গেছে। অতীতে যে সব কর্মকাণ্ড হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারাবাহিকভাবে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং নেবে।’

বিরোধী জোটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তারের অভিযোগ বিষয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এরা কিন্তু সকলেই এজহারভুক্ত আসামি। কারণ অতীতে এরা সমাবেশের নামে বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে নানান অপকর্ম করেছে। কাজেই এ বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে।’

এ ধরণের গ্রেপ্তার-আতঙ্ক নির্বাচন পর্যন্ত চলবে কি না? এ প্রসঙ্গে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে তো অপরাধীদের ধরতেই হবে।’

‘গায়েবি মামলা’-র বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গায়েবি মামলা গায়েবি আওয়াজের কারণে হচ্ছে। বিএনপির মঞ্চ থেকেই এই গায়েবি আওয়াজ দেওয়া হয়েছে। কারণ এতোদিন সন্ত্রাস কারা করেছে সে সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা ছিল। এখন তো শয়তান খুঁজতে গিয়ে তাদের অনেক কিছুই করতে হচ্ছে। যেহেতু গায়েবি আওয়াজ এসেছে, সেহেতু গায়েবি মামলাই হবে। সুনির্দিষ্ট আওয়াজ থাকলে, সুনির্দিষ্ট মামলা হতো।’

এভাবে মামলা, গ্রেপ্তার চলমান থাকলে আগামী নির্বাচনে সমানাধিকার থাকবে কি না?- এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘অপরাধীকে সঙ্গে নিয়ে তো আর কেউ সমান সুযোগ চাইতে পারে না। একজন মানুষকে অপরাধের দিকে ঠেলে দিয়ে, পরে নির্বাচনের যাওয়ার কথা বলে তার অপরাধকে বাদ দেওয়ার দাবি করলেই তো আর হলো না।’

এদিকে, সিলেট নগরী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানতে চাইলে, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘তাদের সবাইকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।’

তবে ঠিক কতজনকে গ্রেপ্তার এবং আদালতে উপস্থিত করা হয়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি। গ্রেপ্তার কার্যক্রম চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ওয়ারেন্ট আছে, ধারাবাহিকভাবেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এটাই চলমান প্রক্রিয়া।’

নির্বাচনের সময়েও এ ধরণের গ্রেপ্তার অভিযান চলবে কি না? এ ব্যাপারে গোলাম কিবরিয়ার মন্তব্য, ‘তা সময়ই বলে দেবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!