• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফুলচাষিদের টার্গেট ৭০ কোটি টাকা


যশোর প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯, ০১:১৬ পিএম
ফুলচাষিদের টার্গেট ৭০ কোটি টাকা

ঢাকা : আসছে পহেলা ফালগুন, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি। এই তিনটি দিবসের সঙ্গে ফুলের নিবিড় সম্পর্ক। সারা বছরের তুলনায় এ সময়ে অনেক বেশি ফুল বিক্রি হয়। জমজমাট হয়ে ওঠে ফুল বাণিজ্য। তাই প্রতি বছর এ সময় এলেই ফুলচাষিদের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়।

দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে দেশের ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ জোগান দেন যশোরের চাষিরা। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ফুল দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করেন তারা। এবার এই তিনটি দিবসকে কেন্দ্র করে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট করেছেন এখানকার চাষিরা। সেই লক্ষ্য পূরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, এবার যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরে প্রায় ছয় হাজার চাষি দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্লাডিওলাস। ৪০ শতাংশ চাষি এই ফুল চাষ করেন। এরপরই ২০ শতাংশ চাষ হয় রজনীগন্ধা। গোলাপ চাষ হয় ১৫ শতাংশ। এখানকার উৎপাদিত জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল দিয়ে সারা দেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছেন চাষিরা।

সামনে বড় বাজার ধরতে যশোরের চাষিরা এখন ফুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত। তারা জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরানো, সার-কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার করাসহ আনুষঙ্গিক পরিচর্যা করছেন।

পানিসারা মাঠপাড়া এলাকার ফুলচাষি তবিবর বলেন, আমরা বংশপরম্পরায় এই ফুল চাষ করে আসছি। আমার বাবা ফুল চাষ করতেন। এখন আমিও ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এবার চার বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছি। এর মধ্যে রজনীগন্ধা দুই বিঘা, গোলাপ ও জারবেরা এক বিঘা করে। সামনে ফুলের বড় বাজার রয়েছে, সেটা ধরতে আমরা অপেক্ষায় আছি।

তরুণ ফুলচাষি আশরাফুল ইসলাম চান্দু বলেন, চার বিঘায় গোলাপ, দুই বিঘায় জারবেরা এবং এক বিঘায় গ্লাডিওলাস ও রডস্টিক চাষ করেছি। আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে বাজারে ফুল দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করছি। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় চার টাকার মতো। সাত-আট টাকা বিক্রি করা গেলে ভালো মুনাফা হবে বলে আশা করছি।

নাভারন এলাকার ফুলচাষি নজরুল আলম জানান, তিনি ফুলের ব্যবসার পাশাপাশি চাষও করেন। তার চাষের মধ্যে জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রজনীগন্ধাসহ বেশ কয়েক ধরনের ফুল রয়েছে। তার জারবেরা ফুলে মাকল পোকা হানা দিয়েছে। সেই সঙ্গে আছে সাদা মাছির উৎপাত। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শমতো কীটনাশক দিয়ে পোকামাকড় বিস্তার রোধ করার চেষ্টা করছেন বলে জানান এই চাষি। গত দু-তিন মাস ব্যবসা কিছুটা খারাপ গেছে। সময়মতো সামনের দিবসগুলোতে বাজার ধরতে পারলে তিন-চার লাখ টাকার মতো ফুল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলাসহ এই জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুলের চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ায়ও। বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এই চাষ বা ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সামনের দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারা বছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসবকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষিরা ফুল চাষ করে থাকেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!