• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফের খুলনার নগর পিতা খালেক


খুলনা প্রতিনিধি মে ১৬, ২০১৮, ০১:০৯ এএম
ফের খুলনার নগর পিতা খালেক

খুলনা : দুই দলের প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বাগ্যুদ্ধে টান টান উত্তেজনার মধ্যেও বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়াই খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কেসিসিতে দলীয় প্রতীকে প্রথম এই নির্বাচনে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রায় দিয়েছেন ভোটাররা।  

দিনশেষে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে খুলনায় ফের নগর পিতা হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। মঙ্গলভার (১৫ মে) সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ২৮৬ কেন্দ্রের প্রাথমিক ফলাফলে খালেকের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১,৭৬,৯০২। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রাপ্ত ভোট ১,০৮,৯৫৬। কেসিসিতে গত মেয়াদের আগেরবার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তালুকদার আবদুল খালেক। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।  

মঙ্গলবার (১৫ মে) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মহানগরীর ২৮৯টি কেন্দ্রে একটানা কেসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলে। আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী জানিয়েছেন।

এই প্রথমবারের মতো খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এবার মেয়র পদে পাঁচজনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত তালুকদার আবদুল খালেক নৌকা প্রতীকে ও বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান (মুশফিক) লাঙল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক হাতপাখা ও সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান বাবু কাস্তে প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এ ছাড়া নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

ভোট দিয়ে খালেকের প্রতিক্রিয়া : আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক সকাল ৮টা ১০ মিনিটে পাইওনিয়ার গার্লস স্কুলে ভোট দেন। ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। খুলনার উন্নয়নে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে। বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

ভোট দিয়ে মঞ্জুর প্রতিক্রিয়া : অপরদিকে মা-বাবার কবর জিয়ারত শেষে সকাল পৌনে ৯টায় রহিমা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ৩০টি কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনেক জায়গায় এজেন্টদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন- অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফল মেনে নেব।  এদিকে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে কেসিসি নির্বাচনের তিনটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের শেষদিকে একটি কেন্দ্রে গোলযোগ ঠেকাতে পুলিশ ১৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। যদিও নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় গোটা মহানগরী। টহলে ছিল বিজিবিসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স। মাঠসহ প্রতিটি কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাচনী পর্যবেক্ষক টিম ছিল চোখে পড়ার মতো।

জেলা নির্বাচন অফিসার আনিস রহমান জানান, বেলা সাড়ে ১১টার পর ২০২ নম্বর ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের একটি বুথে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা প্রবেশ করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে সিল মেরে বাক্সে ফেলে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রটিতে মোট ভোট রয়েছে ২ হাজার ২১টি।  

এ ছাড়া ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় ভোটকেন্দ্র ও লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আমির হোসেন জানান, দুপুর ১২টার দিকে ৮-১০ জনের একদল দুষ্কৃতকারী কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে ঝুড়ি মার্কায় সিল মারে। এ ঘটনায় ভোটগ্রহণ তাৎক্ষণিক স্থগিত করা হয়। পরে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ পুরোপুরি স্থগিত করা হয়। ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ১ হাজার ৬৯১ এবং লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ২ হাজার ১৬টি। স্থগিত হওয়া তিন কেন্দ্রের মোট ভোট ৫ হাজার ৭২৮টি। এ ছাড়া ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ফাতিমা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথে ভোট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়ে পরে ভোটগ্রহণ করা হয়।

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মোল্যা ফরিদ আহমেদ ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী শামসুজ্জামান মিয়া স্বপনের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ ছাড়া সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে, ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে এবং হাজী আবদুল মালেক ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সামনের বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মহানগরীর জিলা স্কুল কেন্দ্রে আলী আকবরকে মারধর করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিকুর সমর্থকরা। পরে তাকে উদ্ধার করে খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে খালিশপুর উত্তর কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা সেখানে জাল ভোট দিচ্ছে। এ গুজব শুনে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা স্কুলের গেট ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ১৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সোনালী সেন জানান।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী জানিয়েছেন, বিএনপি যেসব অভিযোগ করেছে, সেগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ভোটারদের প্রতিক্রিয়া : নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের খানজাহান আলী রোড এলাকার বাসিন্দা মো. শাকিল আহমেদ সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজে ভোট দিতে আসেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ভোট দিয়েছেন। এরপরও তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।  ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জাহিদুল ইসলাম দুপুরে ভোট দিতে আসেন পিটিআই কেন্দ্রে।

তিনি বলেন, সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। তিনি ভোট দিতে পেরে খুবই আনন্দিত হয়েছেন। রিকশাচালক মো. জসিম মোড়ল আসেন একই কেন্দ্রে ভোট দিতে। তিনি ভোট দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন।  

নগরীর মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা রোকেয় খাতুন। এই প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে খুবই খুশি। গৃহবধূ শামসুন্নাহার ভোট দেন রূপসা স্কুল কেন্দ্রে। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে।

জাপা মেয়র প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া : জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান (মুশফিক) ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর বলেন, নির্বাচন ভালো হয়েছে। কিন্তু অনেক ভোটার ভোট দিতে আসতে পারেননি। এ জন্য তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  

নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি দাবি সিপিবি প্রার্থীর : সিপিবি-বাসদ জোট মনোনীত মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাগমারা, রূপসা, বানিয়াখামার, খালিশপুর, বয়রাসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের কাস্তে মার্কার ভোটার-এজেন্টদের দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। জোর করে ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপারে সিল মারার খবর প্রচার মাধ্যমেই এসেছে। দুপুর থেকে এই ধারা বৃদ্ধি পেয়ে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশ কেন্দ্র সরকারি দলের নামধারীরা দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। এসব ঘটনার মাধ্যমে ভোটকে আবারো প্রহসনে পরিণত করা হলো।  

এদিকে বেসরকারি ফলাফলে নির্বাচিত খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক গতকাল রাত ৯টায় আলাপকালে জানান, তিনি আজ বুধবার বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এরপর  বেলা ৩টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে খালেক বলেন, নগরীর জনগণের স্বার্থে যা যা করা দরকার, আমি সব উদ্যোগ নেব। এ ছাড়া আমার আগের মেয়াদে রেখে আসা ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে; কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!